কলেজে আইসিটির ক্লাসে বাংলা-দর্শনের শিক্ষক, মুখস্ত পাস শিক্ষার্থীরা

আইসিটি ক্লাস
আইসিটি ক্লাস  © সংগৃহীত

শিক্ষার্থীদের তথ্য-প্রযুক্তি খাতে দক্ষ করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে ২০১২ সালে দেশের মাধ্যমিক স্তরে আইসিটি শিক্ষা বাধ্যতামূলক করে সরকার। যার ধারবাহিকতায় ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষ থেকে একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণীতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি নামক নতুন বিষয়কে বাধ্যতামূলক করা হয়। তবে কলেজ পর্যায়ে আইসিটি বিষয় বাধ্যতামূলক করার ৯ বছর পরও সব কলেজে এ পদে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হয়নি। শিক্ষক না থাকা কলেজগুলোতে অন্য বিষয়ের শিক্ষকরা এ বিষয়ে পাঠদান করছেন। ফলে কেবল পরীক্ষায় পাস করার জন্য আইসিটির কিছু তাত্ত্বিক বিষয় মুখস্ত করছে শিক্ষার্থীরা।

বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী,  বর্তমানে দেশে বিভিন্ন পর্যায়ের কলেজ রয়েছে চার হাজার ৭২৯ টি। এর মধ্যে সরকারি কলেজের সংখ্যা ৬৮৮টি এবং বেসরকারি কলেজ চার হাজার ৪১টি। স্কুল ও কলেজ (কলেজ পর্যায়) এক হাজার ৪২০টি, উচ্চ মাধ্যমিক কলেজ এক হাজার ৩৬৮টি, ডিগ্রি (পাসকোর্স) এক হাজার ৪৮টি, ডিগ্রি (অনার্স) ৬৯৫টি ও মাস্টার্স কলেজ রয়েছে ১৯৮টি।

আরও পড়ুন : একাদশের ক্লাস শুরু ১ ফেব্রুয়ারি

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিভিন্ন পর্যায়ের মোট চার হাজার ৭২৯টি কলেজের মধ্যে ২০২১ সাল পর্যন্ত আইসিটি শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে চার হাজার ৩৩ টি কলেজে। অর্থ্যাৎ ৬৯৬টি কলেজে এখনও আইসিটি শিক্ষক নিয়োগ হয়নি।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, এক হাজার ৪২০টি স্কুল ও কলেজ (কলেজ পর্যায়) এর মধ্যে ১৮৬টি কলেজে, এক হাজার ৩৬৮ টি উচ্চ মাধ্যমিক কলেজের মধ্যে২৪৮ টিতে, এক হাজার ৪৮টি ডিগ্রি (পাসকোর্স) কলেজের মধ্যে ১২৬টিতে, ৬৯৫টি ডিগ্রি ( অনার্স) কলেজের মধ্যে ১০০টিতে এবং ১৯৮টি মাস্টার্স কলেজের মধ্যে ৩৬টিতে নেই আইসিটির শিক্ষক। এছাড়া দেশের মোট ৬৮৮টি সরকারি কলেজের মধ্যে এখনও ১৭২টি কলেজে আইসিটি শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়নি।

জানা গেছে, ২০১৩ সালে কলেজ পর্যায়ে আইসিটি বিষয় বাধ্যতামূলক করা হলেও সরকারি কলেজে আইসিটি বিষয়ে শিক্ষক নিয়োগ দিতে ২০১৬ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছিল পিএসসি।  তবে সেখান থেকে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ে প্রভাষক পদে ১৭০ জন নিয়োগের সুপারিশ পেয়েছিলেন।

আর বেসরকারি কলেজগুলোতে আইসিটি বিষয়ের শিক্ষকের পদ তৈরি হয় ২০১৮ সালে। এরপর ২০১৯ সালে গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে প্রায় সাড়ে চারশ’ আইসিটি বিষয়ের শিক্ষক নিয়োগ দেয় এনটিআরসিএ। তবে ২০১৬ সালে সরকারি কলেজে এবং ২০১৮ সালে বেসরকারি কলেজগুলোয় আইসিটি শিক্ষক পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হলেও অজানা কারণে এখনও ৬৯৬ টি কলেজে এ পদে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া যায়নি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আইসিটির শিক্ষক না থাকায় কলেজগুলোতে আইসিটি বিষয়ের ক্লাস নিচ্ছেন বাংলা, ইংরেজি, দর্শন এবং ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতির শিক্ষকেরা। কিছু কলেজে আবার অর্থনীতি, হিসাববিজ্ঞান, ব্যবসায় সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা, রসায়ন, উদ্ভিদবিদ্যা, প্রাণিবিদ্যা, পদার্থবিজ্ঞান বা গণিতের শিক্ষকেরা আইসিটি পড়াচ্ছেন। এই শিক্ষকরা কয়েক মাসের কম্পিউটার প্রশিক্ষণ নিয়েছেন।

আরও পড়ুন: সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তির নীতিমালা প্রকাশ

শিক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, সরকারি কলেজগুলোতে আইসিটি বিষয়ের শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। নতুন করে নিয়োগ দেওয়া হলে দ্রুতই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। মন্ত্রণালয়ের দাবি, বর্তমানে সিএসই কিংবা সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে পড়ালেখা শেষ করা গ্রাজুয়েটরা সরকারি কলেজে আসতে চান না বলেই সংকট পিছু ছাড়ছে না।

তবে আইসিটি সংশ্লিষ্ট বিষয়ে স্নাতক উত্তীর্ণদের দাবি, পিএসসির মাধ্যমে সরকারি কলেজগুলোতে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ার ধীরগতির কারণেই মূলত তারা এই পেশায় আসতে চান না। এছাড়া যথা সময়ে সংশ্লিষ্ট বিষয়ের পদ সৃষ্টি না হওয়াও চাকরি না করার অন্যতম কারণ। সরকার যে উদ্দেশ্যে আইসিটি বিষয় চালু করেছে তা বাস্তবায়ন করতে হলে কলেজগুলোতে আইসিটি বিষয়ের শিক্ষক নিয়োগের কার্যক্রম দ্রুত সম্পন্ন করার কথা জানান শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের এক কর্মকর্তা দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই শিক্ষকের ঘাটতি থাকবে না। পিএসসি ও এনটিআরসিএ’র মাধ্যমে অবশিষ্ট কলেজগুলোতে আইসিটি বিষয়ের শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।


সর্বশেষ সংবাদ