নতুন শিক্ষাক্রম

এলাকাভিত্তিক পছন্দ অনুযায়ী পেশাগত প্রশিক্ষণ পাবেন শিক্ষার্থীরা

শিক্ষা মন্ত্রণালয়, এনসিটিবি ও মাউশির লোগো
শিক্ষা মন্ত্রণালয়, এনসিটিবি ও মাউশির লোগো  © ফাইল ছবি

প্রচলিত শিক্ষা কাঠামোয় আমূল পরিবর্তনের ঘোষণা দিয়ে চলতি বছর সারাদেশে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন শুরু করে সরকার। নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে শুরুতে নানা আলোচনা-সমালোচনার পর প্রয়োজনীয় পরিবর্তনের কথাও জানানো হয়েছে দেশীয় শিক্ষার তদারক প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষ থেকে। নতুন শিক্ষাক্রমে প্রচলিত পরীক্ষা ধারা, মূল্যায়ন, পাঠ্যসূচি ও বিভাগ বিভাজনের বাইরে গিয়ে উচ্চশিক্ষার আগ পর্যন্ত সুযোগ রাখা হয়েছে একই পাঠ্যসূচিতে পাঠদান করার। নতুন এ শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের আগে পর্যাপ্ত প্রস্তুতি, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ, শিক্ষার্থী ও অংশীজনদের সম্পৃক্ত করাসহ নানা কারণে নতুন করে শঙ্কা তৈরি হয়েছে বৈশ্বিক মানের নতুন এ শিক্ষাক্রম নিয়ে। নতুন এ শিক্ষাক্রমে রাখা হয়েছে অঞ্চলভিত্তিক বিভিন্ন পেশায় শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ।

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) এ শিক্ষাক্রম ও অন্যান্য কার্যক্রমের তদারকি করছে। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আগামী জুলাই থেকে অঞ্চলভিত্তিক বিভিন্ন পেশায় শিক্ষার্থীদের শেখানো শুরু হবে। আর এ সংক্রান্ত বিস্তারিত নিদর্শিকা পাঠানো হবে তার এক মাস আগে অর্থাৎ জুনে। এ বিষয়ে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণে বিস্তারিত জানানো হবে বলেও নিশ্চিত করেছে এনসিটিবি।

নতুন শিক্ষাক্রমে এলাকাভিত্তিক পছন্দের সুযোগ রেখে শিক্ষাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। আগামী জুলাই থেকে অঞ্চলভিত্তিক বিভিন্ন পেশায় শিক্ষার্থীদের শেখানো শুরু হবেঅধ্যাপক মশিউজ্জমান, সদস্য (শিক্ষাক্রম), জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)।

কৃষি ও সেবা সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোয় জোর দিয়ে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ এবং পরবর্তীতে পেশাভিত্তিক বিষয়গুলো বিদ্যালয়কে বেঁচে নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে। এ পছন্দের ভিত্তিতে শেখার সুযোগ পাবেন শিক্ষার্থীরা। তবে নতুন এ শিক্ষাক্রম প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের সাথে সম্পৃক্তরা বলছেন, এটি আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষাক্রম হয়েছে। তারাও স্বীকার করছেন নতুন এ শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে মাঠ পর্যায়ে রয়েছে নানা চ্যালেঞ্জ।

বাংলাদেশের সর্বশেষ এ শিক্ষাক্রমটি আন্তর্জাতিক মানের হলেও শিক্ষকদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ, শিক্ষক সংকট, অবকাঠামো, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সচেতনতা, শিক্ষা সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সম্পৃক্ত করাসহ নানা চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে। শিক্ষক সংকটসহ নানা সংকটের কথা স্বীকার করছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ও। আর নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশের প্রচলিত শিক্ষায় আমূল পরিবর্তনের মূল কারিগর শিক্ষকরা যাতে শিক্ষার্থীদের সঠিকভাবে পঠন-পাঠন সম্পন্ন করতে পারেন সেজন্য শুরুতেই শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের আওতায় আনার উদ্যোগ নেয় মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)।

আরও পড়ুন: নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী পরিবর্তন হবে চাকরির প্রশ্ন, পরীক্ষাও

বাংলাদেশের নতুন শিক্ষাক্রমে জোর দেয়া হচ্ছে অভিজ্ঞতাভিত্তিক পাঠদানকে। এতে প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত বিদ্যমান পরীক্ষার চেয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধারাবাহিক মূল্যায়ন (শিখনকালীন) বেশি হওয়ার কথা রয়েছে। এতে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত প্রথাগত কোনো পরীক্ষা রাখা হয়নি। আর দুটিই থাকছে পরবর্তী শ্রেণিগুলোর মূল্যায়নের পদ্ধতি হিসেবে পরীক্ষা ও ধারাবাহিক শিখন কার্যক্রমে। পাশাপাশি বাদ দেয়া হয়েছে এখনকার মতো এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষাও। যা শুধু দশম শ্রেণির পাঠ্যসূচির ভিত্তিতে হবে এসএসসি পরীক্ষার মাধ্যমে সম্পন্ন করা হবে। একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে দুটি পাবলিক পরীক্ষা হবে নতুন শিক্ষাক্রমে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে জাতীয় শিক্ষাক্রম প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন কমিটির একাধিক সদস্য দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানিয়েছেন, নতুন শিক্ষাক্রম আন্তর্জাতিক মানের হয়েছে। তবে এখানে আপদকালীন পরিবর্তনের কোনো ধারণা না থাকায় কোভিডসহ নানা সংকট নতুন নতুন চ্যালেঞ্জের জানান দিচ্ছে। এছাড়াও নতুন এ শিক্ষা মাধ্যমে অভিভাবকদের খুব বেশি সম্পৃক্ত না করার ফলে একটি দূরত্ব তৈরি হচ্ছে বলেও অভিমত তাদের। নতুন কিছু করতে গেলে বাঁধা আসবে জানিয়ে তারা বলছেন, পরিবর্তনকে স্বীকার করতে আমাদের ইতিবাচক মানসিকতা গড়ে তুলতে হবে। এছাড়াও নতুন শিক্ষাক্রমের সফল বাস্তবায়ন করতে জোরদার নজরদারি, তদারকি এবং সময়ের সাথে সাথে নতুন নতুন দক্ষতা উন্নয়ন করতে কাজ করার পরামর্শ তাদের।

নতুন নিয়মে এখনকার মতো এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা হবে না। শুধু দশম শ্রেণির পাঠ্যসূচির ভিত্তিতে হবে এসএসসি পরীক্ষা। একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে দুটি পাবলিক পরীক্ষা হবে।

জানতে চাইলে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) সদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক মশিউজ্জমান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, নতুন শিক্ষাক্রমে এলাকাভিত্তিক পছন্দের সুযোগ রেখে শিক্ষাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। আগামী জুলাই থেকে অঞ্চলভিত্তিক বিভিন্ন পেশায় শিক্ষার্থীদের শেখানো শুরু হবে। আর এ সংক্রান্ত বিস্তারিত নিদর্শিকা পাঠানো হবে তার এক মাস আগে অর্থাৎ জুনে। এ বিষয়ে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণে বিস্তারিত জানানো হবে।

এর আগে গত ২০২১ সালের মে মাসে প্রাক-প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত শিক্ষাব্যবস্থায় বড় পরিবর্তন এনে প্রণয়ন করা শিক্ষাক্রমের রূপরেখাটি অনুমোদন দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নতুন শিক্ষাক্রমে প্রাক-প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত বিদ্যমান পরীক্ষার চেয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধারাবাহিক মূল্যায়ন (শিখনকালীন) বেশি হবে। এর মধ্যে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত কোনো পরীক্ষা হবে না, পুরোটাই মূল্যায়ন হবে সারা বছর ধারাবাহিকভাবে চলা বিভিন্ন রকমের শিখন কার্যক্রমের ভিত্তিতে। পরবর্তী শ্রেণিগুলোর মূল্যায়নের পদ্ধতি হিসেবে পরীক্ষা ও ধারাবাহিক শিখন কার্যক্রম—দুটোই থাকছে।

আরও পড়ুন: ৪০৬ কোটি ব্যয়ে সোয়া ৪ লাখ শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দেবে মাউশি

নতুন নিয়মে এখনকার মতো এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা হবে না। শুধু দশম শ্রেণির পাঠ্যসূচির ভিত্তিতে হবে এসএসসি পরীক্ষা। একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে দুটি পাবলিক পরীক্ষা হবে। প্রতি বর্ষ শেষে বোর্ডের অধীনে এই পরীক্ষা হবে। এরপর এই দুই পরীক্ষার ফলের সমন্বয়ে এইচএসসির চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হবে। 

এ ছাড়া নতুন শিক্ষাক্রমে দশম শ্রেণির আগে কোনো পাবলিক পরীক্ষা রাখা হয়নি। একজন শিক্ষার্থী বিজ্ঞান, মানবিক নাকি ব্যবসায় শিক্ষায় পড়বে, সেটি ঠিক হবে উচ্চমাধ্যমিকে গিয়ে। ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত সব শিক্ষার্থীকে ১০টি অভিন্ন বিষয়ে পড়ানো হবে। এখন অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত সবাইকে অভিন্ন বিষয় পড়তে হয়। আর একজন শিক্ষার্থী বিজ্ঞান, মানবিক নাকি ব্যবসায় শিক্ষায় পড়বে, সেটি বর্তমানে ঠিক হয় নবম শ্রেণিতে গিয়ে।

নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণি ও ষষ্ঠ শ্রেণির জন্য নির্ধারিত কিছুসংখ্যক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষাক্রম পরীক্ষামূলকভাবে (পাইলটিং) চালু করা হবে। বিভিন্ন শ্রেণিতে তা পর্যায়ক্রমে চালু হবে পরের বছর থেকে। এর মধ্যে ২০২৩ সালে প্রথম, দ্বিতীয়, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণি; ২০২৪ সালে তৃতীয়, চতুর্থ, অষ্টম ও নবম শ্রেণি; ২০২৫ সালে পঞ্চম ও দশম শ্রেণিতে চালু হবে নতুন শিক্ষাক্রম। এরপর উচ্চমাধ্যমিকের একাদশ শ্রেণিতে ২০২৬ সালে এবং দ্বাদশ শ্রেণিতে ২০২৭ সালে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে।

 

সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence