হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশি শিক্ষার্থী বন্ধের হুমকি ট্রাম্পের
- টিডিসি ডেস্ক
- প্রকাশ: ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ১০:১৩ AM , আপডেট: ২৯ জুন ২০২৫, ০৪:১১ PM
যুক্তরাষ্ট্রের প্রখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় হার্ভার্ডে বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য ভর্তি কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যেতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ তথা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, কিছু ভিসাধারীর তথ্য জানাতে ট্রাম্প প্রশাসন যে দাবি করেছে তা পূরণ না করলে বিশ্ববিদ্যালয়টি বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষমতা হারাবে। বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ তথ্য জানিয়েছে।
এই সিদ্ধান্তকে ট্রাম্প প্রশাসনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে নেওয়া সর্বশেষ কঠোর পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। এর আগেও হোমল্যান্ড সিকিউরিটি সেক্রেটারি ক্রিস্টি নোয়েম হার্ভার্ডের ২.৭ মিলিয়ন ডলারের বেশি মূল্যের দুটি অনুদান বাতিল করেছেন। তিনি জানান, হার্ভার্ডকে একটি চিঠি পাঠিয়ে তিনি বিদেশি শিক্ষার্থীদের ‘অবৈধ ও সহিংস কার্যকলাপ’ সংক্রান্ত নথিপত্র ৩০ এপ্রিলের মধ্যে জমা দেওয়ার অনুরোধ করেছেন।
নোয়েম এক বিবৃতিতে বলেন, ‘যদি হার্ভার্ড তথ্য দেওয়ার বাধ্যবাধকতার প্রয়োজনীয়তা সম্পূর্ণরূপে মেনে চলছে কিনা তা প্রমাণ করতে না পারে, তবে বিশ্ববিদ্যালয়টি বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ হারাবে।’
হার্ভার্ডের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয় সেক্রেটারি নোয়েমের পাঠানো চিঠির বিষয়ে অবগত আছে। চিঠিতে অনুদান বাতিল এবং বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভিসা সংক্রান্ত বিষয়গুলো তদন্তের কথা বলা হয়েছে। মুখপাত্র আরও জানান, হার্ভার্ড তাদের আগের সপ্তাহে দেওয়া বিবৃতিতে অটল রয়েছে। ওই বিবৃতিতে বলা হয়েছিল, বিশ্ববিদ্যালয় তাদের স্বাধীনতা বা সাংবিধানিক অধিকার থেকে সরে আসবে না, তবে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকবে।
গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের ভয়াবহ সামরিক অভিযানের পর ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়লে, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে ফেডারেল অর্থায়ন কমিয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছে। এই পরিস্থিতির সূচনা হয় হামাসের একটি মারাত্মক হামলার পর।
ট্রাম্প বিক্ষোভকারীদের বৈদেশিক নীতির জন্য একটি হুমকি হিসেবে দেখছেন এবং মনে করেন তারা হামাসপন্থী ও ইহুদিবিদ্বেষী। তবে বিক্ষোভকারীরা—যাদের মধ্যে কিছু ইহুদি গোষ্ঠীও রয়েছে—বলছেন, ট্রাম্প প্রশাসন ভুলভাবে ফিলিস্তিনিদের পক্ষে তাদের অবস্থান ও গাজায় ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডের সমালোচনাকে চরমপন্থা ও ইহুদি বিদ্বেষের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলছে।
হার্ভার্ড এর আগে বলেছিল, তারা তাদের ক্যাম্পাসে ইহুদিবিদ্বেষ এবং অন্যান্য কুসংস্কারের বিরুদ্ধে লড়াই করার পাশাপাশি অ্যাকাডেমিক স্বাধীনতা এবং বিক্ষোভের অধিকার রক্ষা করতে কাজ করে। এর আগে, ট্রাম্প প্রশাসন গত মাসের শেষ দিকে জানিয়েছিল, তারা হার্ভার্ডের ৯ বিলিয়ন ডলারের ফেডারেল চুক্তি এবং অনুদান পর্যালোচনা করছে। পরে বিশ্ববিদ্যালয়টিকে ফেডারেল অর্থ পেতে হলে মাস্ক নিষিদ্ধ করা এবং ডাইভার্সিটি, ইক্যুইটি ও ইনক্লুশন (ডিইআই) প্রোগ্রাম বাতিলসহ বেশ কিছু বিধিনিষেধ আরোপের আহ্বান জানায়।
হার্ভার্ড সোমবার বেশ কিছু দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে। বিশ্ববিদ্যালয় বলেছে, এই দাবিগুলো সরকারের কাছে নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দেওয়ার শামিল। এরপর ট্রাম্প প্রশাসন ২ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার তহবিল স্থগিত করেছে বলে জানায়। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার ট্রাম্প হার্ভার্ডের করমুক্তির সুবিধা কেড়ে নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। মার্কিন অভ্যন্তরীণ রাজস্ব পরিষেবা হার্ভার্ডের করমুক্তির সুবিধা বাতিলের পরিকল্পনা করছে এবং শিগগিরই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আশা করা যাচ্ছে।
হার্ভার্ড বলেছে, তাদের করমুক্ত মর্যাদা বাতিলের কোনো আইনি ভিত্তি নেই। বিশ্ববিদ্যালয় আরও বলেছে, এ ধরনের পদক্ষেপ নজিরবিহীন হবে, যা শিক্ষার্থীদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক সহায়তা কমিয়ে দেবে এবং কিছু গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা গবেষণা কর্মসূচি বন্ধ করে দিতে বাধ্য করবে।