৪ আগস্ট ছাত্রদের পক্ষে ঢাল হয়ে দাঁড়ানো সেই মাসুদ এখন রমনার ডিসি

রমনার ডিসি মো. মাসুদ আলম
রমনার ডিসি মো. মাসুদ আলম  © টিডিসি সম্পাদিত

২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট। সারাদেশ জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে কোটা সংস্কার ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। রাজপথে নামে লাখো মানুষ, শিক্ষার্থী, শ্রমিক, চাকরিপ্রত্যাশী, অভিভাবক। একদিকে ছাত্রদের কণ্ঠে ছিল মেধাভিত্তিক নিয়োগের দাবি, অন্যদিকে রাষ্ট্রের পক্ষে ছিল অস্ত্রধারী পুলিশ বাহিনী। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা গেছে পুলিশ সদস্যরা সরকারি হুকুম রক্ষায় নিরস্ত্র শিক্ষার্থীদের ওপর চালিয়েছেন গুলি, লাঠিপেটা আর নিপীড়ন। শহীদ হয়েছেন বহু তরুণ, আহত হয়েছেন হাজারো। অনেক পুলিশ সদস্য শিক্ষার্থীদের মুখ চেপে ধরে রাখার চেষ্টাও করেছেন—শব্দহীন, ব্যথাভরা এক দমননীতি।

তবে এই অন্ধকারের ভেতর কিছু ব্যতিক্রমী ঘটনা ছাত্রদের মনে নতুন সাহস জুগিয়েছিল। সেই ব্যতিক্রমদের একজন তখনকার পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অর্থ ও প্রশাসন) মো. মাসুদ আলম। বর্তমানে তিনি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

আরও পড়ুন: শিক্ষার্থীদের মিছিলে ম্যাজিস্ট্রেটের গাড়ি চাপায় নিহত হন মাহবুব

সেই সময়কার একটি ভিডিও ক্লিপ সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওটি প্রথমে প্রকাশ করে ‘দ্য রেড জুলাই’ নামের একটি ফেসবুক পেজ। পরে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রেস সচিব শফিকুল আলমও সেই ভিডিও শেয়ার করেন।

ভিডিওতে মাসুদ আলমকে বলতে শোনা যায়, ‘যদি তোমাদের অ্যাটাক করার জন্য কেউ আসে, তাহলে আমি আছি। আমার উপর দিয়ে যাইতে হবে। আগে আমাকে মারতে হবে, তারপর যাইতে হবে। এই দিকে গ্যাঞ্জাম করার দরকার নাই, ওইদিকে কেউ যদি আসে আমি দেখতেছি।’

এই বক্তব্য মুহূর্তেই ভাইরাল হয়। নেটিজেনদের অনেকে সাহসিকতার জন্য মাসুদ আলমকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। ‘দ্য রেড জুলাই’-এর পোস্টে নাজমুস সাদাত নামে একজন মন্তব্য করেন, ‘সেদিন মাসুদ ভাই সাহসী ভূমিকা না নিলে হয়তো শহীদের তালিকা আরও দীর্ঘ হতো। ধন্যবাদ মাসুদ ভাই। খুব কাছে থেকে দেখেছি আপনার সেদিনের চেষ্টা।’ পাবনার সেদিনের আন্দোলনে সংঘর্ষের শঙ্কা তৈরি হলেও পুলিশের এই ভূমিকা পরিস্থিতি শান্ত রাখতে সহায়ক হয় বলে মনে করছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।

আরও পড়ুন: মৃত্যুর একদিন পর জঙ্গলে পাওয়া গেল মোস্তফার লাশ

এ বিষয়ে দ্য রেড জুলাইয়ের এডমিন সজিব দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ভিডিওটা আমাদের পাবনা জেলা টিম পাঠিয়েছে। জুলাই আন্দোলনে পুলিশ কর্মকর্তা মাসুদ আলম ছাত্রদের পক্ষে ছিল। এছাড়াও ভাইরাল হওয়া ভিডিওর কমেন্ট পড়লেও বুঝা যাবে স্থানীয়রা ওনার প্রশংসা করেছেন।

এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে দেশের রাজনৈতিক আন্দোলন থেকে শুরু করে যেকোনো আন্দোলনে প্রশংসা কুড়িয়েছেন এ কর্মকর্তা। গত মে মাসে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ এনে বিচার এবং দলটির রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধের দাবি তোলে আন্দোলন করে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। তখন হঠাৎ দায়িত্বে ডাকা হলে খেলার মাঠ থেকে জার্সি পরেই ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন ডিএমপির রমনা বিভাগের ডিসি মাসুদ আলম। 

এর আগেও ভাইরাল হয়েছেন এই কর্মকর্তা। গত ১৫ এপ্রিল সায়েন্সল্যাব মোড়ে সিটি কলেজ ও ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় তিনি বলেছিলেন, ‘এই সংঘর্ষের কারণ আল্লাহ ছাড়া কেউ বলতে পারবে না।’

প্রসঙ্গত, মাসুদ আলম বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের ২৮তম ব্যাচের কর্মকর্তা। তিনি র‌্যাব-৬ এর ঝিনাইদহ ক্যাম্প, পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এরপর বদলি করে তাকে পরবর্তীতে পদোন্নতি দিয়ে পুলিশ সুপার করা হয়। সম্প্রতি তাকে ডিএমপিতে পদায়নের রমনার ডিসি করা হয়।


সর্বশেষ সংবাদ

X
APPLY
NOW!