সাবেক ভিসির পদত্যাগের এক বছর, বিচার না পাওয়ায় আক্ষেপ শিক্ষার্থীদের
- ফাতেমা-তুজ-জিনিয়া, বশেমুরবিপ্রবি
- প্রকাশ: ০১ অক্টোবর ২০২০, ১০:০৯ PM , আপডেট: ০৩ অক্টোবর ২০২০, ১১:৪৪ AM
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বশেমুরবিপ্রবি) তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. খোন্দকার নাসিরউদ্দিন শিক্ষার্থীদের গণ আন্দোলনের মুখে ২০১৯ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পদত্যাগ করেছিলেন। উপাচার্যের পদত্যাগের এক বছরেও তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের বিচার না হওয়া আক্ষেপ প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা।
উপাচার্যের পদত্যাগের এক বছর পর নিজেদের অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে শিক্ষার্থীরা জানান, ‘উপাচার্য পদত্যাগ করলেও তাদের প্রত্যাশা এখনও পুরোপুরি পূরণ হয়নি’।
বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী রেহনুমা তাবাসসুম বলেন, আমরা দীর্ঘদিন খোন্দকার নাসিরউদ্দিনের স্বৈরাচারী আচরণের শিকার হয়েছি। একের পর এক দুর্নীতি করে যাচ্ছিলেন তিনি। এসবের প্রেক্ষিতেই একপর্যায়ে আমরা তার বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করি। টানা ১২ দিন রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে আমরা আন্দোলন করেছি। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে তিনি পদত্যাগ করলেও তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের কোন বিচার হয়নি।
বশেমুরবিপ্রবির সাবেক এই উপাচার্যের বিরুদ্ধে স্বৈরাচারী আচরণ, শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি, শিক্ষার্থী ভর্তিতে দুর্নীতি, নারী কেলেঙ্কারিসহ প্রায় ১৪টি অভিযোগ এনে আন্দোলনে নামে শিক্ষার্থীরা। ২০১৯ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে শিক্ষার্থীদের এ আন্দোলন শুরু হয়। পরে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের গঠিত তদন্ত কমিটি উপাচার্যের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের সত্যতা পেয়ে তার পদত্যাগ সুপারিশ করেন। টানা ১২ দিন আন্দোলনের পর ৩০ সেপ্টেম্বর পদত্যাগ করেন তিনি।
আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থী আঞ্জুমান আরা আঁখি বলেন, খোন্দকার নাসিরউদ্দিনের পদত্যাগের পর আমরা বাকস্বাধীনতা ফিরে পেয়েছি। তবে গত এক বছর বিশ্ববিদ্যালয়ে একের পর এক আন্দোলন, মারামারির ঘটনা, শিক্ষকদের হুমকি দেয়ার ঘটনা দেখে হতাশাগ্রস্ত হয়ে গিয়েছিলাম। আশা করি নতুন উপাচার্য এসকল সমস্যার সমাধান করবেন।
আঁখি বলেন, সাবেক এ উপাচার্যের বিরুদ্ধে এত দুর্নীতি আর অনিয়মের অভিযোগ থাকার পরেও তার বিচার না হওয়াটা মেনে নেয়া যায় না। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির যথেষ্ট প্রমান ছিল। এ ধরনের লোকদের বিচারের আওতায় আনা জরুরি। যাতে তাদের দেখে অন্যরা এসব গুরুত্বপূর্ণ চেয়ারে বসে দূর্নীতি করার সাহস করতে না পারে।
এদিকে, ২০১৯ সালের ১৩ নভেম্বর সাবেক উপাচার্য খোন্দকার নাসিরউদ্দিনের বিরুদ্ধে ওঠা অর্থ আত্মসাৎ ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানের উদ্দেশ্যে দুদক পরিচালক শেখ মো. ফানাফিল্যাহকে অভিযোগের অনুসন্ধান কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ করে কমিশন। এ বিষয়ে শেখ মো. ফানাফিল্যাহর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ড. আব্দুর রহিম খান বলেন, “যতদূর জানি সাবেক উপাচার্যের বিষয়ে দুদক অনুসন্ধান করছে। দুদক তার বিরুদ্ধে এবং অনিয়মের প্রমাণ পেয়েছে কিনা এ সম্পর্কে এখনও জানি না। আমরা শুধু চাই কেউ অপরাধ করলে সে যেন ছাড় না পায়; তার বিচার হোক।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. হাসিবুর রহমান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘‘সাবেক উপাচার্যের বিভিন্ন দুর্নীতি এবং অনিয়মের কথা আমরা কমবেশি সকলেই জানি। কিন্তু একজন ব্যক্তি নাসিরউদ্দিনের পক্ষে তো একাই এমন করা সম্ভব নয়। যারা তাকে এসব দুর্নীতি করতে সহযোগিতা করেছে, তাদেরকেও বিচারের আওতায় আনা জরুরি।’’