দক্ষতার সঙ্গে আদর্শ মানুষ তৈরিতেও প্রতিজ্ঞাবদ্ধ মানারাত স্কুল অ্যান্ড কলেজ

মানারাত ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ
মানারাত ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ  © সম্পাদিত

মানারাত ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ (এমডিআইসি); প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে আদর্শ মানুষ তৈরিতে আপ্রাণ চেষ্টা যাদের। ঢাকার গুলশানে মানারাত ট্রাস্ট কর্তৃক ১৯৭৯ সালে প্রতিষ্ঠিত স্কুলটি প্লে-গ্রুপ থেকে অ্যাডভান্স লেভেল পর্যন্ত শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে রাজধানী ও দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা প্রায় ৪ হাজার শিক্ষার্থী এবং আড়াইশ’ শিক্ষক নিয়ে চলছে প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার বাইরে মানারাত শিক্ষার্থীদের দক্ষতা, নৈতিক শিক্ষা ও আদর্শবান মানুষ হিসেবে তৈরিতে জোর দেয়।

এছাড়াও শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়ন ও শরীর চর্চায়ও বিশেষ নজর রাখছে প্রতিষ্ঠানটি। সম্প্রতি ঢাকার ১৮ টি স্কুলের অংশগ্রহণে ফুটবল টুর্নামেন্টের আয়োজন করে মানারাত স্কুল অ্যান্ড। তিন ক্যাটাগরির এই টুর্নামেন্ট জমজমাট আয়োজনের মধ্যে দিয়ে শেষ হয় গত ১১ জানুয়ারি।

শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মানারাত স্কুল অ্যান্ড কলেজ ঢাকার ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলগুলোর মধ্যে অন্যতম। স্কুলের সাবেক শিক্ষার্থীরা ইতোমধ্যে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে অত্যন্ত সুনামের সঙ্গে কাজ করছেন।

এমডিআইসি-তে রয়েছে ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য পৃথক খেলার মাঠ;  যে বিষয়টি প্রতিষ্ঠানটিকে স্বতন্ত্র রূপ দিয়েছে।

কথা হয় প্রতিষ্ঠানটির বাংলা বিষয়ের সিনিয়র লেকচারার হিসেবে কর্মরত সাইফুর রহমানের সঙ্গে। দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা মানারাত থেকে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার বাইরে আদর্শ ও নৈতিকতা অর্জন করতে পারে।  ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলগুলোতে একটা নেতিবাচক প্রবণতা দেখা যায়, শিক্ষার্থীদের নৈতিক স্খলন হয় বেশি। হাই ক্লাস পরিবারের অভিভাবকরাও সন্তানদের নৈতিকতা রক্ষা নিয়ে অনেক চিন্তিত থাকেন। একমাত্র মানারাত এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। আমরা শিক্ষার্থীদের প্রথমে মানুষ হিসেবে গড়তে কাজ করি।

কলেজ থেকে এ লেভেল শেষ করে সম্প্রতি উচ্চশিক্ষার জন্য ফুল টিউশন ফি ওয়েভার পেয়ে ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাসে ভর্তির অফার পেয়েছেন এখানকার শিক্ষার্থী রাফাত শামস। তিনি বলেন, ‘আমার উচ্চশিক্ষা যাত্রায় মানারাত অনেক বেশি সহযোগিতা করেছে। আবেদন প্রক্রিয়া থেকে বিশ্ববিদ্যালয় বাছাই সবক্ষেত্রে মানারাত সহযোগিতা করে। আমি নতুনদের বলতে চাই, তোমরা ভালো করতে চাইলে মানারাতে আসো।’

‘আমার উচ্চশিক্ষা যাত্রায় মানারাত অনেক বেশি সহযোগিতা করেছে। আবেদন প্রক্রিয়া থেকে বিশ্ববিদ্যালয় বাছাই সবক্ষেত্রে মানারাত সহযোগিতা করে। নতুনদের বলতে চাই, তোমরা ভালো করতে চাইলে মানারাতে আসোযুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাসে চান্স পাওয়া এমডিআসি শিক্ষার্থী

স্কুলের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী শাহ শেহজাদ বলেন, আমি মনে করি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলগুলোর মধ্যে মানারাত একমাত্র ব্যতিক্রম। যারা শিক্ষার্থীদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাক্টিভিটিস করার সুযোগ দেয়। আমি নিয়মিত উপস্থাপনায় পারদর্শী। এটার জন্য মানারাতকে ধন্যবাদ দিতে চাই। এই উপস্থাপনার দক্ষতা নতুন মানুষের সাথে যোগাযোগের দক্ষতা বাড়ায়। পাশাপাশি খেলাধুলায় অন্য স্কুলের চেয়ে মানারাত শ্রেষ্ঠ বলে মনে করি।

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাসে চান্স পাওয়া এমডিআসি শিক্ষার্থী রাফাত শামস। ছবি: টিডিসি

গুলশান লেকের ধারে নিরিবিলি ও মনোরম পরিবেশে অবস্থিত মানারাত ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ। প্রতিষ্ঠালগ্নে ভাড়া বাড়িতে কার্যক্রম শুরু করলেও বর্তমানে ২ দশমিক ৭ একর জমিতে তিনটি বহুতল ভবন এবং দুটি বড় খেলার মাঠ রয়েছে।

দক্ষ নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে মানারাত ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ শিক্ষার্থীদের বিতর্ক এবয় খেলাধুলায় রয়েছে বর্ণাঢ্য ইতিহাস। ২০০৮ সালে নয়াদিল্লিতে সার্ক বিতর্ক চ্যাম্পিয়নশিপে রানার্স-আপ, ২০০৬ সালে ওয়েলস, যুক্তরাজ্য এবং প্রথম বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ বিতর্ক প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছিল প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীরা।

মানারাত একটি ইউনিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, যেখানে প্লে থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ইসলামিক স্টাডিজ বাধ্যতামূলক এবং ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত আরবি ভাষা বাধ্যতামূলক। অধ্যক্ষের ভাষ্য, এমন শিক্ষা ব্যবস্থার সুফলও পাচ্ছে মানারাত স্কুল।

এছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। এছাড়াও মানারাত ফুটবল দল চীনে অনুষ্ঠিত গোথিয়া কাপ-২০১৬ অংশগ্রহণ করে এবং দল মানারাত গ্রুপ ৪-এ তৃতীয় স্থানে পৌঁছে প্লে-অফ বি-তে অব্যাহত রাখে। প্লে-অফে তারা সেমি ফাইনালে জায়গা করে নেয়।

শিক্ষা ও সহশিক্ষা সংক্রান্ত নানাদিক নিয়ে ব্রিটিশ কাউন্সিলের সঙ্গে কাজ করে এমডিআইসি। ছবিতে অধ্যক্ষ ও শিক্ষার্থীরা

কলেজের বর্তমান অধ্যক্ষ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এস এম মাহবুব-উল-আলম জানান, শুধু শিক্ষা নয়। শিক্ষা ও অন্যান্য কার্যক্রমে সফলতার চমৎকার ইতিহাস রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির।

তিনি বলেন, ঢাকায় বেশিরভাগ স্কুলের বড় কোনো খেলার মাঠ নেই। মানারাত ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ এমন একটি পরিবেশ তৈরি করতে চায় যেখানে শিক্ষর্থীরা মাদক এবং অন্যান্য অপরাধের সাথে যুক্ত হওয়ার প্রবণতা থেকে ফিরে আসে। আমরা সেটা করতেও পেরেছি। গত এক দশক থেকে মানারাত স্কুল অত্যন্ত সুনামের সাথে এই টুর্নামেন্ট আয়োজন করছে। এবারের টুর্নামেন্টে ঢাকার বিভিন্ন এরিয়ার ১৮টি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল অংশ নিয়েছে। উৎসবমুখর পরিবেশে আমরা সব খেলার আয়োজন সম্পন্ন করতে পেরেছি। সবার মাঝে সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ তৈরি করতে আমাদের এই আয়োজন। শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা এবং মানসিক স্বাস্থ্য উন্নতিতে এটা অনেক বড় অবদান রাখে।

‘‘মানারাত স্কুল অ্যান্ড কলেজ সবসময় শিক্ষার্থীদের নৈতিক মূল্যবোধ দৃঢ় রেখে মানসম্মত শিক্ষা প্রদান করতে দৃঢ়। আমাদের মূল উদ্দেশ্য ব্যবসা নয়, বরং আদর্শ নাগরিক তৈরিতে অবদান রেখে যাওয়া। ১৯৭৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত মানারাত স্কুল আদর্শ নাগরিক তৈরির কাজটি অত্যন্ত সুনিপুণভাবে করে আসছে।’’ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এস এম মাহবুব-উল-আলম, অধ্যক্ষ, এমডিআইসি

অধ্যক্ষ আরো বলেন, মানারাত স্কুল অ্যান্ড কলেজ সবসময় শিক্ষার্থীদের নৈতিক মূল্যবোধ দৃঢ় রেখে মানসম্মত শিক্ষা প্রদান করতে দৃঢ়। আমাদের মূল উদ্দেশ্য ব্যবসা নয়, বরং আদর্শ নাগরিক তৈরিতে অবদান রেখে যাওয়া। ১৯৭৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত মানারাত স্কুল আদর্শ নাগরিক তৈরির কাজটি অত্যন্ত সুনিপুণভাবে করে আসছে। বাংলাদেশে ইংলিশ এবং আরবি ভাষাকে একসাথে প্রদান করার যে ধারণা প্রচলিত রয়েছে এর শুরু করেছিল মানারাত।আমাদের মূল উদ্দেশ্য হল শিক্ষার্থীরা যেন কোরআনিক জ্ঞান নিয়ে আদর্শ জীবনধারণ করতে পারে।

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এস এম মাহবুব-উল-আলম, অধ্যক্ষ, এমডিআইসি। ছবি: টিডিসি

এস এম মাহবুব-উল-আলম আরো বলেন, মানারাত একটা ইউনিক স্কুল, যেখানে প্লে থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ইসলামিক স্টাডিজ বাধ্যতামূলক এবং ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত আরবি ভাষা বাধ্যতামূলক। আমরা শিক্ষার্থীদের বৈশ্বিক নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। এর সুফলও পাচ্ছে মানারাত স্কুল।

এমডিআইসি-তে ক্ষুদে শিক্ষার্থীরা। ছবি: কলেজ ওয়েবসাইট

অধ্যক্ষের ভাষ্য, প্রতিবছর বহির্বিশ্বের বিভিন্ন ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে মানারাত স্কুলের শিক্ষার্থীরা উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় উচ্চশিক্ষার জন্য পাড়ি জমায়। উচ্চশিক্ষায় পাড়ি জমানোর এই হার ক্রমাগত বাড়ছে। এছাড়া প্রযুক্তি ও বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষার্থীদের যোগ্য করে তুলতে সমান প্রচেষ্ট মানারাত ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল স্কুল। প্রতিটি প্রতিযোগিতায় মানারাতের শীর্ষস্থান তারই প্রমাণ।


সর্বশেষ সংবাদ