নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী পরিবর্তন হবে চাকরির প্রশ্ন, পরীক্ষাও: শিক্ষামন্ত্রী
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ৩০ অক্টোবর ২০২৩, ০৬:০৯ PM , আপডেট: ৩০ অক্টোবর ২০২৩, ০৭:৪৭ PM
শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, নতুন শিক্ষাক্রমের মাধ্যমে দেশে প্রচলিত শিক্ষা কাঠামোয় ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়েছে। এ বছর ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হয়েছে এবং পরবর্তীতে বছরানুক্রমে নতুন নতুন শ্রেণিতে এটি বাস্তবায়ন করা হবে। এছাড়াও নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী উচ্চশিক্ষার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা ও চাকুরি নিয়োগের ক্ষেত্রেও পরিবর্তন করা হবে।
সোমবার (৩০ অক্টোবর) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে নতুন শিক্ষাক্রম ২০২২ এর বাস্তবায়ন বিষয়ে আয়োজিত সংক্রান্ত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে নানা বিতর্ক নিয়ে সরকারের অবস্থান ব্যাখ্যা ও সঠিক তথ্য গণমাধ্যমের সামনে তুলে ধরেন।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আগামীতে চাকরির ক্ষেত্রেও নিয়োগ হবে পারদর্শিতার মূল্যায়নের ভিত্তিতেই। নতুন শিক্ষাক্রম এগিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি সাযুজ্যপূর্ণ করা হবে চাকরিতে প্রবেশের ক্ষেত্রও। এছাড়াও আমাদের সরকারি চাকরির পাশাপাশি বর্তমানে বেসরকারি চাকরিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে সনদের চেয়েও বেশি জোর দেওয়া হচ্ছে দক্ষতারও ওপর—নতুন শিক্ষাক্রম আমাদের শিক্ষার্থীদের দক্ষতা উন্নয়নে কাজ করছে।
বর্তমানে দেশের উচ্চশিক্ষায় প্রবেশের ক্ষেত্রে আমাদের একক ভর্তি প্রক্রিয়া নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে। সকল বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ে এনটিএ গঠনের জন্য আরও দু-তিন বছর সময় লাগবে। নতুন শিক্ষাক্রমে যে-সব শিক্ষার্থী অংশ নিচ্ছেন তারা ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের আগেই আমরা এ পরিবর্তন আনতে পারব বলেও জানান শিক্ষামন্ত্রী।
নতুন শিক্ষাক্রমে পড়াশোনা নেই, পরীক্ষা নেই, শিক্ষার্থীরা কিছু শিখছে না বলে যে-সব কথা বলা হচ্ছে—সেটি ভুল। শিক্ষার্থীরা এখন আগের চেয়ে বেশি পড়বে আর মূল্যায়ন হবে প্রতিটি কাজের। আবার অর্ধবার্ষিক ও বার্ষিক মূল্যায়নও হবে। কাজেই পরীক্ষা (মূল্যায়ন) ঠিকই থাকছে, কিন্তু পরীক্ষা—পরীক্ষার ভীতি থাকছে না।
তিনি বলেন, ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার যে কার্যক্রম হাতে নিয়েছেন, তারই অংশ হিসেবে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের উপযোগী নাগরিক তৈরির লক্ষ্যে শিক্ষা ব্যবস্থার রূপান্তর ঘটানোর উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। প্রত্যাশা করা হয়েছে, শিক্ষা ব্যবস্থার এই রূপান্তরের মধ্যে দিয়েই ভবিষ্যতের স্মার্ট শিক্ষার্থীর বুনিয়াদ রচিত হবে। এরই ধারাবাহিকতায় প্রাক-প্রাথমিক থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত নিরবচ্ছিন্ন শিক্ষার উদ্দেশ্যে শিক্ষা ব্যবস্থার সকল ধারাকে বিবেচনা করে প্রথমবারের মতো জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা-২০২১ প্রণয়ন করা হয়েছে।
দীপু মনি বলেন, জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা-২০২১ এর রূপরেখা প্রণয়ন এবং তার ভিত্তিতে বিস্তারিত শিক্ষাক্রম, শিখন শেখানো সামগ্রী এবং প্রণয়নের ক্ষেত্রে বেশ কিছু নতুন পদক্ষেপ গৃহীত হয়েছে; যা এর আগে কখনোই অনুসরণ করা হয়নি। শিক্ষাক্রম প্রণয়নের পূর্বে ২০১৭-২০১৮ সালে এনসিটিবি কর্তৃক ১২টি গবেষণা পরিচালিত হয়, যার ভিত্তিতে এই রূপরেখা প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হয়।
চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের প্রেক্ষাপটে পৃথিবীর বাস্তবতা অনেকটাই পালটে যাচ্ছে জানিয়ে শ্রমনির্ভর অর্থনীতির মডেল সামনে এনে মন্ত্রী বলেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির প্রসারের ফলে ভবিষ্যতে নতুন অনেক কর্মসংস্থান তৈরি হবে, যার কারণে বর্তমান সময়ের অনেক পেশা শ্রম অচিরেই প্রাসঙ্গিকতা হারাবে। এই প্রেক্ষাপট বিবেচনায় বাংলাদেশের সম্ভাবনার দিক হলো—এ দেশের বিশাল তরুণ জনগোষ্ঠী, যার জনমিতিক সুফল পেতে হলে অনতিবিলম্বে আধুনিক ও যুগোপযোগী শিক্ষাব্যবস্থা প্রণয়ন করা প্রয়োজন ছিল।
ডা. দীপু মনি বলেন, বিশ্বের ১০২টি দেশের মধ্যে ৭৬টি দেশের শিক্ষাক্রমে সুনির্দিষ্টভাবে দক্ষতাভিত্তিক যোগ্যতাকে নির্ধারণ করা হয়েছে এবং ৫১টি দেশের শিক্ষাক্রম সম্পূর্ণ রূপান্তরমূলক দক্ষতাভিত্তিক করা হয়েছে। ওইসিডি (২০১৮) ভুক্ত দেশগুলোও এই পরিবর্তিত সময়ের চাহিদা অনুযায়ী একটা সাধারণ শিক্ষাক্রম রূপরেখা তৈরি করেছে, বেশ কিছু উন্নয়নশীল দেশও যার অংশীদার এমনকি দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর দিকে তাকালেও দেখা যায়, ভুটান, ভারত, নেপাল, শ্রীলংকাসহ অন্যান্য দেশও তাদের শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কারের কাজ শুরু করেছে।
বর্তমানে দেশের উচ্চশিক্ষায় প্রবেশের ক্ষেত্রে আমাদের একক ভর্তি প্রক্রিয়া নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে। সকল বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ে এনটিএ গঠনের জন্য আরও দু-তিন বছর সময় লাগবে। নতুন শিক্ষাক্রমে যে-সব শিক্ষার্থী অংশ নিচ্ছেন তারা ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের আগেই আমরা এ পরিবর্তন আনতে পারব।
বাংলাদেশও একইভাবে শিক্ষাব্যবস্থায় একটি সার্বিক পরিবর্তনের তাগিদ অনুভব করছিল যা একই সাথে বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে জাতীয় শিক্ষার লক্ষ্য শিখন-শেখানো প্রক্রিয়া, মূল্যায়ন, শিখন পরিবেশ, শিখন উপকরণ, শিক্ষা ব্যবস্থাপনা এবং শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবক, এলাকার জনগণসহ সকল উপাদানের মাঝে আন্তঃসম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে একই পরিবর্তনের ধারায় নিয়ে আসবে। জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা ২০২১ সেই দীর্ঘ তাগিদ, পরিকল্পনা, গবেষণা ও অভিজ্ঞতার ফসল। কাজেই নিঃসন্দেহে এটি বাংলাদেশের ইতিহাসের একটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক বলেও জানান শিক্ষামন্ত্রী।
নতুন শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক নিয়ে মিথ্যাচার হচ্ছে জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, গত জানুয়ারিতে অপপ্রচারকারীরা সাম্প্রদায়িক উসকানি দেওয়ার লক্ষ্যে বই নিয়ে মিথ্যাচার করেছিলো। এরা চায় না শিক্ষার্থীরা স্বাধীনভাবে শিখতে, চিন্তা করতে শিখুক, অনুসন্ধিৎসু হোক, মুক্তবুদ্ধি ও মুক্তচিন্তার চর্চা করুক। ওরা চায় মগজ ধোলাইয়ের শিক্ষাই চালু থাকুক। তাই নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে সবাইকে সঠিক তথ্য জানতে হবে।
নতুন শিক্ষাক্রমে পড়াশোনা নেই, পরীক্ষা নেই, শিক্ষার্থীরা কিছু শিখছে না বলে যে-সব কথা বলা হচ্ছে—সেটি ভুল জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, শিক্ষার্থীরা এখন আগের চেয়ে বেশি পড়বে আর মূল্যায়ন হবে প্রতিটি কাজের। আবার অর্ধবার্ষিক ও বার্ষিক মূল্যায়নও হবে। কাজেই পরীক্ষা (মূল্যায়ন) ঠিকই থাকছে, কিন্তু পরীক্ষা—পরীক্ষার ভীতি থাকছে না।
তিনি বলেন, নতুন শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক নিয়ে মিথ্যাচার হচ্ছে। আমরা দেখছি, যারা ফেসবুক বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যে-সব আইডি থেকে এই প্রচারণা শুরু করেছেন এবং বিষয়টিকে এখন একটি আন্দোলনে রূপ দেওয়ার চেষ্টা করছেন, তারা মূলত কোচিং ব্যবসায়ী। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নোট ও গাইড বই ব্যবসায়ীরা। কারণ, তারা মনে করছেন, নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়িত হলে ব্যবসায় মার খাবেন। সে কারণে তারা নামছেন।