শাবিপ্রবির আওয়ামীপন্থি শিক্ষক হলেন মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির প্রো-ভিসি

মো. ইশরাত ইবনে ইসমাইল
মো. ইশরাত ইবনে ইসমাইল  © সংগৃহীত

সিলেটের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ‘মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটি’র প্রো-ভিসি হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও  প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক মো. ইশরাত ইবনে ইসমাইল।

মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়-২ এর সহকারী সচিব শাহ আলম সিরাজ স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে নিয়োগ চূড়ান্ত করা হয়। আগামী চার বছর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০ অনুযায়ী তিনি দায়িত্ব পালন করবেন।

নিয়োগ চূড়ান্তের বিষয়টি সামনে আসায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। সমালোচনা করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীরাও। আওয়ামীপন্থি এসব শিক্ষককে নিয়োগের মাধ্যমে আওয়ামীলীগকে পুনর্বাসন করা হচ্ছে বলেও সমালোচনা করছেন শিক্ষার্থীরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী হাফিজুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অভ্যন্তরীণ ফেইসবুক গ্রুপে লেখেন, আমাদের সাস্টের ইংরেজি ডিপার্টমেন্টের অধ্যাপক ইসরাত ইসমাইল, যিনি শাবিপ্রবির সাবেক ভিসি ফরিদ উদ্দিন আহমেদের সময়ে প্রক্টর ছিলেন, তিনি মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির প্রো-ভিসি হিসেবে নিয়োগ পাচ্ছেন বলে আমরা শুনতে পাচ্ছি। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রক্টর ইশরাত ইবনে ইসমাইল প্রক্টরের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি ইন্সটিটিউশনাল কোয়ালিটি অ্যাস্যুরেন্স সেলের (আইকিউএসি) অতিরিক্ত পরিচালক, ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষ ভর্তি কমিটির সদস্য সচিব, ইংরেজি বিভাগের ছাত্র উপদেষ্টার পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। তাছাড়া পদাধিকার বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ (শাকসু) এর কোষাধ্যক্ষ, শৃঙ্খলা ও প্রক্টরীয় কমিটির সদস্য সচিবসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা বিষয়ে দায়িত্বও পালন করেন তিনি। আওয়ামী রেজিমের আমলে এত সুযোগ সুবিধা গ্রহণের পরেও এখন যদি উনি প্রো-ভিসি হয়ে যায় সেটার চেয়ে দুঃখজনক আর কিছু হতে পারে না।

জানা যায়, অধ্যাপক ইসরাত ইবনে ইসমাইলের  গ্রামের বাড়ি সিলেটের কানাইঘাট। সিলেটের প্রাক্তন মেয়র বদর উদ্দিন কামরানের ছেলে ডাঃ শিপলুরও ক্লাসমেট। পাইলট স্কুলের ১৯৯৬ ব্যাচ এবংশাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের প্রাক্তন কর্মী। ওয়ান ইলেভেনের পর আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসলে আওয়ামীপন্থি ভাইস চ্যান্সেলর ও বিএনপি নেতা সালাহ উদ্দিন কাদের চোধুরীর বিরুদ্ধে আদালতে সাক্ষ্যদানকারী প্রফেসর ড. মো. সালেহ উদ্দিন এর আমলে ২০০৯ সালের অক্টোবর মাসে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। তাকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দানের জন্য অনুরোধ করেন সিলেটের তৎকালীন মেয়র মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি বদর উদ্দিন কামরান ও সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন কোষাধ্যক্ষ মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির চেয়ারম্যান ড. তৌফিক রহমান চোধুরী। 

শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেই মো. ইশরাত ইবনে ঈসমাঈল আওয়ামীলীগপন্থী শিক্ষকদের প্যানেলে অ্যাকটিভ ছিল। সে আওয়ামীলীগ প্যানেল থেকে শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে সদস্য, যুগ্ম সম্পাদক ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে একাধিকবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন বলেও অভিযোগ করেন অনেকে। নিয়োগ লাভ করার পর আওয়ামীলীগ প্রশাসনের সহকারী প্রক্টর ও সহকারী প্রভোস্ট হিসেবে নিয়োগ পান। 

২০১২ সালে ফেব্রুয়ারিতে আওয়ামীলীগ আমলে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে প্রমোশন পান তিনি।  ২০১৮ সালের ভোটারবিহীন বা রাতের ভোটের নির্বাচনের পর আওয়ামীলীগ আবার ক্ষমতায় আসলে প্রফেসর ফরিদ উদ্দিন আহমেদ ভিসি হিসেবে আসলে অক্টোবর মাসে তাকে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে প্রমোশন দেয়া হয়। ২০২৪ সালে ডামি নির্বাচনে আওয়ামীলীগ আবার ক্ষমতায় আসলে দু মাসের মধ্যে পিএইচডি ডিগ্রি না থাকা সত্ত্বেও আওয়ামীলীগপন্থী শিক্ষক মো. ইশরাত ইবনে ইসমাঈলকে অধ্যাপক পদে পদোন্নতি দেয়া হয়। 

২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে শিক্ষার্থীদের উপর পুলিশের বর্বরোচিত হামলার পর শাবিপ্রবির সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমদের বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন গড়ে তুললে মো. ইশরাত ইবনে ঈসমাঈল সেই আন্দোলন দমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। এর স্বীকৃতিস্বরূপ শাবিপ্রবির সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ মো. ইশরাত ইবনে ইসমাঈলকে প্রক্টর পদে নিয়োগ দেন।

এসব বিষয়ে জানতে অধ্যাপক ইশরাত ইবনে ইসমাঈলকে মুঠোফোনে কল দিয়ে পাওয়া যায়নি।


সর্বশেষ সংবাদ

X
APPLY
NOW!