শাবিপ্রবিতে র্যাগিংয়ে ২৫ শিক্ষার্থীর শাস্তি, সমালোচনার জবাবে প্রশাসনের ব্যাখ্যা
- শাবিপ্রবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ০৪ অক্টোবর ২০২৫, ১০:১৪ PM
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবিপ্রবি) র্যাগিংয়ের অভিযোগে ২৫ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়ে তুমুল আলোচনা-সমালোচনা চলছে। কেউ একে অন্যায় ও হাস্যকর বলছেন, আবার কেউ মনে করছেন র্যাগিং সংস্কৃতি বন্ধে এটি সময়োপযোগী পদক্ষেপ। সমালোচনার জবাবে শনিবার প্রশাসন এক বিবৃতিতে জানায়, তদন্ত ও শৃঙ্খলা কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতেই সিন্ডিকেট সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
জানা যায়, গত বছরের ১৪ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেইন গেটের পাশে বিসমিল্লাহ রেস্টুরেন্টের পাশের বাসায় রাতে র্যাগিং করার অভিযোগ ওঠে। এর কিছুদিন পর ২৭ নভেম্বর পরিসংখ্যান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষ প্রথম সেমিস্টারের ৫ জন নারী শিক্ষার্থী একই বিভাগের ১৫ জন জুনিয়র শিক্ষার্থীকে শহিদ মিনারে ডেকে নিয়ে র্যাগিং করেন। এমনকি অর্থনীতি বিভাগে সিনিয়র শিক্ষার্থী কর্তৃক জুনিয়রদেরকে র্যাগিং দেওয়ার সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিকটস্থ এলাকায় হাতেনাতে ধরে ফেলেন প্রক্টরিয়াল বডি। এসব ঘটনার তদন্ত ও শৃঙ্খলা কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৩৭ নং সিন্ডিকেট সভায় পরিসংসখ্যান বিভাগের ১৩ জন ও অর্থনীতি বিভাগের ১২জন শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এসব ঘটনা সংবাদমাধ্যামে প্রকাশিত হলে বেশ আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।
প্রায় এক বছর পর বহিষ্কারের এসব আদেশকে নিয়মবহির্ভূত অন্যায় সিদ্ধান্ত, কেউ আবার হাস্যকর বলেও সমালোচনা করছেন। কেউ আবার র্যাগিং প্রতিরোধে প্রশাসনের ভূমিকাকে সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত বলেও মতামত দিয়েছেন।
পরিসংখ্যান বিভাগ ২৩-২৪ সেশনের শিক্ষার্থী অদিতি রায় বর্ষা বলেন, ‘গত বছরে ঘটে যাওয়া তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দু-একজনের ক্ষণিকের স্টেটমেন্টের ওপর ভিত্তি করে আমাদের সিনিয়র ব্যাচের কয়েকজনকে বহিষ্কার করা হয়, যা অনেক আগেই মীমাংসিত হয়ে যায় এবং জুনিয়র-সিনিয়র মিলে বিভিন্ন ইভেন্ট বা টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করি। তারপর বিভিন্ন সমস্যায় সিনিয়রদের পাশে পেয়েছি। সিনিয়র-জুনিয়র সম্পর্ক স্বাভাবিক হওয়ার পর হঠাৎ এক বছর পর প্রশাসনের এই রকম সিদ্ধান্ত সত্যিই দুঃখজনক।’
আরও পড়ুন: দীর্ঘ ৩৪ দিন পর রবিবার খুলবে বাকৃবি ক্যাম্পাস
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চতুর্থ বর্ষের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘র্যাগিং একটা ফৌজদারি অপরাধ। বিগত সময়ে র্যাগিং করেও দলীয় রাজনীতির কারণে অপরাধীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকতেন। ফলে ক্যাম্পাসের র্যাগিং একটা সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছিল। এ সংস্কৃতির অবসান ঘটাতে অবশ্যই শাস্তির প্রয়োজন, তা না হলে এ অপরাধ যুগের পর যুগ চলবে।’
শিক্ষার্থীদের নানামুখী সমালোচনার জবাবে আজ শনিবার (৪ অক্টোবর) বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার সৈয়দ ছলিম মুহাম্মাদ আব্দুল কাদির স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বিবৃতি দেন প্রশাসন।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট-এর গত ২৩৭তম সিন্ডিকেট সভায় গৃহীত জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা, শাহপরান হলে অস্ত্র, মাদকের সঙ্গে জড়িত এবং র্যাগিংয়ের ঘটনায় দায়ীদের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত গ্রহণকে কেন্দ্র করে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভিন্নভাবে উপস্থাপনের বিষয়টি কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। জুলাই অভ্যুত্থান-পরবর্তী সয়য়ে বর্তমান বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ভুক্তভোগী সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত কমিটি গঠন করে। কমিটিগুলো তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ এবং সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে শৃঙ্খলা কমিটির কাছে তদন্ত রিপোর্ট জমা দেয়। শৃঙ্খলা কমিটি বিষয়টি পর্যালোচনা করে সিন্ডিকেট সভায় উপস্থাপন করে।’