করোনা: ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে টিউশন ফি নিয়ে চাপে অভিভাবকরা
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ১০ জুলাই ২০২০, ০৮:৪৪ AM , আপডেট: ০৩ মে ২০২১, ০১:০০ PM
নভেল করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। মহামারী এই প্রার্দুভাবের মধ্য দিয়েও টিউশন ফি নিয়ে চাপে রয়েছে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের অভিভাবকরা। প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষাবর্ষ গত জুনে শেষ হওয়ার পর শিক্ষার্থীদের অটো প্রমোশন দিয়ে টিউশন ফির জন্য চাপ দেয়া হচ্ছে। এদিকে বেতন পরিশোধ না করলে নতুন ক্লাসে নাম এন্ট্রি করাসহ এমনকি অনলাইন ক্লাস শুরু হওয়া স্কুলগুলোতেও অংশ নিতে দেয়া হচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে সামর্থ্য না থাকলেও অনেকটা বাধ্য হয়েই স্কুলের বেতন পরিশোধ করতে হচ্ছে অভিভাবকদের।
বর্তমান পরিস্থিতিতে এসব স্কুলে টিউশন ফি কমানো বা ফি মওকুফের দাবি করলেও সাড়া না পেয়ে উল্টো বিভিন্ন স্কুলের বিরুদ্ধে অভিভাবকদের হয়রানি করার অভিযোগও উঠেছে। অনলাইন ক্লাস শুরু করলেও অনেক শিক্ষার্থীকে লিংক না দেয়া, টিউশন ফি না দিলে রেজাল্ট প্রকাশ না করা, ই-মেইল পাঠিয়ে সন্তানকে ছাড়পত্র দেওয়া এবং মানববন্ধন করায় আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি এমন সব ঘটনায় অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়েছে এসব স্কুলে পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের।
উত্তরার বাসিন্দা, সাবেক সেনা কর্মকর্তা নুরুল চৌধুরীর তিন সন্তান পড়ে ভিন্ন দুটি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে। তাঁর মতে, স্কুলগুলো টিউশন ফি নিয়ে অনৈতিক আচরণ করছে। তিনি বলেন, অনেক স্কুল শিক্ষকদের বেতন কমিয়ে দিয়েছে। কিন্তু শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টিউশন ফি পুরোই নেওয়া হচ্ছে। অন্যদিকে অভিভাবকদের অনেকে চাকরি হারিয়েছেন, বাকিদের বেতন কমে গেছে। এই অবস্থায় স্কুলগুলোর বিবেকহীন আচরণে দিশাহারা অভিভাবকরা।
অভিভাবকরা বলছেন, এমনও ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল আছে যারা বছরে ৫০ থেকে ১০০ কোটি টাকা আয় করছে। অথচ এই বিশ্ব মহামারির সময়ে বিন্দুমাত্র ছাড় দিচ্ছে না এসব স্কুল। এমন সময় এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ও কোনো ভূমিকা পালন করছে না। তাহলে অভিভাবকরা কোথায় যাবেন?
এখন পর্যন্ত এসব ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলগুলোর মধ্যে এর আগে মাস্টারমাইন্ড স্কুল গত এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত ৫০ শতাংশ টিউশন ফি কমিয়েছে। এ ছাড়া অস্ট্রেলিয়ান ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, ব্রিটিশ স্ট্যান্ডার্ড স্কুলসহ হাতে গোনা কয়েকটি স্কুলও টিউশন ফি কমিয়েছে বলে জানা গেছে। তবে অভিভাবকরা শুধু তিন মাস নয়, পুরো করোনার সময়েই বেতন কমানোর দাবি জানিয়েছেন।
এর আগে উত্তরার দিল্লি পাবলিক স্কুলের (ডিপিএস) অভিভাবকরা মানববন্ধনে বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে সীমিত আকারে অনলাইনে ক্লাস চললেও বাসায় বসে ক্লাস নিচ্ছেন শিক্ষকরা। আর শিক্ষার্থীরা বাসায় থেকে ক্লাস করছে। তাই তাঁরা ৫০ শতাংশ টিউশন ফি দিতে আগ্রহী। আর যে সকল অভিভাবকের আর্থিক সংকট চলছে, শুধু তাঁদের মওকুফের দাবি করছেন তাঁরা। কিন্তু স্কুল কর্তৃপক্ষ অমানবিক আচরণ করছে। ই-মেইলে অভিভাবকদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে, বেতন পরিশোধ না করলে ফল প্রকাশ করা হবে না। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের অনলাইন ক্লাসের লিংক দেওয়া হচ্ছে না।
এছাড়াও আরও একটি স্কুল তিন মাসের জন্য ২০ শতাংশ বেতন কমালেও দুই দফায় মানববন্ধন করেছেন অভিভাবকরা। গত ২৯ জুন স্কুল কর্তৃপক্ষের নোটিশে বলা হয়, ‘সম্প্রতি কিছু বিবেকহীন সুবিধাবাদী অভিভাবক নামধারী ব্যক্তি অনৈতিক দৃষ্টিকটু কার্যকলাপ শুরু করেছেন। স্কুলের বেতন দিতে ইচ্ছুক অভিভাবকদের বাধাগ্রস্ত করেছেন, যা সম্পূর্ণ বেআইনি। এতে যাঁরা লিপ্ত, স্কুলের সিসিটিভি ফুটেজে তাঁদের ছবি আছে। স্কুল তাঁদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার অধিকার রাখে। স্কুলের প্রতি যে অভিভাবকরা অসন্তুষ্টি পোষণ করেন, তাঁদের প্রতি বিশেষ অনুরোধ রইল, আপনার মনের মতো স্কুল বেছে নিন।’
এদিকে স্কলাসটিকা স্কুলের প্যারেন্টস ফোরামের সভাপতি সৈয়দ মাসুদ রানা বলেন, ‘আমরা প্লে থেকে দ্বিতীয় শ্রেণি পর্যন্ত ৭৫ শতাংশ এবং তৃতীয় থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত ৬৫ শতাংশ বেতন কমাতে বলেছি। আমরা শুধু মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত নয়, পুরো করোনার সময়েই এই বেতন কমানোর কথা বলেছি। স্কুল কর্তৃপক্ষ আমাদের সঙ্গে আলোচনা করলেও এখনো তাদের সিদ্ধান্ত জানায়নি।’
বাংলাদেশ ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও গ্রিন জেমস ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের অধ্যক্ষ জি এম নিজাম উদ্দিন বলেন, ‘এমন পরিস্থিতিতে উভয় পক্ষকেই কিছুটা ছাড় দিতে হবে। সরাসরি ক্লাস না হওয়ায়, স্কুলগুলোর খরচও কমেছে। যারা একেবারেই অনলাইন ক্লাস করেনি, তাদের জন্য তো টিউশন ফি কম নেওয়া আরো সহজ। আর যেসব অভিভাবকের পক্ষে সম্ভব তাঁদের টিউশন ফি পরিশোধ করা উচিত। তবে কোনোভাবেই টিউশন ফির প্রভাব যেন শিক্ষার্থীদের ওপর না পড়ে সে ব্যাপারে খেয়াল রাখা উচিত।’
সম্প্রতি ঢাকা শিক্ষা বোর্ড থেকে এক আদেশে টিউশন ফি আদায়ে চাপ প্রয়োগ না করার জন্য প্রতিষ্ঠানপ্রধানদের বলা হয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দিলে বা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এলে বকেয়াসহ মাসিক বেতন আদায়ের অনুরোধ জানানো হয় আদেশে। কিন্তু এই আদেশের বাস্তবায়ন হচ্ছে কি না সে বিষয়ে তাদের কোনো তদারকি নেই।