১০ হাজার কোটির বিশ্ববিদ্যালয় এখন ৮৩৯ কোটি

গাজীপুরের বাংলাদেশ ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়
গাজীপুরের বাংলাদেশ ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়  © সংগৃহীত

নতুন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনে দেশে এ যাবৎ এককালীন সর্বোচ্চ ব্যয় হয়েছে নেত্রকোনার শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। তবে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রোপোজাল জমা দিয়ে আলোচনায় এসেছিল গাজীপুরের বাংলাদেশ ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়, যা আগে ছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টির উন্নয়নের জন্য ৮৩৯ কোটি টাকার ডিপিপি জমা দিয়েছে। এটি অনুমোদনের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে রয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০ হাজার ৪০০ কোটি কোটি টাকার উন্নয়ন ব্যয় নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগ আপত্তি জানালে তা বাতিল হয়ে যায়। পরবর্তীতে নতুন করে ১০ হাজার ১০০ কোটি টাকার ডিপিপি জমা দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর তীব্র সমালোচনা হলে এই ডিপিপিও বাতিল করে দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। নতুন করে তারা ৮৩৯ কোটি টাকার ডিপিপি জমা দিয়েছে ইউজিসিতে।

ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০ হাজার কোটি টাকার ডিপিপি জমা দেওয়ার সময় ডিপিপি মূল্যায়ন কমিটির প্রধান ছিলেন ইউজিসির সাবেক সদস্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর। এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘ডিজিটাল ইউনিভার্সিটির তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুনাজ আহমেদ নূর প্রস্তাবনা জমা দিয়েছিলেন। কেন এত টাকার ডিপিপি জমা দিয়েছিলেন, সে বিষয়ে তিনি ভালো বলতে পারবেন।’

বাতিল হওয়া ডিপিপিতে কর্তৃপক্ষ সুইমিং পুল, বক্তৃতা মঞ্চ, স্কলার প্লাজা, স্পোর্টস কমপ্লেক্স নির্মাণের কথা বলেছিল। এর ধরনের জিনিসগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ে কী দরকার, সেই প্রশ্ন করা হলে কর্তৃপক্ষ কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।

ইউজিসি সূত্র জানায়, গত জানুয়ারি মাসে নতুন করে ৮৩৯ কোটি টাকার ডিপিপি ইউজিসিতে জমা দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয় জুন-২০২৯ পর্যন্ত। কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খানের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের কমিটি ডিপিপি মূল্যায়ন করে অনুমোদনের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।

ইউজিসিতে জমা দেওয়া ডিপিপি বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের জন্য ব্যয় দেখানো হয়েছে ৪২ কোটি ২৯ লাখ টাকা। ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ১৮৫ কোটি ৬ লাখ, ২০২৬-২৭ অর্থবছরে ১৭৩ কোটি ২১, ২০২৭-২৮ অর্থ বছরে ২১০ কোটি ৫৯ লাখ এবং ২০২৮-২৯ অর্থবছরের জন্য ১৭৮ কোটি ৭৪ লাখ টাকা ব্যয় দেখানো হয়েছে। 

ডিপিপিতে মূলধন ক্যাটাগরির মোট ব্যয় দেখানো হয়েছ ৭৫৪ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে একাডেমিক ভবন নির্মাণের ব্যয় দেখানো হয়েছে ২৭৭ কোটি টাকা, যা মোট ব্যয়ের ৩৪.৪৬ শতাংশ। প্রশাসনিক ভবন নির্মাণের ব্যয় ধরা হয়েছে ১৮৫ কোটি টাকা, যা মোট ব্যয়ের ২৩.০১ শতাংশ। এছাড়া অভ্যন্তরীণ রাস্তা নির্মাণের জন্য ৭ কোটি ৪৫ লাখ, ড্রেনেজ কাঠামোর জন্য ২২ কোটি ৬৫ লাখ, এক্সটার্নাল ইলেক্ট্রিফিকেশনের জন্য ১৭ কোটি ৮৮ লাখ, ভূমি উন্নয়নে ৪৪ কোটি, তথ্য ও যোগাযোগ সরঞ্জামাদির জন্য ৫০ কোটি ৪৭ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে।

আরো পড়ুন: ধুরন্ধররা ঠিকই ফাঁকফোকর দিয়ে অযোগ্য শিক্ষক নিয়োগ দেয়: রাবি ভিসি

ক্যামেরা ক্রয়ে ব্যয় দেখানো হয়েছে ২ কোটি ৬৭ লাখ, গবেষণাগারের সরাঞ্জামাদিতে ৫৫ কোটি, আসবাবপত্রে ২৩ কোটি এবং ভূমি অধিগ্রহণে ৩৮ কোটি ৩১ লাখ টাকা ব্যয় দেখানো হয়েছে। মূলধন এবং রাজস্ব ব্যয়ের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৮০ কোটি ৭৫ লাখ টাকা।

নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে ইউজিসির সংশ্লিষ্ট শাখার এক কর্মকর্তা দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘ডিজিটাল ইউনিভার্সিটির আগের ডিপিপি অস্বাভাবিক ছিল। একটি মসজিদ নির্মাণের ব্যয় দেখানো হয়েছিল ৫৯ কোটি টাকা। অথচ একই ধরনের একটি মসজিদ নির্মাণে সর্বোচ্চ ব্যয় হয় ছয় কোটি টাকা। এছাড়া আগের ডিপিপিতে তারা সুপারি কম্পিউটার ক্রয়ের কথা উল্লেখ করেছিলেন। এ ধরনের কম্পিউটার পরিচালনার দক্ষতা দেশের কারও ছিল না। এটির প্রয়োজনীয়তাও ছিল না।’

এ কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘বাতিল হওয়া ডিপিপিতে কর্তৃপক্ষ সুইমিং পুল, বক্তৃতা মঞ্চ, স্কলার প্লাজা, স্পোর্টস কমপ্লেক্স নির্মাণের কথা বলেছিল। এর ধরনের জিনিসগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ে কী দরকার, সেই প্রশ্ন করা হলে কর্তৃপক্ষ কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। নতুন যে ডিপিপি জমা দেওয়া হয়েছে, সেটি নিয়ে ইউজিসি সন্তুষ্ট। এটি অনুমোদনের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে রয়েছে। আশা করছি, মন্ত্রণালয় তেকে ডিপিপি পাসের পর তা অনুমোদনের জন্য একনেকে পাঠানো হবে।’

কেন ১০ হাজার কোটি টাকার ডিপিপি জমা দেওয়া হয়েছিল সে বিষয়ে বক্তব্য জানতে ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মুনাজ আহমেদ নূরকে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence