ভিসি, প্রো-ভিসি ও ট্রেজারার—শীর্ষ তিন পদ পূরণে ব্যর্থ দেশের ১০১ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষ তিন পদের হালচাল
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষ তিন পদের হালচাল  © টিডিসি সম্পাদিত

উপাচার্য (ভিসি), উপ-উপাচার্য (প্রো-ভিসি) ও কোষাধ্যক্ষ (ট্রেজারার)—দেশের সরকারি কিংবা বেসরকারি যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ও অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম সঠিকভাবে চলতে এই তিনটি পদ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আইন অনুযায়ী, সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে এই তিন পদে নিয়োগ দেন দেশের রাষ্ট্রপতি, যিনি একইসঙ্গে সব বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্যের (চ্যান্সেলর) দায়িত্বও পালন করেন। কিন্তু দেশের ১১৬টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে বর্তমানে ভিসি ছাড়াই কার্যক্রম চলছে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৩৮টি। আর ভিসি, প্রো-ভিসি ও ট্রেজারার—শীর্ষ এই তিন পদ পূরণে ব্যর্থ দেশের ১০১টি বেসরকারি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

সম্প্রতি দেশের সরকারি ও বেসরকারি উচ্চশিক্ষার তদারক সংস্থা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) থেকে প্রকাশিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিয়োগকৃত উপাচার্য, উপ-উপাচার্য এবং কোষাধ্যক্ষদের সর্বশেষ তালিকা থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

অভিযোগ রয়েছে, বোর্ড অব ট্রাস্টিজের (বিওটি) সদস্যরা বিশ্ববিদ্যালয়কে নিজেদের মতো করে পরিচালনা করতে পছন্দের ব্যক্তিদের এসব পদে নিয়োগ দিতে নানা কৌশল অবলম্বন করেন। এটি করতে গিয়ে অযোগ্য ব্যক্তিদের নাম সরকারের কাছে সুপারিশের ফলে আটকে যায় এসব পদের নিয়োগ প্রক্রিয়া। যার ফলে একাধিক ইউনিভার্সিটি মালিকরা ভিসি, প্রো-ভিসি ও ট্রেজারার নিয়োগ না দিয়ে কিংবা ভারপ্রাপ্ত দিয়ে চালাচ্ছেন বছরের পর বছর। আবার প্রতিষ্ঠার পর থেকেই কোন ভিসি, প্রো-ভিসি কিংবা ট্রেজারার নিয়োগ হয়নি এমন বিশ্ববিদ্যালয়ের নামও রয়েছে এ তালিকায়। ইউজিসি এসব পদে নিয়োগ দিতে বারবার তাগাদা দিলেও তা আমলে নিচ্ছে না বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী, ভিসি, প্রো-ভিসি এবং ট্রেজারার এ তিনটি পদে নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য। তবে প্রাথমিক কাজটি করে থাকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ইউজিসির মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কাছ থেকে প্রস্তাব (প্যানেল) আসার পর তারাই সরকারের কাছে এসব পদে নিয়োগের জন্য প্রস্তাব পাঠায়। সেটি প্রধানমন্ত্রীর (প্রধান উপদেষ্টা) কার্যালয় হয়ে রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ে কাছে যায়।

আইন অনুযায়ী, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টিজ এই তিন পদে নিয়োগ দিতে একেকটি পদের বিপরীতে তিনজন অধ্যাপকের নামের প্রস্তাব শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। সেগুলোর ইউজিসির মাধ্যমে যাচাই করে সরকারের উচ্চপর্যায়ে পাঠায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সেখান থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য হিসেবে রাষ্ট্রপতি একজনকে নিয়োগ দেন।

ইউজিসির সর্বশেষ তথ্য থেকে জানা গেছে, বর্তমানে ১১৬টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এরমধ্যে মালিকদের মামলা সংক্রান্ত কারণে ৪টিতে সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এছাড়া অনুমোদন পাওয়ার পর ৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠদানের অনুমতি পায়নি।

ইউজিসির সর্বশেষ তথ্য বলছে, ১১৬টিতে শীর্ষ এ তিন পদের একজন নেই এমন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ১০১টি। এর মধ্যে ভিসি নেই ৩৮টিতে, প্রো-ভিসি নেই ৯২টিতে, আর ৪৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ে শূন্য রয়েছে ট্রেজারার পদ। অন্যদিকে, ভিসি, প্রো-ভিসি ও ট্রেজারার তিনটি পদই শূন্য এমন বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ২১টি। ইউজিসি বলছে, এ তালিকাটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। শিক্ষার্থী-অভিভাবকসহ সংশ্লিষ্টদের সুবিধার্তে এটি কয়েক মাস পরপর হালনাগাদ করা হয়ে থাকে। 

ভিসি, প্রো-ভিসি ও ট্রেজারার—শীর্ষ তিন পদে সবাই আছে এমন বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ১৫টি
ইউজিসির সর্বশেষ তথ্য মতে, ভিসি, প্রো-ভিসি ও ট্রেজারার—শীর্ষ তিন পদের একজন নেই এমন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ১০১টি। অন্যদিকে, ভিসি, প্রো-ভিসি ও ট্রেজারার—শীর্ষ তিন পদে সবাই আছে এমন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা মাত্র ১৫টি। এসব বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে-ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজি, আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম, আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি-বাংলাদেশ, ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভ, সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটি, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, সিটি ইউনিভার্সিটি, উত্তরা ইউনিভার্সিটি, বরেন্দ্র ইউনিভার্সিটি, নটরডেম বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ, কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ এবং ইউনিভার্সিটি অব গ্লোবাল ভিলেজ।

শীর্ষ তিন পদই শূন্য এমন বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ২১টি
ভিসি, প্রো-ভিসি ও ট্রেজারার—শীর্ষ তিন পদই শূন্যই আছে এমন বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ২১টি। এসব বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে-দি পিপলস ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, প্রাইমএশিয়া ইউনিভার্সিটি, রয়েল ইউনিভার্সিটি অব ঢাকা, নর্থ ইস্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, জেড এইচ শিকদার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, এক্সিম ব্যাংক কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, জার্মান ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি অব সাইন্স এন্ড টেকনোলজি, রূপায়ন এ. কে. এম. শামসুজ্জোহা ইউনিভার্সিটি, মাইক্রোল্যান্ড ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, ডা. মমতাজ বেগম ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, বাংলাদেশ আর্মি ইউনিভার্সিটি অফ সাইন্স এন্ড টেকনোলজি খুলনা, লালন বিজ্ঞান ও কলা বিশ্ববিদ্যালয়, জাস্টিস আবু জাফর সিদ্দিকী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গ্রামীন বিশ্ববিদ্যালয়, ইবাইস ইউনিভার্সিটি, দি ইউনিভার্সিটি অব কুমিল্লা, কুইন্স ইউনিভার্সিটি ‍এবং আমেরিকা বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি।

৩৮টিতে নেই ভিসি
যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসির পদ শূন্য রয়েছে, তারমধ্যে রয়েছে- দি পিপলস ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, প্রাইমএশিয়া ইউনিভার্সিটি, নর্দান ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, সাউদার্ণ ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, প্রাইমএশিয়া ইউনিভার্সিটি, ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, রয়েল ইউনিভার্সিটি অব ঢাকা, বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজি, নর্থ ইস্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, জেড এইচ শিকদার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, এক্সিম ব্যাংক কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, খাজা ইউনুস আলী বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি ইউনিভার্সিটি, কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, জার্মান ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, গ্লোবাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, সিসিএন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ আর্মি ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি সৈয়দপুর, বাংলাদেশ আর্মি ইউনিভার্সিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টেকনোলজি কাদিরাবাদ, বাংলাদেশ আর্মি ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি কুমিল্লা, নর্দান ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এন্ড টেকনোলজি, সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি, রূপায়ন এ. কে. এম. শামসুজ্জোহা ইউনিভার্সিটি, বান্দরবান বিশ্ববিদ্যালয়, ইউনিভার্সিটি অব স্কিল এনরিচমেন্ট এন্ড টেকনোলজি, মাইক্রোল্যান্ড ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, ডা. মমতাজ বেগম ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, বাংলাদেশ আর্মি ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি খুলনা, লালন বিজ্ঞান ও কলা বিশ্ববিদ্যালয়, জাস্টিস আবু জাফর সিদ্দিকী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গ্রামীন বিশ্ববিদ্যালয়, ইবাইস ইউনিভার্সিটি, দি ইউনিভার্সিটি অব কুমিল্লা, কুইন্স ইউনিভার্সিটি ‍এবং আমেরিকা বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি।

শিক্ষা কার্যক্রমের অনুমতি দেয়নি ৫ বিশ্ববিদ্যালয়ে
১১৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রমের অনুমতি দেয়নি ৫ বিশ্ববিদ্যালয়ে। এর মধ্যে রয়েছে রূপায়ন এ. কে. এম শামসুজ্জোহা বিশ্ববিদ্যালয়, শাহ মাখদুম ম্যানেজমেন্ট ইউনিভার্সিটি, মাইক্রোল্যান্ড ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্সেস অ্যান্ড টেকনোলজি, গ্রামীন বিশ্ববিদ্যালয় এবং জাস্টিস আবু জাফর সিদ্দিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। ইউজিসি বলছে, এসব বিশ্ববিদ্যালয় সাময়িক অনুমোদনপ্রাপ্ত, তবে শিক্ষা কার্যক্রম তথা শিক্ষার্থী ভর্তির অনুমতি অদ্যাবধি দেয়া হয়নি।

জানা গেছে, বর্তমানে ১১৬টি বেরসকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে মামলা চলমান থাকা নাম সর্বস্ব কিংবা বন্ধ হয়ে যাওয়া ৪টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে রয়েছে ইবাইস ইউনিভার্সিটি, দি ইউনিভার্সিটি অব কুমিল্লা, কুইন্স ইউনিভার্সিটি এবং আমেরিকা বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো একাডেমিক ও প্রশাসনিক কাজ চলমান নেই। ফলে সেখানে বর্তমানে সরকার কর্তৃক ভিসি, প্রো-ভিসি ও ট্রেজারার নিয়োগ দেওয়া হয়নি।


সর্বশেষ সংবাদ