পবিপ্রবিতে র‍্যাগিংয়ের ঘটনায় ৭ শিক্ষার্থী বহিষ্কৃত

পটুয়াখালী বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
পটুয়াখালী বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়  © সংগৃহীত

র‍্যাগিংয়ে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অবলম্বনের ঘোষণা দিলেও রাতভর র‍্যাগিংয়ের শিকার হয়েছেন পটুয়াখালী বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পবিপ্রবি) তিন শিক্ষার্থী। পরে অসুস্থ অবস্থায় তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় সাত শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করেছে হল প্রশাসন।

অভিযুক্ত শিক্ষার্থীরা হলেন ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের জুনায়েদ হোসাইন, তানভির ইসলাম সিয়াম ও প্রিতম কারণ, আইন ও ভূমি প্রশাসন অনুষদের শাওন, সুপেল চাকমা, গোলাম রাব্বি, কৃষি অনুষদের জিহাদ হোসাইন। তারা সবাই ২০২২-২৩ সেশনের শিক্ষার্থী।

বিশ্ববিদ্যালয়টির ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. কাজী রফিকুল ইসলাম সাতজনের বহিষ্কারে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে আজ সকালে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সরজমিনে অসুস্থ শিক্ষার্থীদের খোঁজখবর নিয়ে সর্বোচ্চ সুচিকিৎসার বিষয়টি নিশ্চিত করেন এবং র‍্যাগিংয়ের সঙ্গে যারা যুক্ত আছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে প্রতিশ্রুতি দেন।

শনিবার (২৩ নভেম্বর) দিবাগত রাত আড়াইটায়  বিশ্ববিদ্যালয়ের এম. কেরামত আলী হলে এ ঘটনা ঘটে। এম. কেরামত আলী হলে অবস্থানরত স্নাতক প্রথম বর্ষের (২০২৩-২৪ সেশন) শিক্ষার্থীরা র‍্যাগিংয়ের শিকার হন।

শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শনিবার দিবাগত গভীর রাত পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের এম. কেরামত আলী হলে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের র‌্যাগ দেওয়া হয়। র‍্যাগিং চলাকালীন হঠাৎ করেই নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে তিন জন শিক্ষার্থী গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। এই অমানবিক নির্যাতনের পর অনেকেই রাতে ঘুমাতে পারেননি।

আরও পড়ুন: পবিপ্রবিতে রাতভর র‍্যাগিং, হাসপাতালে ভর্তি ৩ শিক্ষার্থী

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ২০২৩-২৪ সেশনের এক শিক্ষার্থী বলেন, আনুমানিক রাত ১২টায় ইমিডিয়েট সিনিয়ররা আমাদের গণরুমে এসে আমাদের সবার ফোন জমা নিয়ে একটা টেবিলে রেখে দেন। আমাদের কান ধরে ওঠাবসা করতে বাধ্য করে, অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে, বিভিন্ন বাধ্যতামূলক নিয়ম বলে, সিগারেটের ধোঁয়ায় অস্বস্তিকর পরিবেশ সৃষ্টি করে গণরুমে। এ ছাড়া আমাদের জানালায় ঝোলানো থেকে শুরু করে বিভিন্নভাবে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতে থাকে।

ওই পরিস্থিতির খবর পেয়ে এম. কেরামত আলী হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ডা. আবদুল্লাহ আল মামুন ও সহকারী প্রক্টর মো. আব্দুর রহিম ঘটনাস্থলে পৌঁছান এবং গণরুমে ঢুকে র‍্যাগিং দেওয়ার সঙ্গে যুক্ত দুজনকে কম্বল মুড়ি দিয়ে থাকা অবস্থায় হাতেনাতে ধরেন এবং ক্যান্টিনে গিয়ে চারজনকে র‍্যাগিংয়ের দায়ে অভিযুক্ত হিসেবে শনাক্ত করা হয়।

এ পর্যন্ত পবিপ্রবি প্রশাসন থেকে পাওয়া বক্তব্য অনুযায়ী, ২০২২-২৩ সেশনের সাত শিক্ষার্থী এ কাজে জড়িত আছন বলে নিশ্চিত করা হয়েছে।

Pobi-2

র‌্যাগিংয়ের প্রতিবাদে নবীন শিক্ষার্থীদের ক্লাস বর্জন

এদিকে র‌্যাগিংয়ের শিকার তিন অসুস্থ শিক্ষার্থীর অবস্থা খুবই সংকটাপন্ন হওয়ায় রাতেই তাদের পবিপ্রবির হেলথ কেয়ারের কর্তব্যরত চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। পরে রাতেই পবিপ্রবির অ্যাম্বুলেন্সে করে তাদের সেখানে নিয়ে যাওয়া হয়।

র‍্যাগিং মূলত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসা নতুন শিক্ষার্থীদের ওপর পুরানো বা সিনিয়র শিক্ষার্থী কর্তৃক চালানো একটি নেতিবাচক ও অপ্রীতিকর আচরণ, যেখানে নবাগতদের মানসিকভাবে অথবা শারীরিকভাবে হয়রানি করা হয়। ম্যানার শিখানোর নামে, নবাগত শিক্ষার্থীদের বিব্রতকর প্রশ্ন করা, অসামাজিক অঙ্গভঙ্গি এবং কখনো কখনো শারীরিক নির্যাতন করা হয়, যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য ও প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার ওপরে।

এমন পরিস্থিতিতে ক্যাম্পাসে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রশ্ন উঠছে, ‘র‍্যাগিং বন্ধের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কি ব্যর্থ? তারা কি শুধু বলার জন্যেই বলে যাচ্ছেন, প্রভাব বিস্তারে তারা কি অপারগ বা তারা শুধু বলেই যাবেন আর কোমলমতি শিক্ষার্থীরা এই র‍্যাগিং নামক ভয়াবহ মানসিক অত্যাচারের শিকার হয়েই চলবে?’

এ বিষয়ে প্রক্টর অধ্যাপক আবুল বাশার খান বলেন, ‘এ পরিস্থিতি একেবারেই কাম্য নয়। এ ঘটনার সঙ্গে যে বা যারা যুক্ত রয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর থেকে কঠোরতর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। পাশাপাশি এমন পরিস্থিতি যেন পরবর্তীতে আর না ঘটে এজন্য পবিপ্রবি প্রশাসন আরো ও অধিক তৎপর হবে এবং এ জন্য সবার সহযোগিতা একান্ত কাম্য।’


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence