মৃত্যুর একদিন পর জঙ্গলে পাওয়া গেল মোস্তফার লাশ
- জাবির আহম্মেদ জিহাদ, জামালপুর প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ০৩ জুলাই ২০২৫, ০৪:১১ PM , আপডেট: ০৮ জুলাই ২০২৫, ১১:০৩ AM

কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত শিক্ষার্থী মোস্তফার লাশ মৃত্যুর একদিন পর জঙ্গল থেকে উদ্ধার করা হয় আন্দোলনে নিহত মোস্তফা। ৫ আগস্ট রাজধানীতে চলমান ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ মিছিলে পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান তিনি। পরদিন ৬ আগস্ট বিকেলে এক নির্জন জঙ্গল থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে স্বজনরা।
নিহত মোস্তফা জামালপুর জেলার এক প্রত্যন্ত গ্রামে ২০০২ সালের ১৫ মার্চ জন্মগ্রহণ করেন। পিতা মো. স্বপন মিয়া একজন কৃষক, আর মা মর্জিনা বেগম গৃহিণী। দারিদ্র্যক্লিষ্ট পরিবারে বড় হয়ে ওঠা মোস্তফা ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী ও আদর্শবাদী তরুণ।
পারিবারিক সূত্র জানায়, মোস্তফার স্বপ্ন ছিল শিক্ষক হবেন, দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনবেন। তবে কোটা পদ্ধতির কারণে যে বৈষম্য তৈরি হচ্ছে, তা নিয়ে তিনি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন ছিলেন। তাই ২০২৪ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনে তিনি যুক্ত হন।
আরও পড়ুন: কুপির আলোয় পড়তেন সবুজ, স্বপ্ন ছিল পুলিশ হওয়া
৫ আগস্ট ঢাকার রাজপথে অনুষ্ঠিত ছাত্রদের শান্তিপূর্ণ মিছিলে তিনি অংশ নেন। তার স্ত্রী তাকে আন্দোলনে না যেতে অনুরোধ করেছিলেন, কিন্তু মোস্তফা বলেছিলেন, ‘যা ভুল, তার বিরুদ্ধে দাঁড়ানোই কর্তব্য।’ মিছিল চলাকালে হঠাৎ পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গুলি ছোড়ে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, মোস্তফা গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই পড়ে যান।
মিছিলে অংশ নেওয়া সহপাঠীরা জানায়, তখনই তাকে আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। বিভিন্ন হাসপাতাল, থানা, মর্গ খুঁজেও সন্ধান মেলেনি। পরদিন ৬ আগস্ট বিকেলে শহরতলির এক জঙ্গল থেকে স্থানীয়রা তার নিথর দেহ দেখতে পান। পরে তার পরিবারের সদস্যরা গিয়ে লাশ শনাক্ত করেন।
নিহতের মা মর্জিনা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘ছেলেটার স্বপ্ন ছিল শিক্ষক হবে, মানুষ গড়বে। ওর গায়ে গুলি লাগল কেন? মরার পরও জঙ্গলে পড়ে ছিল—এইটা কোনো দেশের নিয়ম?’
আরও পড়ুন: বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন হওয়া ১২০ শহীদের পরিচয় এখনও মেলেনি
মোস্তফার মৃত্যুতে তার গ্রামের বাড়িতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। প্রতিবেশীরা বলছেন, ‘ও খুব ভালো ছেলে ছিল, কারও সাথে ঝামেলা করত না। এখন তো গুলি খেয়েই মরতে হয়?’
প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের জুলাইয়ে কোটা সংস্কারের দাবিতে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা ন্যায্য অধিকার আদায়ের দাবিতে আন্দোলনে নামেন। শুরুতে এই আন্দোলন ছিল শান্তিপূর্ণ, কিন্তু সরকার তা দমন-পীড়নের মাধ্যমে প্রতিহত করার চেষ্টা করে। এতে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। সরকার এই শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে দমন-পীড়নের মাধ্যমে থামাতে গিয়ে সরকারই আরও প্রবল প্রতিরোধের মুখে পড়ে। ছাত্র-জনতার শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ দমনে সরকারের সহিংস হস্তক্ষেপে প্রায় হাজারো নিরস্ত্র মানুষ প্রাণ হারান, আহত হন হাজার হাজার। মাত্র তিন সপ্তাহের মধ্যে আন্দোলন পরিণত হয় গণঅভ্যুত্থানে। পতন ঘটে টানা ১৫ বছর ক্ষমতায় থেকে দীর্ঘদিন নিপীড়ন নির্যাতন চালানো আওয়ামী লীগ সরকারের। ক্ষমতাসীন দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হন।