ভর্তি পরীক্ষার জন্য বুয়েটের আন্দোলন ২ দিন শিথিল
- ঢাবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ১২ অক্টোবর ২০১৯, ০২:২৬ PM , আপডেট: ১২ অক্টোবর ২০১৯, ০৫:০৫ PM
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) প্রথমবর্ষ স্নাতক (সম্মান) শ্রেণীর ভর্তি পরীক্ষা উপলক্ষে আগামীকাল ১৩ অক্টোবর এবং পরশু ১৪ অক্টোবর আন্দোলন শিথিল করার কথা জানানো হয়েছে। আজ বেলা আড়াইটার বুয়েটের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে এক সাংবাদিক সম্মেলনে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে ১৫তম ব্যাচের মাহমুদুর রহমান সায়েম এ ঘোষণা ঘোষণা দেন।
১৩ ও ১৪ অক্টোবর আন্দোলন শিথিলের ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেন, ‘ভর্তি পরীক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে এবং গতকালের দেওয়া পাঁচ দফা দাবির বিষয়ে প্রশাসনের দৃশ্যমান পদক্ষেপ দেখে আস্থা ফিরেছে শিক্ষার্থীদের। এ কারণে আন্দোলন শিথিলের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
সায়েম বলেন, ‘এই দুদিন তারা ক্যাম্পাসে অবস্থান করবেন। কিন্তু ভর্তি পরীক্ষার পরিবেশ বজায় রাখবে এবং পরীক্ষার্থীদের সার্বিক সহায়তা করবে।’
এসময় ১০ দফা দাবির বিষয়ে আন্দোলন প্রসঙ্গে আগামী দুদিনের পরিপ্রেক্ষিত সাংবাদিক সম্মেলন করে বিস্তারিত জানাবেন বলেও ঘোষণা দেন সায়েম। তিনি বলেন, ‘দশ দফার আন্দোলন চলমান। শুধু পাঁচ দফার বিষয়ে দৃশ্যমান পদক্ষেপ দেখে এবং ভর্তিচ্ছুদের কথা বিবেচনা করে দুদিনের জন্য আন্দোলন শিথিল করা হয়েছে।’
এর আগে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের পাঁচ দফা মেনে নিয়ে নোটিশ প্রকাশ করে বুয়েট প্রশাসন। শনিবার দুপুরে দাবি মেনে নিয়ে বিভিন্ন ভবনে লিখিত নোটিশ টানিয়ে দেয়া হয়। আসন্ন ভর্তি পরীক্ষার আগেই এই পাঁচ দাবি মেনে নেয়ার দাবিতে বুয়েটে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের ৫ দাবির মধ্যে ছিল-
১. আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডে জড়িত সবাইকে সাময়িক বহিষ্কার করতে হবে। যাদের বিরুদ্ধে চার্জশিট হবে, তাদের স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হবে মর্মে বুয়েট প্রশাসন থেকে নোটিস জারি করতে হবে।
২. আবরার হত্যা মামলার সব খরচ বুয়েট প্রশাসন বহন করবে এবং তার পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বাধ্য থাকবে, সেটাও নোটিসে লেখা থাকবে।
৩. বুয়েটে সাংগঠনিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করে সব হল থেকে অবৈধ ছাত্র উৎখাত করতে হবে। সাংগঠনিক ছাত্র সংগঠনগুলোর অফিস রুম সিলগালা করতে হবে। সাংগঠনিক ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের পর ভবিষ্যতে কেউ যদি এ রকম সাংগঠনিক কার্যক্রমে জড়িত হয় কিংবা কোনো রকম ছাত্র নির্যাতনে জড়িত হয়, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কী ব্যবস্থা নেবে- তা বিস্তারিত জানিয়ে নোটিস জারি করতে হবে।
পরবর্তীতে এটি যে অর্ডিন্যান্সে অন্তর্ভুক্ত থাকবে, তা নোটিসে উল্লেখ থাকতে হবে। পাশাপাশি, এ ধরনের কার্যক্রম তদারকির জন্য একটি কমিটি করতে হবে এবং কমিটি গঠনের বিষয়টিও নোটিসে উল্লেখ করতে হবে।
৪. বুয়েটে পূর্বে ঘটে যাওয়া সব ছাত্র নির্যাতন, হয়রানি, র্যাগিংয়ের ঘটনা এবং ভবিষ্যতে এরকম ঘটনা প্রকাশের জন্য বিআইআইএস অ্যাকাউন্টে একটি কমন প্ল্যাটফর্ম থাকতে হবে। বিষয়টি মনিটরিংয়ের মাধ্যমে শাস্তি বিধানের জন্য একটি কমিটি থাকতে হবে। বিষয়টি নোটিসের মাধ্যমে নিশ্চিত করতে হবে।
৫. প্রত্যেক হলের সব ফ্লোরের দুই পাশে সিসি ক্যামেরা যুক্ত করতে হবে এবং এই সিসিটিভি ফুটেজ সার্বক্ষণিক মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা করা হবে- এই মর্মে নোটিস আসতে হবে।
এই ৫ দাবির প্রেক্ষিতে আলাদাভাবে ৫ টি নোটিশ প্রকাশ করেছে বুয়েট প্রশাসন। প্রথম নোটিশে বলা হয়েছে, আবরার হত্যা মামলার সকল আসামীকে সাময়িক বহিষ্কার করা হলো। পরবর্তীতে শৃঙ্খলা কমিটি ও সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্তের আলোকে তাদেরকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হবে। পরবর্তীতে যদি এই মামলায় আরও কেউ সাজাপ্রাপ্ত হয় তাহলে তাকেও স্থায়ী বহিষ্কার করা হবে।
দ্বিতীয় নোটিশে বলা হয়েছে, আবরার ফাহাদ হত্যা মামলা চলাকালীন সমস্ত খরচ বুয়েট প্রশাসন বহন করবে এবং আবরার ফাহাদের পরিবারকে প্রয়োজনীয় অর্থ সহায়তা দেবে।
তৃতীয় নোটিশে বলা হয়েছে, যারা অবৈধভাবে বুয়েটের আবাসিক হলের সিট দখল করে আছে তাদেরকে দ্রুতই বের করে দেয়া হবে এবং হলে ছাত্রসংগঠনের অফিস সিলগালা করা হবে। এজন্য ছাত্রকল্যাণ উপদেষ্টাকে নির্দশ দেয়া হয়েছে।
আজ ১২ অক্টোবর থেকেই এ কার্যক্রম শুরু হবে। কেই বাদা দেয়ার চেষ্টা করলে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এছাড়া, পরবর্তীতে কেউ ছাত্র নির্যাতন করলে তাকেও শাস্তি প্রদান করা হবে।
চতুর্থ নোটিশে বলা হয়েছে, আজ থেকে বুয়েটে সকল রাজনৈতিক সংগঠন ও তাদের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হলো।
পঞ্চম নোটিশে বলা হয়েছে, শিক্ষার্থীদের জন্য একটি ওয়েবসাইট চালু করবে বুয়েট প্রশাসন। যেখানে তারা নির্যাতনের অভিযোগ জানাতে পারবে। আর, প্রত্যেক হলের সব ফ্লোরের দুই পাশে সিসি ক্যামেরা যুক্ত করা হবে।