চুয়েটে পানি সম্পদ কৌশল বিভাগের শিক্ষার্থীদের ফের ক্লাস বর্জন, তালা

চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়  © ফাইল ছবি

ক্লাস-পরীক্ষাসহ সব ধরনের অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম বর্জন করেছে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) পানি সম্পদ কৌশল বিভাগের শিক্ষার্থীরা। চাকরির ক্ষেত্র ও একাডেমিক সুযোগ-সুবিধায় বৈষম্যের অভিযোগে গত বছরের সেপ্টেম্বর মাস থেকে ধারাবাহিক আন্দোলন করছেন বিভাগটির শিক্ষার্থীরা। কিন্তু সন্তোষজনক সমাধান না পাওয়ায় দ্বিতীয়বারের মতো ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। এ সময় তারা বিভাগের ক্লাসরুম এবং ল্যাবে তালা ঝুলিয়ে দেন।

জানা গেছে, ২০১৫ সালে এ বিভাগটি চুয়েটের পুরকৌশল অনুষদের অধীনে পুর ও পানিসম্পদ কৌশল নামে যাত্রা শুরু করে। তবে তিন বছর পর ২০১৮ সালে বিভাগের নাম এবং ডিগ্রি পরিবর্তন করে পানি সম্পদ কৌশল নাম দেওয়া হয়। ফলে এ বিভাগের শিক্ষার্থীরা প্রকৌশল ক্ষেত্রে বিভিন্ন সরকারি এবং বেসরকারি চাকরিতে আবেদনের সুযোগ পাচ্ছে না বলে অভিযোগ ওঠে। 

এ সমস্যা থেকে উত্তরণে শিক্ষার্থীরা এক দফা দাবি জানান। তাদের দাবি, দ্রুত বিভাগের নাম পূর্বের ন্যায় পুনঃসংস্কার করে পুর ও পানি সম্পদ কৌশল (CWRE) কৌশল করতে হবে। একইসঙ্গে পুর ও পানি সম্পদ কৌশল (CWRE) হিসেবে ‘১৯ ব্যাচ থেকে ডিগ্রি দিতে হবে।’

বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে বিভিন্ন সময়ে শিক্ষার্থীদের কয়েক দফা আলোচনার পর তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তবে প্রায় তিনমাস পার হয়ে গেলেও কোনো সিদ্ধান্ত না আসায় ফের তারা অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম বর্জনের ঘোষণা দেন।

পানি সম্পদ কৌশল বিভাগের ২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘প্রশাসন শিক্ষার্থীদের আশ্বস্থ করেছিল, মে মাসের ভিতর সুরাহা করবেন। শিক্ষার্থীরা এ ধরনের নিরপেক্ষ যাচাই-বাছাইকে সাদরে গ্রহণ করেছে। কারণ, আমাদের বিভাগ এবং চাকরির বিষয়ে সংকট দূরীকরণে আমাদের দাবির যৌক্তিকতা নিয়ে আমরা যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী।’ 

তিন মাস পার হলেও কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারছে না প্রশাসন, এমন অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘কমিটিতে বুয়েট থেকে একজন বিশিষ্ট শিক্ষক ছিলেন, তিনি চুয়েটে এসে সব কিছু করে গেছেন। হঠাৎ করে ঢাকায় গিয়ে তিনি কমিটি থেকে অব্যাহতি নিলেন। কি এমন উনার সঙ্গে ঘটেছে, সেটা এক রহস্য হয়ে থাকল।’

২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী হীরা দত্ত বলেন, ‘আমরা শুরু থেকে যৌক্তিক সমাধান চেয়ে এসেছি। প্রশাসনকে সব ধরনের তথ্য-উপাত্ত দিয়ে সহযোগিতা করেছি। কিন্তু প্রশাসন দিনের পর দিন আমাদের আশাহত করেছে, যা এ বিভাগের শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ হুমকির মুখে ফেলেছে। এর আগেও একবার প্রশাসনের কালক্ষেপণের প্রতিবাদে আমরা একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করলেও প্রশাসনের আশ্বাসে কিছুদিন পরেই ক্লাসে ফিরে যাই।’

প্রশাসনিক প্রক্রিয়া একদম শেষ পর্যায়ে থাকলেও প্রায় তিন মাস ধরে কালবিলম্ব করে, যা এখনো চলমান। এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, এ দীর্ঘসময় ধরে চলা বৈষম্যের প্রতিবাদে আমরা ফের সব ব্যাচ যৌক্তিক সমাধান আসা না পর্যন্ত অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমরা যত দ্রুত সম্ভব, সমাধান চাই।’

আরও পড়ুন: বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশপত্র জালিয়াতির মূল হোতা ছিলেন অপু, ছবি ছিল রিয়াদের চাঁদাবাজির অস্ত্র

এ বিষয়ে চুয়েটের পুর ও পরিবেশ কৌশল অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. সুদীপ কুমার পাল বলেন, বিষয়টি অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলে গেছে। এর সমাধানে একটি যাচাই-বাছাই কমিটি করা হয়েছে। কমিটি সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলছে, শিক্ষার্থীদের দেয়া তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণে কাজ করছে। সবকিছু যাচাই-বাছাই করে কমিটি প্রতিবেদন দিবে। কমিটিতে একজন বহিঃসদস্য রয়েছেন। তাঁর সময়েরও একটা ব্যাপার আছে।’

কমিটিকে কাজের জন্য সময় দিতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা শিক্ষার্থীদের বারবার বুঝানোর চেষ্টা করেছি। গতকালও তাদের সঙ্গে আমরা আলোচনা করেছি। তাদেরকে অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম চালিয়ে যেতে অনুরোধ করেছি। এরপরও সেগুলো না মেনে যদি কেউ বলে ক্লাস করবে না বলে, তাহলে তো আমরা তাদের জোর করে ক্লাস করাতে পারব না।’

বহিঃসদস্যের পদত্যাগের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘বহিঃসদস্য বুয়েটের একজন অধ্যাপক ছিলেন। ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে তিনি পদত্যাগ করেছেন বলে জেনেছি। যেহেতু তিনি কমিটির অভিজ্ঞ সদস্য ছিলেন, তাই তিনি পদত্যাগ করাতে প্রতিবেদনের কাজ সম্পন্ন করতে বিলম্ব হচ্ছে বলে বাকি সদস্যরা জানিয়েছেন।’


সর্বশেষ সংবাদ