প্রকৌশল গুচ্ছে ভর্তি যাদের শুধু স্বপ্নই থেকে গেল
- আরিফুল ইসলাম তামিম
- প্রকাশ: ২৪ এপ্রিল ২০২১, ০৯:৫৩ AM , আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০২১, ০৯:৫৩ AM
মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করা বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির স্বপ্ন জুড়ে থাকে দেশসেরা প্রতিষ্ঠান বুয়েট, চুয়েট, রুয়েট ও কুয়েটের মতো ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ করেই কঠিন ভর্তি যুদ্ধে নামতে হয় এসব ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের। তবে পাবলিক এ পরীক্ষায় এবার ‘অটো পাস’ দেওয়ায় এসব ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার আগেই স্বপ্ন ভঙ্গ হচ্ছে কয়েক হাজার শিক্ষার্থীর।
তথ্য মতে, করোনা মহামারির কারণে গেল বছর ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা ছাড়াই এইচএসসি পরীক্ষায় শতভাগ উত্তীর্ণ ঘোষণা করে সরকার। আর এতেই সবকিছু প্রেক্ষাপট এলোমেলো হয়ে যায়। ‘অটো পাসে’ শতভাগ শিক্ষার্থী পাশ করার ফলে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি বিজ্ঞপ্তিতে এসেছে ব্যপক পরিবর্তন। যার প্রভাব গিয়ে পড়ছে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের উপর।
সম্প্রতি ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয় বুয়েট, বুটেক্সের পর ভর্তি আবেদন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে তিন গুচ্ছ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় চুয়েট, রুয়েট ও কুয়েট। এবার প্রথমবারের মতো এসব সরকারি প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার প্রকাশিত আবেদন বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী অনেক শিক্ষার্থী প্রস্তুতি গ্রহণ করেও পারছেনা আবেদন করতে। এতেই ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন শিক্ষার্থীরা। গুচ্ছ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি আবেদন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পরপরই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে শিক্ষার্থীদের হতাশা প্রকাশ করতে দেখা যায়।
রাসেল আহমেদ নামে রাজশাহী বোর্ড থেকে ভর্তিচ্ছু এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘অটো পাস’ আমাদের জন্য অভিশাপ হয়ে এসেছে। ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিতে অন্যান্য বার গণিত, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন ও ইংরেজী বিষয়ে মোট গ্রেড পয়েন্ট সাড়ে ১৭, ১৮ কিংবা সাড়ে ১৮ লাগতো কিন্তু এবার তিন গুচ্ছ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করতে ২০.০০ পয়েণ্ট পেতে হবে। তাই আমার মতে অনেক শিক্ষার্থীর ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়াতো দূরের কথা, আবেদনও করতে পারবো না।
আরেক ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী অর্নব হোসেন বলেন, ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য এতদিন প্রস্তুতি নিয়েছি। কিন্তু আবেদন যোগ্যতায় পরিবর্তন আসায় বুয়েট, বুটেক্সে এগুলোতে আবেদন করতে পারিনি। আশা-ভরসার পুরোটাই ছিলো গুচ্ছ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপর। কিন্তু প্রকাশিত ভর্তি আবেদন বিজ্ঞপ্তিতে রীতিমতো হতাশ হয়েছি। এখানেও আবেদন করতে পারছি না। এমতাবস্থায় সব হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছি৷আবেদন বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী আবেদন করতে হলে বিজ্ঞান বিভাগে পদার্থবিজ্ঞান, রসায়নবিজ্ঞান, উচ্চতর গণিত ও ইংরেজিতে জিপিএ-৫ থাকতে হবে৷ কিন্তু এবার অটোপাশ না হলে হয়তো অনেকের ফলাফল চিত্র ভিন্ন হতো। সেক্ষেত্রে সিলেকশন পদ্ধতি গ্রহনযোগ্য হলেও এবার অটোপাশের ফলাফলের ক্ষেত্রে সিলেকশন পদ্ধতি কতটা যৌক্তিক সেটি আরেকবার কর্তৃপক্ষকে ভেবে দেখা উচিত।
ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী ইশরাকুল তাহমিদ বলেন, ‘অটো পাসে’ যেন বলির পাঠা হচ্ছি আমরা। মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী বলেছিলেন চাকরির ক্ষেত্রে বা কোথাও ‘অটো পাসে’র কোনো প্রভাব পড়বে না। কিন্তু এখন দেখছি সম্পূর্ণ বিপরীত চিত্র। চাকরির ক্ষেত্র তো দূরের বিষয় এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার জন্যই আবেদন করতে পারছিনা। অটো প্রমোশনের ফলাফলের ভিত্তিতে করা সিলেকশন পদ্ধতি সবকিছু তছনছ করে দিয়েছে।
চট্টগ্রাম থেকে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী ফাহিম বলেন, এবার এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয় জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে৷এইচএসসি পরীক্ষা না হওয়ার বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা হতে পারে মেধা যাচাইয়ের অন্যতম পন্থা। কিন্তু বুয়েট, বুটেক্সের পর এবার গুচ্ছ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়েও এইচএসসি পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে আবেদন বিজ্ঞপ্তিতে ভর্তি যোগ্যতার শর্ত বেঁধে দিয়েছে। এসএসসি আর এইচএসসি পরীক্ষা আকাশ-পাতাল তফাৎ।কিন্তু এবার এইচএসসি পরীক্ষার ফলের উপর ভিত্তি করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করায় আবেদন যোগ্যতা অনুযায়ী আমার মতো হাজারো স্বপ্নবাজ শিক্ষার্থীর কাছে ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয় শুধু স্বপ্নই রয়ে গেল।
আরেক শিক্ষার্থী ইব্রাহীম খলিল বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়া পরের বিষয়, এখন পরীক্ষায় অংশগ্রহণই করতে পারছিনা। আমি বুয়েটে আবেদন করতে পারলেও আবেদন বিজ্ঞপ্তির ভিন্নতার ফলে গুচ্ছ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করতে পারছিনা। আমার মতো এমন অনেক শিক্ষার্থীই আছে। সিলেকশন পদ্ধতি বাতিল করা উচিত। কারণ এইচএসসি পরীক্ষা না হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের মেধা যাচাই করা যেতে পারে।
কেন্দ্রীয় ভর্তি কমিটির মতে, এবার এইচএসসি পরীক্ষায় ‘অটো পাস’ দেওয়ায় সব শিক্ষার্থীকে ভর্তি পরীক্ষায় বসার সুযোগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এজন্য এবছর আবেদনে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের নতুন করে শর্ত দেওয়া হয়েছে। ভর্তি কেন্দ্রীয় ভর্তি কমিটির সদস্য সচিব ও চুয়েটের প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মইনুল ইসলাম জানান, যোগ্য আবেদনকারীর মধ্য হতে উচ্চ মাধ্যমিক বা সমমানের পরীক্ষায় গণিত, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন এবং ইংরেজী বিষয়ের মোট প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে প্রথম ৩০ হাজার প্রার্থীকে এই ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়া হবে।
জানা গেছে, এবার প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া দেশের তিন সরকারি প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার আবেদন শুরু হয়েছে আজ শনিবার (২৪ এপ্রিল)। সকাল ৯টা থেকে অনলাইনের মাধ্যমে এ কার্যক্রম শুরু হয়ে চলবে আগামী ৮ মে বিকেল ৫টা পর্যন্ত।
ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য আবেদনের যোগ্যতা
১) প্রার্থীকে ২০২০ সালে উচ্চ মাধ্যমিক বা সমমানের পরীক্ষায় পাশ হতে হবে অথবা ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২০ সালের আগস্ট এর মধ্যে এ লেভেল সার্টিফিকেট প্রাপ্ত হতে হবে।
২) বাংলাদেশের যে কোন মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড/মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড/কারিগরি শিক্ষা বোর্ড থেকে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীকে ২০১৭ অথবা ২০১৮ সালের মাধ্যমিক বা সমমানের পরীক্ষায় কমপক্ষে জিপিএ ৪.০০ পেতে হবে অথবা সমমানের পরীক্ষায় কমপক্ষে সমতুল্য গ্রেড পেতে হতে হবে।
৩) বাংলাদেশের যে কোন মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড/মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড/কারিগরি শিক্ষা বোর্ড থেকে উচ্চ মাধ্যমিক/আলীম/সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীকে গণিত, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন ও ইংরেজী বিষয়ের প্রত্যেকটিতে আলাদাভাবে গ্রেড পয়েন্ট ৫.০০ পেতে হবে অর্থাৎ গণিত, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন ও ইংরেজী বিষয়ে মোট গ্রেড পয়েন্ট ২০.০০ পেতে হবে। ইংরেজী ভার্সন/বিদেশী শিক্ষা বোর্ড থেকে সমমানের পরীক্ষায় উক্ত বিষয়সমূহে কমপক্ষে সমতুল্য গ্রেড পেতে হবে। এছাড়া বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ভর্তি হতে হলে সংশ্লিষ্ট প্রার্থীকে উচ্চ মাধ্যমিক বা সমমানের পরীক্ষায় জীববিজ্ঞানে কমপক্ষে গ্রেড পয়েন্ট ৪.০০ পেতে হবে।
৪) প্রার্থী ও এবং এ লেভেল পাশ করে থাকলে, তার ক্ষেত্রে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহনের জন্য ও লেভেল পরীক্ষায় গণিত, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন ও ইংরেজী বিষয়ে আলাদাভাবে এ গ্রেড পেতে হবে। এ লেভেল পরীক্ষায় পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন ও গণিত বিষয়ে আলাদাভাবে এ গ্রেড পেতে হবে। এছাড়া বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ভর্তি হতে হলে সংশ্লিষ্ট প্রার্থীকে এ লেভেল পরীক্ষায় জীববিজ্ঞানে কমপক্ষে বি গ্রেড পেতে হবে।
৫) প্রার্থীকে কমপক্ষে ১২ শিক্ষাবর্ষ অধ্যয়নকাল থাকা সাপেক্ষে বিদেশী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ২০২০ সালের উচ্চ মাধ্যমিক/সমমানের পরীক্ষায় গণিত, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন ও ইংরেজী বিষয়ের প্রত্যেকটিতে আলাদাভাবে কমপক্ষে ৮০% বা সমমানের গ্রেড পেতে হবে। প্রার্থীকে মাধ্যমিক/সমমানের পরীক্ষায় গড়ে কমপক্ষে ৭০% বা সমমানের গ্রেড পেতে হবে।
৬) যোগ্য আবেদনকারীর মধ্য হতে উচ্চ মাধ্যমিক বা সমমানের পরীক্ষায় গণিত, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন এবং ইংরেজী বিষয়ের মোট প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে প্রথম ৩০ হাজার প্রার্থীকে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়া হবে।
৭) ন্যূনতম যোগ্যতা পূরণ সাপেক্ষে এ লেভেল ও ও লেভেল এবং সংরক্ষিত আসনের জন্য সকল আবেদনকারী ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহনের জন্য যোগ্য বলে বিবেচিত হবে।