নতুন পে স্কেলে আলোচিত ৮:১, ১:১০ এবং ১:১২ অনুপাত আসলে কী
- তৌহিদুর রহমান তুহি
- প্রকাশ: ০২ অক্টোবর ২০২৫, ০৬:২৯ PM , আপডেট: ০২ অক্টোবর ২০২৫, ০৬:৫২ PM
সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নতুন বেতন কাঠামোর জন্য গঠিত হয়েছে কমিশন। কাঠামো গঠনে ন্যায়সঙ্গত ও টেকসই সুপারিশ তৈরির লক্ষ্যে সবার মতামত নিচ্ছে জাতীয় বেতন কমিশন। বুধবার (১ অক্টোবর) থেকে কমিশনের ওয়েবসাইটে (paycommission2025.gov.bd) প্রবেশ করে এই মতামত দেওয়া যাচ্ছে। চারটি পৃথক ক্যাটাগরিতে মোট ৩২টি প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে সংশ্লিষ্টদের।
এসব প্রশ্নের মধ্যে জাতীয় বেতন কমিশনে মতামতের ১১ নন্বর প্রশ্ন 'প্রস্তাবিত পে স্কেলে সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ মূল বেতনের অনুপাত কী হওয়া উচিত?' নিয়ে বেশ আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। প্রশ্নের উত্তরের জন্য '১:৮, ১:১০, ১:১২ ও অন্যান্য' অপশন রাখা হয়েছে। এই অনুপাতের সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ স্কেলের মূল বেতন বুঝানো হচ্ছে। অর্থাৎ সর্বনিম্ন ২০তম গ্রেডের একজন সরকারি কর্মজীবীর বেতন যদি এক টাকা হয়, তবে সর্বোচ্চ গ্রেডের বেতন হবে ৮, ১০ বা ১২টাকা। আরও পরিষ্কারভাবে বললে, ১০০টাকা বেতন ধরে ১:৮ অনুপাতে সর্বনিম্ন (২০তম) গ্রেডের বেতন ১০০ হলে সর্বোচ্চ হবে ৮০০ টাকা। একইভাবে ১:১০ অনুপাতে নির্ধারণ হলে ১০০০ টাকা এবং ১:১২ অনুপাতে সর্বোচ্চ বেতন হবে ১২০০ টাকা।
দীর্ঘদিন যাবৎ সরকারি কর্মজীবীদের মধ্যে যারা নিচের গ্রেডে চাকরি করেন, তারা বেতন অনুপাত কমানোর দাবি জানিয়ে আসছিলেন। নতুন কাঠামোর বিষয়ে তারা বলছেন, ‘সর্বনিম্ন স্কেল ১৬ হাজার ধরলে ১:৮ অনুপাতে সর্বোচ্চ হবে ১ লাখ ২৮ হাজার, ১:১০ অনুপাতে ১ লাখ ৬০ হাজার এবং ১:১২ হলে ১ লাখ ৯২ হাজার টাকা হবে। আর যদি 'অন্যান্য অপশন' পছন্দ করেন তাহলে কেউ ১:৪, আবার কেউ দিবে ১:১৫ পছন্দ করবে, ফলে গড়ে ১:৮ বা ১:১০ হবে। এক্ষেত্রে সর্বনিম্ন গ্রেডের ১৬ হাজার বেসিকসহ মোট ২৫ হাজার টাকা এবং সর্বোচ্চ গ্রেডের দেড় লাখ বেসিকসহ যা বেতন পাবেন, তাতে বৈষম্যই থেকে যাবে।’
সর্বনিম্ন ২০তম গ্রেডের একজন সরকারি কর্মজীবীর বেতন যদি এক টাকা হয়, তবে সর্বোচ্চ গ্রেডের বেতন হবে ৮, ১০ বা ১২টাকা। আরও পরিষ্কারভাবে বললে, ১০০টাকা বেতন ধরে ১:৮ অনুপাতে সর্বনিম্ন (২০তম) গ্রেডের বেতন ১০০ হলে সর্বোচ্চ হবে ৮০০ টাকা। একইভাবে ১:১০ অনুপাতে নির্ধারণ হলে ১০০০ টাকা এবং ১:১২ অনুপাতে সর্বোচ্চ বেতন হবে ১২০০ টাকা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ২০ তম গ্রেডের এক কর্মচারী বলেন, 'বাজারের অবস্থা কিন্তু একই, উচ্চগ্রেডের কর্মকর্তাদের ব্যয় যেমন বেড়েছে আমাদেরও বেড়েছে। এক্ষেত্রে ১:৮ অনুপাতে বেতন বৃদ্ধি করলেও টাকার পার্থক্য অনেক হবে। সেক্ষেত্রে আমাদের অর্থনৈতিক সংকট কমবে না, বরং বাড়বে। কারণ নতুন পে স্কেল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই এই অজুহাতে সবকিছুর দাম বাড়বে।'
প্রসঙ্গত, বর্তমানে সর্বোচ্চ পদ (গ্রেড-১) ও সর্বনিম্ন পদ (গ্রেড-২০)-এর বেতনের অনুপাত প্রায় ১০:১ (অর্থাৎ ১ম গ্রেডের একজন কর্মকর্তার বেতন ১০টাকা হলে ২০তম গ্রেডের বেতন হবে ১টাকা)। নতুন কাঠামোতেও এ অনুপাত ৮:১ থেকে ১০:১-এর মধ্যে থাকবে বলে ধারনা করা হচ্ছে। প্রতিবেশী ভারতসহ অন্যান্য দেশে এ ধরনের অনুপাত বিদ্যমান রয়েছে বলে কমিশন পর্যালোচনায় পেয়েছে। ফলে বিদ্যমান ২০টি গ্রেড থেকে গ্রেডের সংখ্যা যদি কমানোও হয়, তারপরেও সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন বেতনের ক্ষেত্রে একই অনুপাত বহাল রাখার সুপারিশ করবে কমিশন।
এদিকে ৯ম জাতীয় বেতন স্কেল গেজেটের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করে যেতে চায় অন্তর্বর্তী সরকার। এজন্য তারা পরবর্তী রাজনৈতিক সরকারের জন্য অপেক্ষা করবে না বলে স্পষ্ট জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। সম্প্রতি তিনি বলেন, নতুন পে স্কেল ২০২৬ সালের শুরু (জানুয়ারি/মার্চ/এপ্রিল) থেকেই কার্যকর হতে পারে। এর জন্য চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটেই প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ রাখা হবে।
এর আগে সরকারি কর্মচারীদের জন্য নতুন বেতন কাঠামো নির্ধারণ করতে ২৭ জুলাই ২০২৫ তারিখে সাবেক অর্থ সচিব জাকির আহমেদ খান-কে সভাপতি করে ‘জাতীয় বেতন কমিশন, ২০২৫’ গঠন করা হয়েছে। কমিশনকে সাধারণত ৬ মাসের মধ্যে সুপারিশ জমা দেয়ার কথা বলা হয়েছে।