নিয়ম বহির্ভূতভাবে শিপইয়ার্ডকে ২০ কোটি টাকা প্রদান সাবেক উপাচার্যের!
- ফাতেমা তুজ জিনিয়া, বশেমুরবিপ্রবি
- প্রকাশ: ১০ অক্টোবর ২০১৯, ০৯:২১ AM , আপডেট: ১০ অক্টোবর ২০১৯, ০৯:৩৫ AM
খুলনা শিপইয়ার্ড জাহাজ নির্মাণ কোম্পানি হলেও এই কোম্পানির সাথে বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি, অফিস যন্ত্রপাতি ও আসবাবপত্র ক্রয়ের চুক্তি করেছে গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বশেমুরবিপ্রবি)। শুধুমাত্র চুক্তিই নয়, হিসাব দপ্তরের বক্তব্য অনুযায়ী গত ২৪ জুলাই নিয়মবহির্ভূতভাবে এই কোম্পানিকে প্রায় ২০ কোটি টাকা অগ্রিম প্রদান করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধান করে বশেমুরবিপ্রবির সদ্য পদত্যাগকারী উপাচার্য প্রফেসর ড. খোন্দকার নাসিরউদ্দিন দ্বারা অনুমোদনকৃত তিনটি ভাউচারপত্র পাওয়া গেছে। বশেমুরবিপ্রবি অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের অধীনে এসকল ভাউচারপত্রে দেখা যায়, বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি কেনা বাবদ গত ২৪ জুলাইখুলনা শিপইয়ার্ড কে ১৮ কোটি ২৫ লক্ষ টাকা অগ্রিম প্রদানের সুপারিশ করা হয়েছে।
এতে ৭.৫ শতাংশ ভ্যাট, সাত শতাংশ আয়কর এবং ১০ শতাংশ জামানত বাদ দেয়ার পরে যেটি পরিণত হয়েছে ১৩ কোটি ৭৭ লক্ষ ৮৭ হাজার ৫০০ টাকায়। একইদিনে একই প্রতিষ্ঠানকে আসবাবপত্র এবং অফিস যন্ত্রপাতি ক্রয়ের জন্য অগ্রিম প্রদানের সুপারিশ করা হয়েছে যথাক্রমে সাত কোটি ২০ লক্ষ টাকা এবং ৮০ লক্ষ টাকা। ভ্যাট, আয়কর এবং যামানত ব্যতিত যা পরিণত হয়েছে যথাক্রমে পাঁচ কোটি সাত লক্ষ ৬০ হাজার টাকা এবং ৬০ লক্ষ ৪০ হাজার টাকায়।
ভাউচারপত্রে সুপারিশকারী হিসেবে সাক্ষরকারী প্রকল্প পরিচালক মোঃ আশিকুজ্জামান ভুঁইয়ার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি অগ্রীম অর্থ প্রদানের বিষয়টি স্বীকার করেন।
জাহাজ তৈরি প্রতিষ্ঠানের সাথে কেনো বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি, আসবাবপত্র ও অফিস যন্ত্রপাতি ক্রয়ের চুক্তি করা হয়েছে এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘খুলনা শিপইয়ার্ড সরকারি প্রতিষ্ঠান। তাই আমরা তাদের সাথে চুক্তি করেছি, আর তারা এগুলো সরবরাহ করতে পারবে বলেই চুক্তি করা হয়েছে।’
পণ্য বুঝে পাওয়ার আগেই এত বিপুল পরিমাণ অর্থ অগ্রিম প্রদান করা যায় কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সরকারি প্রতিষ্ঠানকে যেকোনো পরিমাণ অর্থ অগ্রীম প্রদান করা যায়।’
তবে প্রকল্প পরিচালকের বক্তব্যের সাথে দ্বিমত পোষণ করেছেন অর্থ ও হিসাব দপ্তরের উপপরিচালক শেখ সুজাউদ্দিন। দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে তিনি জানান, ‘এই চুক্তিগুলো করা হয়েছে সম্পূর্ণ নিয়ম বহির্ভূতভাবে। তিনটি চুক্তিই টেন্ডারবিহীন ডিপিএম প্রক্রিয়ায় করা হয়েছে, যেটি শুধুমাত্র জরুরি পণ্য ক্রয়ের ক্ষেত্রে করা যায়। তাছাড়া কাজ শুরু হওয়ার পূর্বে বা কোনো পণ্য পাওয়ার পূর্বেই এভাবে অগ্রীম অর্থ প্রদান করা যায়না।’
নিয়ম বহির্ভূত হওয়ার পরেও কেনো অর্থ ও হিসাব দপ্তর বিল পাস কি কারণে করলো? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, ‘আমরা আপত্তি জানিয়েছিলাম। কিন্তু প্রকল্প পরিচালক ও উপাচার্যের নির্দেশে আমরা অর্থ প্রদানে বাধ্য হয়েছি।’
এ বিষয়ে ভাউচারগুলোর অনুমোদনকারী প্রফেসর ড. খোন্দকার নাসিরউদ্দিনকে একাধিকবার কল দেয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা এবং শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, খোন্দকার নাসিরউদ্দিন ব্যক্তিগত স্বার্থেই এসকল নিয়ম বহির্ভূত কাজ করেছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, ‘খুলনা শিপইয়ার্ডকে মূলত মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা হতো। যেহেতু সরকারি প্রতিষ্ঠানের নিকট থেকে পণ্য ক্রয় করতে হয়, তাই খুলনা শিপইয়ার্ডের সাথে চুক্তি করা হতো। পরবর্তীতে খুলনা শিপইয়ার্ডের মাধ্যমে উপাচার্যের ঘনিষ্ঠ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে এসকল পণ্য সরবরাহের দায়িত্ব দেয়া হতো।’
ইতিপূর্বে বই কেনার জন্যও খুলনা শিপইয়ার্ডকে দুই কোটি টাকা অগ্রীম প্রদান করে গোপালগঞ্জের এই বিশ্ববিদ্যালয়টি। পরবর্তীতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে তারা চুক্তি বাতিল করে অর্থ ফেরত চাইতে বাধ্য হয়।
উল্লেখ্য, স্বৈরাচারী আচরণ, আর্থিক দুর্নীতিসহ বিভিন্ন অভিযোগে উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি করে গত ১৯ সেপ্টেম্বর আন্দোলনে নামে বশেমুরবিপ্রবির শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে গঠিত ইউজিসির তদন্ত কমিটিও শিক্ষার্থীদের অভিযোগের সত্যতা পায় এবং উপাচার্যের অপসারণসহ আইনি ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করে। পরবর্তীতে গত ৩০ সেপ্টেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পদত্যাগপত্র জমা দেন খোন্দকার নাসিরউদ্দিন।