জামায়াতের বিবৃতি

এখনও নির্বাচনের উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারেনি সরকার

জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার বার্ষিক অধিবেশন
জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার বার্ষিক অধিবেশন  © সংগৃহীত

অর্ন্তবর্তী সরকার এখনো নির্বাচনের উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারেনি বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। আজ শনিবার (২৯ নভেম্বর) জামায়াতের প্রচার বিভাগের সিনিয়র প্রচার সহকারী মুজিবুল আলম স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

রাজধানীর মগবাজারে আল-ফালাহ মিলনায়তনে জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার বার্ষিক অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন জামায়াত আমীর ডা. শফিকুর রহমান।

কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার বার্ষিক অধিবেশনের বৈঠকে দেশে বিরাজমান সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে বেশকিছু প্রস্তাব গৃহীত হয় বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার এ অধিবেশন গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছে যে, সরকার আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে একই দিন গণভোট ও জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত করার কথা ঘোষণা করলেও অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠিত করার মত আশানুরূপ পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারেনি। 

দেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য বর্তমান সরকারের দায়িত্ব নির্বাচনের উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করা। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীসহ ৮ দলের পক্ষ থেকে নির্বাচনের পূর্বে গণভোট, পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন, কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী সরকারের সময় গণহত্যা, দুর্নীতিসহ জুলুম-নির্যাতনের বিচার, জাতীয় পার্টিসহ ১৪ দলের কার্যক্রম স্থগিত করে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য নির্বাচনী মাঠ সমতল করার দাবি জানিয়েছিল। কিন্তু সরকার ৮ দলের সে দাবি পাশ কাটিয়ে গণভোট ও জাতীয় সংসদ নির্বাচন একই দিনে অনুষ্ঠিত করার ঘোষণা দিয়ে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। 

জুলাই ঘোষণার ভিত্তি হলো গণভোট। গণভোটে জুলাই সনদ পাশ হলেই তার আইনি ভিত্তি রচিত হবে এবং সেই জুলাই সনদের ভিত্তিতেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে। একই দিনে গণভোট ও জাতীয় সংসদ নির্বাচন হলে গণভোটের ফলাফল কী আগে ঘোষণা করা হবে? নাকি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফলাফল আগে ঘোষণা করা হবে? যদি গণভোটের ফলাফল আগে ঘোষণা করা হয় এবং তাতে যদি ‘না’ ভোট জয়ী হয় তাহলে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কি হবে? একটি বড় দলের কেউ কেউ ‘না’ ভোটের পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছেন। 

অন্যদিকে পরাজিত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ, জাপাসহ ১৪ দল, সিপিবিসহ কিছু কিছু বাম দল ইতোমধ্যেই ‘না’ ভোটের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা গণভোটে সংস্কারের পক্ষে ‘হ্যাঁ’ ভোটকে বিজয়ী করার জন্য দেশবাসীর প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছে।

জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার এ সম্মেলন মনে করে দেশের নির্বাচন ব্যবস্থাকে সন্ত্রাস, দুর্নীতি ও কালো টাকার প্রভাব মুক্ত করে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে টেকসই করে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়ার জন্য পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই। জামায়াতে ইসলামী পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের দাবিতে এখনো অটল আছে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে গণভোট ও পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং আওয়ামী লীগ, জাপাসহ ১৪ দলের রাজনীতি স্থগিত করার দাবি মেনে নেয়ার জন্য জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সরকারের নিকট জোর দাবি জানাচ্ছে। 

জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার এ অধিবেশন উদ্বেগের সাথে আরও লক্ষ্য করছে যে, ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগের নেতাদের বিচার চলাকালে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক তৎপরতা স্থগিত করা হলেও তারা তাদের শরিক দল জাপাসহ ১৪ দলের অপতৎপরতা থেমে নেই। তারা নানাভাবে গোপনে ও প্রকাশ্যে তাদের ফ্যাসিবাদী কর্মকাণ্ডের তৎপরতা অব্যাহত রেখে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটিয়ে নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। এমনকি জাতীয় পার্টির নেতারা বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে টকশোতে অংশগ্রহণ করে বিভ্রান্তিকর বক্তব্য দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করছে। আওয়ামী লীগ জাপাসহ ১৪ দলের সন্ত্রাসীরা একটি বড় দলের আশ্রয়-প্রশ্রয় থেকে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাচ্ছে। দেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের অনুকূল পরিবেশ এখনো সরকার সৃষ্টি করতে পারেনি। রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে রাজনৈতিক হত্যা, খুন-খারাবি অব্যাহত আছে। 

গত ২৭ নভেম্বর পাবনা জেলার ঈশ্বরদীতে জামায়াতের মিছিলে বিএনপির সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আগ্নেয়াস্ত্রসহ বিভিন্ন অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে হামলা চালিয়ে জামায়াতে ইসলামীর ৬০/৭০ জন নেতাকর্মীকে আহত করেছে। অনেকের অবস্থাই মারাত্মক। ঐ ঘটনায় একটি পত্রিকার স্থানীয় প্রতিনিধি সাঈদ হাসানও হামলাকারীদের হাত থেকে রেহাই পায়নি। ঈশ্বরদী থানার ওসির বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ রয়েছে। 

এ ছাড়াও সাম্প্রতিক সময় চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ, নোয়াখালী সদর, জামালপুরের মেলান্দহ, ফেনী সদর, নওগাঁ সদর, লক্ষ্মীপুর সদর, নারায়গঞ্জের আড়াই হাজার, মৌলভীবাজারের বড়লেখা, গাইবান্ধা, জয়পুরহাট, ঝিনাইদহের মহেশপুরসহ বিভিন্ন স্থানে জামায়াত নেতাকর্মীদের ওপর বিএনপির সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়েছে। এমনকি তারা জামায়াতের মহিলা কর্মীদেরকে দাওয়াতি কাজেও বাধা দিচ্ছে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কিভাবে আশা করা যায়? এ থেকেই প্রমাণিত হয় যে, সরকার এখনও নির্বাচনের উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারেনি।

জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা বিস্ময়ের সাথে লক্ষ্য করছে যে, পাবনার ঈশ্বরদীতে জেলা জামায়াতের আমীরসহ লোকদের ওপর বিএনপির সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে হামলা করেছে। অথচ দুএকটি পত্রিকায় আজ ২৯ নভেম্বর প্রকাশিত রিপোর্টে লেখা হয়েছে যে, ‘পাবনার ঈশ্বরদীতে পিস্তল হাতে ভাইরাল যুবক জামায়াত কর্মী’। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা এ ধরনের ভিত্তিহীন ও মিথ্যা তথ্য সন্ত্রাসের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে এবং বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামের বিরুদ্ধে এ ধরনের তথ্য সন্ত্রাস চালানো থেকে বিরত থাকার জন্য সংশ্লিষ্ট পত্রিকা কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে।

জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা অভিমত ব্যক্ত করছে যে, নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টি করার জন্য অবিলম্বে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের তালিকা তৈরি করে তাদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনতে হবে এবং সকল অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করতে হবে। 

আমরা সম্প্রতি লক্ষ্য করছি যে, মানিকগঞ্জের আবুল সরকার নামক একজন বাউল আল্লাহ এবং রাসূল (সা.) সম্পর্কে গর্হিত অন্যায় ও অশ্লীল মন্তব্য করে এ দেশের মুসলিম জনগণের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়েছে। তার পরিপ্রেক্ষিতে জনগণের আন্দোলনের মুখে সরকার তাকে গ্রেফতার করতে বাধ্য হয়েছে। বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, বাউল আবুল সরকার পলাতক আওয়ামী লীগের দোসর। তাকে অবশ্যই উপযুক্ত শাস্তি দিতে হবে। তার পক্ষ নিয়ে কিছু লোক দেশে পরিকল্পিতভাবে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অপচেষ্টা চালাচ্ছে। তাদের এ ধরনের অপতৎপরতা বন্ধ করার জন্য জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সরকারের নিকট জোর দাবি জানাচ্ছে। জনগণের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।  

তাই বাংলাদেশ জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার এ অধিবেশন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীসহ ৮ দলের ৫ দফা গণদাবি মেনে নিয়ে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করার জন্য দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে সরকারের নিকট জোর দাবি জানাচ্ছে।”


সর্বশেষ সংবাদ