প্রাথমিকের ছাপা বাকি ২৫ শতাংশ
মাধ্যমিকের ১০ কোটির বেশি বই ছাপা শুরুই হয়নি
মোট বই ৩১ কোটি
- শিহাব উদ্দিন
- প্রকাশ: ০৭ নভেম্বর ২০২৩, ০৮:৩৫ PM , আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০২৩, ০৮:৫২ PM
নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরু হতে দুই মাসেরও কম সময় বাকি। কিন্তু মাধ্যমিক স্তরের ১০ কোটির বেশি বই এখনো ছাপার কাজই শুরু হয়নি। আর প্রাথমিকের প্রায় ২৫ শতাংশ বই ছাপার কাজ বাকি। নতুন বছরের প্রথম দিনে সব শিক্ষার্থীর হাতে সব বই তুলে দেওয়া যাবে কিনা, তা নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
যদিও জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) বলছে, নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরু হতে এখনো অনেক সময় বাকি। এর মধ্যে সব বই ছাপানোর কাজ শেষ হয়ে যাবে। আগামী বছরের পহেলা জানুয়ারি সব শিক্ষার্থী নতুন বই পাবে। আর ১৫ জানুয়ারির মধ্যে সব বই শিক্ষার্থীদের হাতে থাকবে।
এনসিটিবি সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪ শিক্ষাবর্ষে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের তিন কোটি ৮১ লাখ ২৭ হাজার ৬৩০ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে বিনামূল্যে বিতরণের জন্য প্রায় ৩১ কোটি বই ছাপার কাজ করছে এনসিটিবি। এর মধ্যে মাধ্যমিক স্তরের মোট বই ১৮ কোটি ৬১ লাখ ১ হাজার ২০৬টি। আর প্রাথমিক স্তরের মোট বই প্রায় ৯ কোটি ৫০ লাখ। এছাড়া ইবতেদায়ির জন্য ২ কোটি ৭১ লাখ ৭৩ হাজার ১৩৫টি বই ছাপা হবে।
নতুন কারিকুলামের নবম শ্রেণির পাঠ্যবই ছাপানোর কাজ শুরু করা যায়নি। এছাড়া ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বইটিও ছাপানোর কাজ শুরু হয়নি। সেজন্য সংখ্যাটা বেশি মনে হচ্ছে— এনসিটিবি কর্মকর্তা
ওই সূত্র আরও জানায়, ৭ নভেম্বর পর্যন্ত মাধ্যমিক স্তরে ৮ কোটি ৩৭ লাখ ৪৫ হাজারের বেশি বই ছাপার কাজ শেষ হয়েছে। তবে ছাপার পর আনুষঙ্গিক কাজ শেষ করে উপজেলা পর্যায়ে সব বই পৌঁছায়নি। সূত্রমতে, মাধ্যমিকের ১০ কোটি ২৩ লাখ ৫৫ হাজার ৬২৩টি বই ছাপানোর কাজ শুরুই হয়নি।
এনসিটিবির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, নতুন কারিকুলামের নবম শ্রেণির পাঠ্যবই ছাপানোর কাজ শুরু করা যায়নি। এছাড়া ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বইটিও ছাপানোর কাজ শুরু হয়নি। সেজন্য সংখ্যাটা বেশি মনে হচ্ছে। তবে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সব বই ছাপার কাজ শেষ হবে।
ওই কর্মকর্তা আরও জানান, আমাদের চিন্তা হলো- আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচিতে বইগুলো নিরাপদে পাঠানো নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। এছাড়া অবরোধের অজুহাতে ছাপাখানাগুলো কাগজের সংকট তৈরি হয়েছে বলে জানাচ্ছে। এ বিষয়গুলোর সমাধান করা গেলে যথাসময়েই শিক্ষার্থীরা নতুন বই হাতে পাবে।
তিবছর বই ছাপানো নিয়ে আমাদের একটি রোডম্যাপ তৈরি করা হয়। এবারও রোডম্যাপ তৈরি করা হয়েছে। সে অনুযায়ী কাজ চলছে। নবম শ্রেণির বই দ্রুত সময়ের মধ্যে ছাপানোর কাজ শুরু হবে। কাজেই বছরের প্রথম দিন শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দেওয়া নিয়ে যে শঙ্কার কথা বলা হচ্ছে সেটি তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা নেই—অধ্যাপক ফরহাদুল ইসলাম, চেয়ারম্যান, এনসিটিবি
এনসিটিবির আরেকটি সূত্র জানিয়েছে, গত শিক্ষাবর্ষে প্রাথমিকের বই ছাপানো নিয়ে বড় ধরনের জটিলতা তৈরি হয়েছিল। সেজন্য এবার প্রাথমিকের বই ছাপানোর কাজ আগে শুরু হয়েছে। প্রাক-প্রাথমিক, প্রাথমিক মিলে এবার প্রায় সাড়ে ৯ কোটি বই ছাপানো হচ্ছে। যার ৭৫ শতাংশ ছাপানোর কাজ শেষ। অবশিষ্ট বই ২০ নভেম্বরের ছাপা শেষ করে সংশ্লিষ্ট জেলা ও উপজেলায় পাঠানো হবে।
ওই সূত্র আরও জানায়, প্রাথমিকের বই ছাপানোর কাজ আগে শুরু করায় মাধ্যমিকের বই ছাপাতে কিছুটা বিলম্ব হয়েছে। ৬ষ্ঠ শ্রেণির একটি ছাড়া সব বই ছাপানো শেষ। গত সপ্তাহ থেকে অষ্টম শ্রেণির বই ছাপানোর কাজ শুরু হয়েছে। চলতি সপ্তাহ অথবা আগামী সপ্তাহ থেকে নবম শ্রেণির বই ছাপানোর কাজ শুরু হবে।
এ বিষয়ে এনসিটিবি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফরহাদুল ইসলাম দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, প্রতিবছর বই ছাপানো নিয়ে আমাদের একটি রোডম্যাপ তৈরি করা হয়। এবারও রোডম্যাপ তৈরি করা হয়েছে। সে অনুযায়ী কাজ চলছে। নবম শ্রেণির বই দ্রুত সময়ের মধ্যে ছাপানোর কাজ শুরু হবে। কাজেই বছরের প্রথম দিন শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দেওয়া নিয়ে যে শঙ্কার কথা বলা হচ্ছে সেটি তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
অধ্যাপক ফরহাদুল ইসলাম
এনসিটিবি চেয়ারম্যান আরও বলেন, প্রাথমিকের সব বই ২০ নভেম্বরের মধ্যে পৌঁছে দেওয়া হবে। ২৫ ডিসেম্বরের মধ্যে মাধ্যমিকের বইগুলোও সংশ্লিষ্টদের হাতে পৌঁছে যাবে। কাজেই শঙ্কা, সংকট এগুলো এবার হবে না। ছাপাখানাগুলো নির্বাচনের অজুহাতও দিতে পারবে না। কেননা বই ছাপা হয় রোল পেপারে। আর নির্বাচনের পোস্টার ছাপানো হয় শিট মেশিনে। এবার যথাসময়ে শিক্ষার্থীরা নতুন বই পাবে।
হরতাল-অবরোধে গাড়িতে বই পৌঁছানো ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে অধ্যাপক ফরহাদ বলেন, আমরা কাভার্ড ভ্যানে বই পাঠানোর চেষ্টা করবো। প্রয়োজন হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতা নেওয়া হবে।