ইশরাক হোসেনের আক্রমণাত্মক কার্যক্রমের কারণ খুঁজে পেলাম না: আসিফ
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ১৯ মে ২০২৫, ০৫:১০ PM , আপডেট: ২০ মে ২০২৫, ১২:৫১ PM
বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার দাবিতে টানা কয়েকদিন ধরে নগর ভবন ব্লকেড কর্মসূচি পালন করছেন আন্দোলনকারীরা। এ কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে ইশরাকের সমর্থকরা কোনো কোনো উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি করছেন, পাশাপাশি কাউকে কাউকে ব্যঙ্গ করতেও দেখা গেছে। এরমধ্যে শ্রম ও কর্মসংস্থান এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদকে নিয়ে একটি ব্যঙ্গাত্মক ছবি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। সেই ছবিটিতে দেখা যায় আসিফ মাহমুদের কুশপুত্তলিকায় ইশরাক সমর্থকরা জুতার মালা পরিয়েছেন, আবার কেউ কেউ জুতা নিক্ষেপ করছেন। এ ছবিটি শেয়ার করে এ উপদেষ্টা নিজেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আক্ষেপ প্রকাশ করেছেন।
এ প্রসঙ্গে আসিফ মাহমুদ বলেন, জটিলতা নিরসন হলে স্থানীয় সরকার বিভাগের শপথ দিতে কোন সমস্যা নেই। তবে ব্যক্তিগতভাবে আমার বিরুদ্ধে ইশরাক হোসেনের এই আক্রমণাত্মক ও অপমানজনক কার্যক্রমের কোন কারণ খুঁজে পেলাম না!
আজ সোমবার (১৯ মে) বিকেলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। এসময় ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে আইনি জটিলতার বিষয়টি ব্যাখ্যাও করেন তিনি।
ফেসবুকে আসিফ লেখেন, প্রথমত, আর্জি সংশোধন অবৈধ মর্মে হাইকোর্টের রায় ভায়োলেট করে নির্বাচন কমিশন ট্রাইবুনাল এই রায় প্রদান করেছে। দ্বিতীয়ত, নির্বাচন কমিশন শুনানিতে অংশগ্রহণ না করায় একপাক্ষিক রায় হয়েছে, এবং পরবর্তীতে কমিশন আপিলও করেনি। তৃতীয়ত, আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত চাওয়া হলেও, মতামত দেওয়ার আগেই এবং একই সাথে দুইজন নাগরিকের পাঠানো লিগ্যাল নোটিশ উপেক্ষা করে রাত ১০টায় গেজেট প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন। চতুর্থত, উক্ত মামলায় স্থানীয় সরকার বিভাগ পক্ষভুক্ত ছিল না, এবং রায়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের প্রতি কোন নির্দেশনার উল্লেখ নেই। পঞ্চমত, শপথ না দেওয়ার কারণে নির্বাচন কমিশন স্থানীয় সরকার বিভাগকে বিবাদী করে রিট পিটিশন দায়ের করা হয়েছে, যা এখনও বিচারাধীন।
তিনি আরও বলেন, ষষ্ঠত, বরিশাল সিটি কর্পোরেশন সংক্রান্ত মামলায়, আর্জি সংশোধন সংক্রান্ত হাইকোর্টের রায়কে আমলে নিয়ে খারিজ করেছে ট্রাইবুনাল। ফলে ট্রাইবুনালের দ্বিমুখী অবস্থান বোধগম্য হচ্ছে না। সপ্তম, মেয়াদ সংক্রান্ত জটিলতা দেখা দিয়েছে; কতদিন মেয়র থাকবেন বা আদৌ মেয়াদ আছে কিনা তা স্পষ্ট নয়। অষ্টম, নির্বাচন কমিশনের চিঠিতে "কোনোপ্রকার আইনি জটিলতা না থাকলে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ" এর কথা বলা হয়েছে। স্পষ্টতই বিতর্কিত রায়, স্থানীয় সরকার বিভাগের প্রতি কোন নির্দেশনা না থাকা, লিগ্যাল নোটিশ এবং রিট পিটিশন বিচারাধীন থাকা সংক্রান্ত আইনি জটিলতা রয়েছে। নবম, এই জটিলতা নিরসনে আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত চাওয়া হয়েছে। দশম, আওয়ামী আমলের অবৈধ নির্বাচনগুলোকে বৈধতা দেওয়ার প্রশ্নও প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। রাজনৈতিক দলগুলো যদি স্বীকার করে যে আওয়ামী আমলের নির্বাচনগুলো বৈধ, তবে সরকারের জন্য এসব প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে না।
আরও পড়ুন: ‘ক্ষমতার সাথে নীতির নেগোসিয়েশন’— ইশরাকের কড়া সমালোচনা করে যা লিখলেন সারজিস
গাঁয়ের জোরে আদায় করার উদ্দেশ্যেই নগর ভবন বন্ধ করে ইশরাক সমর্থকদের বিষয়ে আসিফ মাহমুদ বলেন, আন্দোলন উচ্চ আদালতে বিচারাধীন এবং উপরোল্লিখিত জটিলতা নিরসন না করা পর্যন্ত শপথ গ্রহণ সম্ভব নয়। যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে বরং গাঁয়ের জোরে আদায় করার উদ্দেশ্যেই নগর ভবন বন্ধ করে মহানগর বিএনপি এই আন্দোলন চালাচ্ছে। ফলে সিটি কর্পোরেশনের দৈনন্দিন কাজ ব্যাহত হওয়াসহ জন দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে। এসকল জটিলতা নিরসন হলে স্থানীয় সরকার বিভাগের শপথ দিতে কোন সমস্যা নেই। তবে ব্যক্তিগতভাবে আমার বিরুদ্ধে ইশরাক হোসেনের এই আক্রমণাত্মক ও অপমানজনক কার্যক্রমের কোন কারণ খুঁজে পেলাম না! আবার কেও বলবেন না যে এটা সাধারণ জনগণ করছে, কারণ বিএনপি এবং অঙ্গসংগঠনের বিভিন্ন গ্রুপের নির্দেশনা এবং গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য অনুযায়ী দলীয় নেতাকর্মীরাই কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে।
আরও পড়ুন: উপাচার্য নিয়োগে সার্চ কমিটি গঠন করে প্রজ্ঞাপন জারি
এদিকে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র হিসেবে ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেনকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার দাবিতে আজ পঞ্চম দিনের মতো নগর ভবনের সামনে কর্মসূচি পালন করছেন আন্দোলনকারীরা। ফলে আজও নগর ভবনের ভেতরে ঢুকতে পারছে না সেবাগ্রহীতার। সে কারণে সেবাগ্রহীতাদের সেবা নিতে এসে ঘুরে যেতে হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। বিএনপির ইশরাক হোসেনকে পৌনে ২ লাখ ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে আওয়ামী লীগের শেখ ফজলে নূর তাপস মেয়র হন। গেল ২৭ মার্চ ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ২০২০ সালের নির্বাচনে ফজলে নূর তাপসকে বিজয়ী ঘোষণার ফল বাতিল করে বিএনপি নেতা ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করেন নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল। রায়ের কপি পেয়ে ২২ এপ্রিল গেজেট প্রকাশের বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের পরামর্শ চায় নির্বাচন কমিশন।