গোবিপ্রবিতে দফায় দফায় সংঘর্ষ ও ভাংচুরের নেপথ্যে ছাত্রদলের কোন্দল

গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ ও ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে
গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ ও ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে  © টিডিসি সম্পাদিত

গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (গোবিপ্রবি) দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনার পর নানা ধরনের তথ্য বেরিয়ে আসছে। ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষা সমাপনী অনুষ্ঠান ‘নবনীতক৯’ এর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে চেয়ারে বসা নিয়ে দুই পক্ষের শিক্ষার্থীদের মধ্যে হাতাহাতির মধ্য দিয়ে এর সূত্রপাত হয়। পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সমর্থক নেতা-কর্মীদের মধ্যে এর জেরে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক ভাংচুরও চালানো হয়।

ছাত্রদলের কয়েকজন নেতা সংঘর্ষের ঘটনায় একে অন্যকে দোষারোপ করেছেন। এ বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সংশ্লিষ্টরা জানান, বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) রাত ১টার দিকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ও ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক গ্রুপের অনুসারী যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক শফিকসহ তার বিভাগের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে চেয়ারে বসা নিয়ে ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের শিক্ষার্থীদের হাতাহাতি হয়।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তৎক্ষণাৎ বিষয়টি মীমাংসা করে তাদের অনুষ্ঠানস্থল থেকে বের করে দেয়। তাদের বিজয় দিবস হলের দিকে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। পরে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ও ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক গ্রুপের অনুসারীরা বিজয় দিবস হলে প্রবেশ করলে সভাপতি গ্রুপের অনুসারী ইইই বিভাগের শিক্ষার্থী ও ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক তকী ইয়াসির এবং সহ-সভাপতি রহিম উল্লাহ বাদশার নেতৃত্বে লাঠিসোটা নিয়ে হামলা চালায়। এ সময় হলের জানালার গ্লাস ভাঙচুর করা হয়।

সংঘর্ষের একপর্যায়ে সাধারণ সম্পাদক গ্রুপের অনুসারী যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক শফিক, সহ-সভাপতি আনোয়ার, প্রচার সম্পাদক নাহিদুর রহমান সাকিব, কর্মী বায়োজিদ, ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী সবুজ, ১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী নাহিদ এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী টনি ও সোহেল রানাসহ তাদের সমর্থকরা সভাপতি গ্রুপের অনুসারীদের পাল্টা ধাওয়া করে শেখ রাসেল হলে নিয়ে যান। 

এ সময় তারা হলে প্রবেশ করলে ওপর থেকে ফুলের টব ও বেঞ্চ ছুড়ে মারা হয়। এতে তারা উত্তেজিত হয়ে শেখ রাসেল হলে হামলা চালিয়ে বিভিন্ন রুমের গ্লাস ভাঙচুর করেন। পরবর্তীতে সভাপতি গ্রুপের অনুসারীরা শেখ রাসেল হলে থাকা সাধারণ সম্পাদক গ্রুপের অনুসারীদের জিনিসপত্র রুম থেকে বাইরে ফেলে দেন।

গভীর রাতে ছাত্রদলের সহ-সভাপতি সবুজ, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া মাহমুদ শিপলু ও সহ-প্রচার সম্পাদক সাফিউল ইসলাম শামীমের নেতৃত্বে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে হামলা চালানো হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। সিসি ক্যামেরার ফুটেজে সে দৃশ্য দেখা গেছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

শেখ রাসেল হলে হামলার বিষয়ে ছাত্রদলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক শফিক বলেন, ‘আমরা অ্যাকাডেমিক ভবন থেকে দৌঁড়ে বিজয় দিবস হলে এলে ইইই বিভাগের ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক তকী, সহ-সভাপতি বাদশাসহ কয়েকজন আমাদের ওপর হামলা করে। তখন আমরা রাগান্বিত হয়ে পাল্টা ধাওয়া করি। তারা শেখ রাসেল হলের বিভিন্ন রুমে ঢুকে যায়।’

তিনি বলেন, ‘আমরা খোঁজ করতে গেলে পাঁচতলা থেকে বেঞ্চ ও ফুলের টব ফেলা হয়, যাতে আমাদের অনেকেই আহত হন। আমাদের কারও ইচ্ছে ছিল না ভাঙচুরের, কিন্তু অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে তা ঘটে গেছে।’

রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে ভাঙচুরের বিষয়ে ছাত্রদলের সহ-সভাপতি সবুজ বলেন, ‘রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা শেখ রাসেল হলে হামলা চালালে হলে থাকা শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হয়ে বিভাগে যায়। আমি একজন দায়িত্বশীল রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে সেখানে গিয়েছিলাম পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে। যখন দেখি অবস্থা খারাপ, তখন সেখান থেকে চলে আসি।’

তিনি বলেন, ‘সিসি ক্যামেরার ফুটেজে স্পষ্ট দেখা যাবে, আমি ভাঙচুরে জড়িত নই। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আমার নাম ফেসবুকে ছড়ানো হয়েছে, যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।’ বিজয় দিবস হলে হামলার বিষয়ে সভাপতির অনুসারী দপ্তর সম্পাদক তকী ইয়াসিরের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

আরও পড়ুন: ইডেনে বরখাস্ত কর্মচারীর জিনিসপত্র সরানোর সংবাদ সংগ্রহে বাধা শিক্ষক-ছাত্রলীগের

এ বিষয়ে রহিম উল্লাহ বাদশা বলেন, ‘আমি দেখা করে বিস্তারিত বলব। মোবাইল ফোনে সবকিছু বলতে চাই না।’ যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক শফিকের ঘাড়ে কামড় দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘তারা কয়েকজন মিলে আমাকে ঘিরে ধরে মারধর করে। আমি কেবল নিজেকে রক্ষা করার চেষ্টা করেছি। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখলেই বোঝা যাবে, আমাকে কীভাবে মারধর করা হয়েছে।’

সংঘর্ষের ঘটনায় কি পদক্ষেপ নেওয়া হবে জানতে চাইলে প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক ড.আরিফুজ্জামান রাজীব বলেন, ‘হল প্রশাসনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, যারা এ ধরনের কাজের সঙ্গে জড়িত আছে, তাদেরকে প্রশাসন সবাইকে সর্বোচ্চ শাস্তি যেটা আছে, সেটা নিশ্চিত করবে।’

তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন আজ মিটিং করে তিন কর্মদিবসের মধ্যে ব্যবস্থা নেবে। সেখানে যেহেতু সিসি ক্যামেরার ফুটেজ আছে, সবকিছু আছে, প্রত্যক্ষদর্শী আছে। এ ঘটনার কারা জড়িত তাদের খুজে বের করা কঠিন কিছু না। তদন্তের মাধ্যমে যাদের নাম উঠে আসবে, সবাইকে কঠিন শাস্তির আওতায়  আনতে হবে। এটা উপাচার্যের বার্তা।’


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence