টিউশনির বকেয়া টাকা চাওয়ায় যবিপ্রবি শিক্ষার্থীদের মারধর, আহত ৫ 

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী  © টিডিসি

টিউশনির বকেয়া টাকা চাওয়ায় বহিরাগত সন্ত্রাসী দিয়ে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) শিক্ষার্থীদের মারধরের অভিযোগ উঠেছে তানিয়া আলম নামে যশোরের স্থানীয় এক বাসিন্দার বিরুদ্ধে। এ সময় ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের উদ্ধার করতে গেলে তার  সহপাঠীদের উপরেও হামলা করেন সন্ত্রাসীরা। এ ঘটনায় পাঁচজন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় যশোর শহরের কাঠালতলার তানিয়া আলমের নিজ বাসায় এই ঘটনা ঘটে।

ভুক্তভোগীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেক্ট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী। পরবর্তীতে যশোর কোতোয়ালি মডেল থানায় একটি হত্যা চেষ্টা মামলা দায়ের করেছেন এক শিক্ষার্থী। মামলার আসামীরা হলেন তানিয়া  আলম (৩৫), ফরিদ (২৫), ফারুক (২৫) বাচ্চু (৩০), বেলো (২৪), লুত্ব (৩০) সহ অজ্ঞাতনামা ২/৩ জন।

সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, টিউশনির পাওনা ১৬ হাজার টাকা চাওয়া নিয়ে মারধরের ঘটনার পরপরই শহর ও ক্যাম্পাস থেকে শতাধিক শিক্ষার্থী ঘটনা স্থলে আসেন এবং বিচারের দাবিতে ঐ সাংবাদিকের বাড়ির সামনেই বিক্ষোভ  শুরু করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও কয়েকজন শিক্ষক উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন। 

একপর্যায়ে,পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। পরবর্তীতে যশোর ৫৫ পদাতিক সেনাবাহিনীদের একদল সদস্য এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন। এসময় অভিযুক্ত তানিয়া আলমকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়। আহতদের যশোর সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী এজহার বলেন, আমি আসামি তানিয়া আলমের বাড়িতে তার মেয়েকে প্রাইভেট পড়াই। পড়ানো বাবদ ১৬ হাজার টাকা পাই, বারংবার চাওয়ার পরেও তিনি আমাকে বিভিন্ন কথা বলে ঘুরাতে থাকে। একপর্যায়ে গত ৯ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা সাড়ে পাঁচটার সময় আসামি তানিয়া আলম আমার বন্ধু মুরসালিন (২২) কে মোবাইল ফোনে জানায় যে, আসামি তানিয়া তার বাড়িতে আমাকে যেতে বলেছেন। আমি আমার বন্ধু শান্ত (২২) কে নিয়ে সেখানে যাই। তখন আমি, আমার স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস রিসা ও আমার বন্ধু শান্ত (২২) তানিয়ার বাড়িতে যাই।

তিনি আরও বলেন, এরপর তানিয়া আমাকে ৮ হাজার টাকা দিতে চাইলে তাকে বলি আমার পাওনা টাকা ১৬ হাজার টাকা দিতে হবে নয়তো আমি টাকা নিবো না। তখন আসামি তানিয়ার সাথে আমার তর্ক-বিতর্ক শুরু হয়। এক পর্যায়ে তিনি মোবাইল ফোনে ফরিদ, ফারুক, বাচ্চু, বেলো, লুতুদেৱকে তার বাড়িতে ডেকে আনে। এসময় তারা অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। এক পর্যায়ে আসামি তানিয়া আলম আমাকে এলোপাতাড়ি মারপিট করতে থাকে। তখন আসামীরা আমাকে এবং আমার বন্ধু শান্তকে অবৈধভাবে আটকে রেখে হত্যার উদ্দেশ্যে এলোপাতাড়ি ভাবে মারপিট করে শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম করে। 

তিনি বলেন, আসামি তানিয়া আলম আমার স্ত্রীকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে তার গলা চেপে ধরে। একপর্যায়ে আমি মোবাইল ফোনে আমার বন্ধুদের জানালে তৎক্ষণাৎ আমার বন্ধু মো. তৌহিদুল ইসলাম ও অয়ন চৌধুরী ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে আসামি ফরিদ আমার বন্ধু তৌহিদকে মারপিট করতে যায় এবং তার মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়। আসামীরা খুনের হুমকি ধামকি প্রদান করে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। এরপর আমাকে এবং আমার বন্ধু শান্তকে উদ্ধার করে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল, যশোর চিকিৎসার জন্য নিয়ে গেলে জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক আমাদের শারীরিক পরীক্ষা নিরীক্ষা করে হাসপাতালে ভর্তি করেন। বর্তমানে আমি এবং আমার বন্ধু শান্ত হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছি।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন ইইই বিভাগের চেয়ারম্যান ড. ইমরান খান, ড. মো: আমজাদ হোসেন, ড. মো: মজনুজ্জামান, শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলাম, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের বোরহানুল আসফিয়া সহ আরো কয়েকজন শিক্ষক। 

ইইই বিভাগের চেয়ারম্যান ড. ইঞ্জি. ইমরান খান বলেন, আমি এই ন্যাক্কারজনক ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই। যে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে আমরা এই নতুন বাংলাদেশ পেলাম তাদের কে কৃতজ্ঞতা না জানিয়ে তাদের ন্যায্য পাওনা থেকেই তাদের কে বঞ্চিত করা হচ্ছে। 

ঘটনাস্থলে উপস্থিত হওয়া ইইই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো: আমজাদ হোসেন ইঞ্জিনিয়ার বলেন, আমরা বিষয়টি শুনেই ঘটনাস্থলে উপস্থিত হই। একজন শিক্ষার্থী তার কষ্টের টিউশনির প্রাপ্য টাকার জন্য যেভাবে মারধরের শিকার হয়েছে এটা অত্যন্ত দুঃখের। 

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী নেছার বলেন, আমাকে বিভিন্ন রড,পাইপ, কাঠের বাটাম দিয়ে পিটিয়েছে ওরা। আমরা শরীরের হাত,পায়ে রক্ত জমাট বেঁধে কালশিটে হয়ে গেছে। আমি আমার ন্যায্য বিচার ও পাওনা টাকা চাই। 

মামলার বিষয়ে যশোর কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি মো: আব্দুর রাজ্জাক বলেন, মামলার হওয়ার পর ১ নং আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আজ কোর্টে চালান করা হয়েছে। বাকি আসামিদের আটক করার জন্য আমরা কাজ করছি।


সর্বশেষ সংবাদ