হাবিপ্রবির ভিন্নধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থীদের চোখে ঈদ আনন্দ

  © টিডিসি ফটো

বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও সম্প্রীতির এক উজ্জ্বল উদাহরণ হলো বিভিন্ন ধর্মের মানুষ একে অপরের উৎসবে শামিল হওয়া। ঈদ শুধু মুসলিমদের উৎসব নয়, বরং এটি সার্বজনীন আনন্দের উপলক্ষ্য, যেখানে ভিন্নধর্মী মানুষও পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার মাধ্যমে এই উৎসবের অংশ হয়ে ওঠেন। হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) এমনই চারজন হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থীর ঈদ ভাবনা, অভিজ্ঞতা ও অনুভূতি শুনেছেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের হাবিপ্রবি প্রতিনিধি রিয়া মোদক।


আতরের সুবাস আর নতুন পোশাকের রঙিন মিছিল দেখেছি
আমি কখনো সরাসরি ঈদ উদ্‌যাপন করিনি, তবে ছোটবেলায় ঈদের মেলায় গিয়ে মানুষের বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস, আতরের সুবাস আর নতুন পোশাকের রঙিন মিছিল দেখেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে দেখেছি, ঈদ শুধু আনন্দের নয়, বরং অ্যাকাডেমিক চাপ, টিউশন, আর ব্যস্ত জীবনের মাঝে পরিবারে ফেরার এক আবেগঘন উপলক্ষ্য।

আমার কাছে ঈদ কেবল ধর্মীয় উৎসব নয়, এটি একটি অনুভূতি—যা ধর্ম-বর্ণের সীমানা ছাড়িয়ে সবাইকে ছুঁয়ে যায়। রমজান ও ঈদ আমাকে সংযম ও ভ্রাতৃত্বের শিক্ষা দেয়, যা আমার হৃদয়কে সমৃদ্ধ করে। এক কথায়, বাংলাদেশে ঈদ সৌহার্দ্যের এক, যেখানে ভালোবাসা ও ভ্রাতৃত্ব ধর্মের গণ্ডি পেরিয়ে এক অভিন্ন সুরে বাজে।

[তুহিন শুভ্র মন্ডল, তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগ]

 

সংস্কৃতিকে জানার এবং সম্মান করার একটি সুযোগ
ঈদ শুধু মুসলিমদের জন্য নয়, এটি সবার জন্য আনন্দের উৎসব। ভিন্ন ধর্মাবলম্বীরাও এই আনন্দের অংশ হতে পারেন, যা সমাজে সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির নিদর্শন। আমি নিজেও ঈদের দিন বন্ধুদের বাড়িতে গিয়ে সেমাই খাই, শুভেচ্ছা বিনিময় করি এবং উৎসবের আমেজ উপভোগ করি। এটি শুধু খাবার বা আনন্দের বিষয় নয়, বরং একে অপরের সংস্কৃতিকে জানার এবং সম্মান করার একটি সুযোগ।

ঈদের আনন্দের আরেকটি দারুণ দিক হলো বন্ধুদের মাঝে সালামির মজার খেলা। কেউ বড় ভাই বা আপুর মতো আচরণ করে সালামি আদায় করে, কেউ আবার গোপনে টাকা রেখে সারপ্রাইজ দেয়। আবার কেউ কেউ মজা করে বায়না ধরে সালামি আদায় করে নেয়। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো, যার সালামি বেশি হয়, তাকে বন্ধুদের খাওয়াতেই হয়—হোক সেটা ফুচকা, চকোলেট বা অন্য কিছু। এভাবেই ঈদের আনন্দ সীমাবদ্ধ না থেকে সবার মাঝে ছড়িয়ে পড়ে।

[রোজনিল রিছিল, ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগ]


ভিন্ন ধর্মাবলম্বী হলেও আমার কাছে প্রতিটি উৎসবই আনন্দের
ঈদ মানেই খুশির বন্যা, নতুন চাঁদ, আর এক মিলনমেলা। ভিন্ন ধর্মাবলম্বী হলেও আমার কাছে প্রতিটি উৎসবই আনন্দের, কারণ ছোটবেলা থেকেই দেখেছি—যেমন ঈদে মা সেমাই রান্না করেন, তেমনি পূজায় নাড়ু-লুচি বানান। রমজানের সবচেয়ে প্রিয় দিক আমার কাছে ইফতার। ক্যাম্পাসে বিভাগ, ক্লাব, বন্ধুদের সঙ্গে ইফতার করা, বাসায় প্রতিবেশীদের সঙ্গে ভাগাভাগি করা—এসবই ভালোবাসা ও সম্প্রীতির প্রতিচ্ছবি।

ঈদ আসলে কেনাকাটার উৎসবও বটে। যদিও ক্রিসমাসে কেনাকাটা করি, তবুও চাঁদ রাতে সপরিবারে বের হওয়া, ঈদের আমেজ উপভোগ করা অন্যরকম ভালো লাগে। বাবা মজা করে বলেন, 'চলো, ঈদ দেখে আসি।' হাতে মেহেদি পরা, সালামি দেওয়া-নেওয়া—এসব ঈদের আনন্দ আরও বাড়িয়ে দেয়।

ঈদের ছুটিতে আমাদের পরিবারের ঘোরাঘুরির ধুম লেগে যায়। বন্ধু, ছোটবোনের বন্ধু, বাবার ছোটবেলার বন্ধু—সবার বাসায় যাই, আনন্দ ভাগ করে নিই। গ্রামের বাড়ি থেকে শহরের বিভিন্ন জায়গায় বেড়ানোর এই উৎসব বরাবরই উপভোগ করি।

শৈশব থেকে এখন পর্যন্ত ঈদের সব রঙিন মুহূর্তের কথা মনে হলে মনে হয়, এটাই আসল সৌন্দর্য—ভ্রাতৃত্ব, সম্প্রীতি আর ভালোবাসার বন্ধন। এই বন্ধন আজীবন টিকে থাকুক, আমরা যেন সবাই মিলে এক পরিবার হয়ে উঠতে পারি। 
ঈদ মোবারক!

[সৃষ্টি সারা বর্ম্মন, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ]


বৌদ্ধ হিসেবে ঈদ নিয়ে আমার অনুভূতি অসাধারণ
সকল ধর্মেরই ছোট-বড় নানা উৎসব আছে, আর আমার দেখা মতে মুসলমানদের জন্য ঈদ অত্যন্ত আনন্দের। একজন বৌদ্ধ হিসেবে ঈদ নিয়ে আমার অনুভূতি অসাধারণ। ক্যাম্পাসে ঈদের সময় বাড়িতে থাকলেও বন্ধু-বান্ধব, সিনিয়র-জুনিয়রদের শুভেচ্ছা বার্তা, সালামি আর দাওয়াত পেয়ে মন ভরে যায়। আমাদের সমাজে একে অন্যের ধর্ম ও সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া উচিত, যা পারস্পরিক বন্ধনকে আরও দৃঢ় করে।

তবে, একটি দুঃখের জায়গা হলো—আমাদের পার্বত্য অঞ্চলের সবচেয়ে বড় উৎসব বিজু, সাংগ্রাই, বৈসু, যা এপ্রিলের ১২-১৬ তারিখ উদ্‌যাপিত হয়, তখনও আমাদের স্কুল, কলেজ ও অফিসে ছুটি থাকে না। ঈদের মতো আমরাও চাই পরিবার-পরিজনের সঙ্গে উৎসবের আনন্দ ভাগ করে নিতে। এই বিষয়টি নিয়ে জনসচেতনতা ও নীতিনির্ধারকদের বিবেচনা করা উচিত। সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা!

[ক্য ক্য সাঁই,  ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগ]


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence