বিদেশ ভ্রমণে বাদ সিনিয়ররা, এগিয়ে জুনিয়ররা, মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটিতে সমালোচনা

মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি
মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি  © ফাইল ছবি

মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি (এমআরএ) বিদেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন ধরে চলা বৈষম্য নিরসন না করায় সমালোচনা তৈরি হয়েছে। সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে বিদেশ ভ্রমণ সংক্রান্ত একটি কমিটি গঠন করা হলেও, ওই কমিটির সুপারিশ পাশ কাটিয়ে এককভাবে প্রার্থী নির্বাচন করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এমনকি চলতি বছরের জুন মাসে বিদেশ ভ্রমণ করা তিন কর্মকর্তার নামও নতুন তালিকায় রাখা হয়েছে।

জানা গেছে, আগামী ২-৫ সেপ্টেম্বর আফ্রিকা মহাদেশের একটি দেশ নামিবিয়াতে অনুষ্ঠিতব্য এ্যালায়েন্স ফর ফাইনান্সিয়াল ইনক্লুশন'স  (AFI) আয়োজিত গ্লোবাল পলিসি ফোরাম (GPF) এর এক কর্মসূচিতে অংশ নিতে এমআরএ’র ১০ জন কর্মকর্তা যাচ্ছেন। তবে এদের অনেকের নাম বিদেশ ভ্রমণ সংক্রান্ত কমিটির প্রথম অফিস আদেশে ছিল না। কমিটির সুপারিশ উপেক্ষা করে পরবর্তীতে নতুন তালিকা করে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে জিও’র জন্য পাঠানো হয়। এই তালিকায় থাকা কর্মকর্তাদের অধিকাংশই ছিলো জুনিয়র কর্মকর্তা এবং এদের অনেকেই একাধিকবার বিদেশ ভ্রমণ করেছেন। 

এমআরএ’র বিদেশ ভ্রমণ সংক্রান্ত নথিপত্র বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, উপপরিচালক আশিক ইমতিয়াজ ও রবিউল ইসলাম  এবং সহকারী পরিচালক মো. রবিউল ইসলামকে মনোনীত করা হয়েছে—যারা যথাক্রমে ২০২৩, ২০২৪ ও ২০২৫ সালে ফিলিপাইন, ফিজি ও যুক্তরাষ্ট্র সফর করেছেন। এছাড়া যুগ্মপরিচালক জিনাত আমান বন্যা ছয়বার, যুগ্মপরিচালক লাকী পারভীন দুইবার, যুগ্মপরিচালক রনজীত কুমার সরকার ও মিনহাজুল ইসলাম তিনবার এবং সুমন চাকমা চারবার বিদেশ ভ্রমণ করেছেন।

এদের মধ্যে সুমন চাকমা, জিনাত আমান বন্যা এবং মো. রবিউল ইসলাম ২০২৫ সালের জুন মাসে বিদেশ ভ্রমণ করেছেন। যদিও উপপরিচালক পদে কর্মরত এবং চাকরির বয়স ৮-১৩ বছর হলেও অনেকে একবারও বিদেশ ভ্রমণের সুযোগ পাননি। অভিযোগকারীদের দাবি, সিনিয়রিটির ভিত্তিতে তালিকায় আগে থাকা সত্ত্বেও তাদের বাদ দিয়ে জুনিয়র কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণের সুযোগ দেওয়া হয়েছে।

নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে এমআরএ’র এক কর্মকর্তা দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আফির গ্লোবাল পলিসি ফোরামে মূলত বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ৭০০টি রেগুলেটর'স একত্রিত হয়ে ফাইনান্সিয়াল পলিসি সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। অথচ এমআরএ'র পলিসি তৈরিতে অবদান রাখতে পারবে এমন সিনিয়র কর্মকর্তাদের রাখা হয়নি। তিনি আরও বলেন জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর দেশ বৈষম্যমুক্ত হলেও মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি বৈষম্যমুক্ত হতে পারেনি। আওয়ামী লীগ আমলে যারা সুবিধা পেয়েছেন তারাই এখনো সুবিধা ভোগ করছেন। ভ্রমণ তালিকায় স্বৈরাচারী সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক মুখ্যসচিবের এক আত্মীয়ও রয়েছেন। যিনি একাধিকবার বিদেশ ভ্রমণের সুযোগ পেয়েছেন। এই ধরনের বৈষম্য সাম্যতা ও নৈতিক মানবিকতার পরিপন্থী। জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের পরও এমআরএ'র কর্মকর্তারা বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে এমআরএ’র এক্সিকিউটিভ ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. হেলাল উদ্দিন দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর বৈষম্য দূর করার চেষ্টা করেছি। বৈষম্যের যে অভিযোগ করা হচ্ছে, তা সঠিক নয়। ধাপে ধাপে সবাইকে বিদেশ ভ্রমণের সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে। এবার যারা সুযোগ পাবেন না, আগামীতে তাদের সুযোগ দেওয়া হবে।’

জানতে চাইলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারেক দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘বিষটি আমার জানা নেই। আপনি প্রশাসন শাখার অতিরিক্ত সচিবের সঙ্গে কথা বলুন।’ 

প্রশাসন শাখার অতিরিক্ত সচিব মো আজিমুদ্দিন বিশ্বাস বলেন, ‘এমআরএ’র বিদেশ ভ্রমণে বৈষম্য সংক্রান্ত অভিযোগ আমাদের কাছেও এসেছে। বিদেশ ভ্রমণের প্রার্থী বাছাই তারাই করে। তবে এ ধরনের বৈষম্য ঠিক না। কেউ একাধিকবার দেশের বাইরে যাবে, আর কেউ একবারও যেতে পারবে না এমনটি হতে পারে না। এমআরএ’র উচিত বিদেশ ভ্রমণে কেউ যেন বঞ্চিত না হয় সেটি নিশ্চিত করা।


সর্বশেষ সংবাদ