জাপানে মুবিনের ঈদুল আজহা

কাঁসার থালায় নেই সেই মাংসের ঘ্রাণ, মনে পড়ে মায়ের মুখ

মুনায়িম আহমেদ মুবিন
মুনায়িম আহমেদ মুবিন  © সংগৃহীত

ঈদের সকাল মানেই নতুন কাপড়, আতরের ঘ্রাণ, কুরবানির প্রস্তুতিতে মাতোয়ারা এক প্রভাত। কারও রান্নাঘরে ভুরিভোজের আয়োজন, কারও উঠানে গরু জবাইয়ের প্রস্তুতি। এই চিরচেনা দৃশ্য যখন শুধু স্মৃতিতে আটকে থাকে, তখন ঈদের আনন্দ হয়ে ওঠে একরকম নিঃসঙ্গ ভালোবাসার অভিব্যক্তি।

মুনায়িম আহমেদ মুবিন। গাজীপুরের টঙ্গীর মির্জা নাদিম, তা'মীরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসা থেকে আলিম পাস করে এখন জাপানের টোকিওতে গুনমা অটোমোবাইল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেন। কুরবানির ঈদে প্রিয়জনদের ছেড়ে হাজার মাইল দূরে থাকাটা কেমন অনুভূতি—তা জানাতে গিয়ে তিনি ফিরে গেলেন তার ছেলেবেলার ঈদে।

‘ঈদের সকাল মানেই মা-বাবার মুখ’—বলছিলেন মুবিন। “বাবা গরু কাটার যাবতীয় আয়োজন করতেন। হাট থেকে গরু আনা, কসাই ঠিক করা, আত্মীয়দের তদারকি। মা ছিলেন রান্নাঘরের রাণী। ঈদের দিনে ঘুম ভাঙার সঙ্গে সঙ্গে মায়ের হাঁড়ির শব্দ আর ঘ্রাণে যেন সারা বাড়ি ঈদের ছোঁয়ায় জেগে উঠত।

আরও পড়ুন: উচ্চ মাধ্যমিকের তিন সহপাঠীর অস্ট্রেলিয়ায় উচ্চশিক্ষা যেন বন্ধুত্বের অনন্য দৃষ্টান্ত

মনে পড়া স্মৃতির মধ্যে সবচেয়ে জ্বলজ্বলে—ঈদের সকালের সেই কাঁসার থালা। “সকালের খাবারটা ছিল ঈদের শুরু। গরম সেমাই আর নুডুলস যেতো কাঁসার থালায়। কোরবানির আগেই সবাই খেয়ে নিতাম। এরপর ছুটে যেতাম গরু কাটার দৃশ্য দেখতে, প্রথম মাংস কাটার অংশে হাত লাগানো নিয়ে বন্ধুদের মধ্যে হালকা প্রতিযোগিতা চলত।”

কিন্তু এখন? তিনি বললেন, “এখানে ঈদের সকালটা খুব ফাঁকা ফাঁকা লাগে। নামাজ হয়, কোরবানি হয়, ছবি তোলা হয়—কিন্তু যেন আবেগহীন এক আনুষ্ঠানিকতা। হৃদয় থেকে উৎসারিত 'ঈদ মোবারক' বলা হয় না। সেটা যেন শুধু ঠোঁটের উচ্চারণ মাত্র।”

ঈদের সকালে প্রথম ফোন কাকে? মুবিন হাসলেন, “মা’কে। ফোন ধরেই বললাম, ‘ঈদ মোবারক মা, কোরবানির গন্ধ পাইতেছি না!’ মা বললেন, ‘মন দিয়ে চোখ বন্ধ কর, গন্ধটা পাবি।’ জানি ওটা মায়ের ভালোবাসার অভিনয়, তবু চোখে জল এসে যায়।”

পরিবারও বুঝতে পারে মুবিনের অভাব। “মা বলেন, ‘তুই থাকলে এই গরুর নলি গুলো তোকেই দিতাম।’ বাবা বলেন, ‘আগামী ঈদে আসিস।’ এই ছোট ছোট কথা যে কতটা দরদভরা, তা হয়তো শুধু দূরে থাকা সন্তানেরাই টের পায়।”

আরও পড়ুন: হার্ভার্ডে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির নিষেধাজ্ঞা স্থগিত, ট্রাম্পের সিদ্ধান্তকে অবৈধ বলল আদালত

টোকিওতে ঈদের দিনটা কেমন যায়? “কয়েকজন বাংলাদেশি বন্ধু মিলে মসজিদে নামাজ পড়ি। কেউ রান্না করে আনে, অন্যদিকে সবাই মিলে একা সাথে বারবিকিউ করে, লেকের ধারে বসে খাওয়া-দাওয়া করি, ছবি তুলি, আড্ডা দেই। আনন্দ হয় ঠিকই, কিন্তু মনটা পড়ে থাকে বাংলাদেশের সেই উঠানে, যেখানে মা হাসেন, বাবা দাঁড়িয়ে থাকেন গরুর রশি ধরে।”

সবশেষে একটিই কথা বলেন মুবিন—“ঈদের দিনে সবাই কিছু না কিছু ভাগ করে নেয়—খাবার, গল্প, হাসি। কিন্তু হৃদয়ের শূন্যতা কেউ ভাগ করে নিতে পারে না। ঈদ শুধু উৎসব নয়—এটা মায়ের আঁচলে লুকানো ভালোবাসা, বাবার চোখে ভাসা গর্ব, ভাইবোনদের মাঝে লুকানো বন্ধন। এসব ছাড়া ঈদ যেন এক অসম্পূর্ণ গল্প।”


সর্বশেষ সংবাদ

X
APPLY
NOW!