বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের ঈদ ভাবনা

ক্লাস-পরীক্ষা আর এসাইনমেন্টের ধকল, ফার্স্ট গেট থেকে সেকেন্ড গেটের দৌড়াদৌড়ি, হল থেকে ক্যাম্পাসে ছুটোছুটি, দিনের শেষে টিউশনিতে বুদ হয়ে থাকা, অতঃপর শেষ রাতে ক্লাসের হিজিবিজি নোটে মুখগুজে রাখা। এভাবেই বছর কাটে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পবিপ্রবি) শিক্ষার্থীদের। দিনের শেষ লগ্নে রাসেল চত্বরে কিংবা বকুল তলার পাশে বুক ভরে একটু শ্বাস নিতে চাইলেও হয়তো হয়ে ওঠে না। এতো হাসফাসের ভিড়ে ছুটে চলা মন প্রহর গোনে কবে ফিরে যাওয়া হবে ক্ষণিকের জন্য নিজের বেড়ে ওঠা নীড়ে।

এক সময় অপেক্ষার পালা শেষ হয়, বছর ঘুরে চলে আসে আরেকটা ঈদ। সময় আসে ব্যস্ততার রুটিন ফেলে কিছু অলস দুপুর কাটানোর, সঙ্গে প্রিয় মানুষগুলোর সঙ্গ। সে আশাতেই আমরা টিকিটের দীর্ঘ লাইনে দাঁড়াই, বিস্তর ধাক্কাধাক্কি হয়। আমার হৃৎপিণ্ড ছলকে ওঠে। যাচ্ছি তাহলে এবার? কিন্তু একটা লম্বা স্থবির অজগরের মতো মহাসড়ক আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে। আমার বুকের রক্ত হিম হয়ে আসে।

তবু আমরা যেতে চাই বাড়ি। একটু বিরতি পেলেই ছুটে যেতে চাই। ক্লান্তক্লিষ্ট শরীরে এলিয়ে পড়তে চাই নিজের পুরনো ঘরে, পুরনো বালিশ আর বিছানায়, পুরনো ঘ্রাণের ভেতর। কিছু কল্পনা আর কিছু আধো-অন্ধকার বাস্তবতার ভেতর। মাত্র কয়েকটা দিনের জন্য হলেও মনে হয় আমরা শ্বাস নিচ্ছি, মনে হয় বেঁচে আছি, কী বিস্ময়, আজও বেঁচে আছি!
এবারের ইদ নিয়ে কি ভাবছে পবিপ্রবির শিক্ষার্থীরা?

ঈদ যাত্রা নিরাপদ হোক

সংযমের মাস শেষে ভ্রাতৃত্ব আর খুশির মেলবন্ধনে আসছে ইদুল ফিতর। প্রত্যেকেই আমরা মূলের দিকে দাবিত হই সুখের জন্য, পরিবারে সাথে সুখ বিনিময় করতে। পৃথিবীতে কত রকমেরই তো সুখ আছে, তবে ঈদের আনন্দ একসাথে ভাগাভাগী করার মত সুখ বোধহয় দ্বিতীয়টি আর নেই। ট্রেনের ছাদে, আর লঞ্চে ঝুলে বাড়ী যাওয়ার এই টান, শুধুই শিকড়ের টান। প্রতিবছর কত প্রান ঝড়ে যাচ্ছে শুধু শিকড়ের টানে বাড়ী ফেরার টানে। তবুও আমাদের এই ত্যাগ আত্মতৃপ্তির। পরিবারের বাবা তার সন্তানদের জন্য সুখ কিনতে আসছিলেন ঢাকায়, ফিরতে হবে মূলে। ভাই তার বোনের জন্য আর স্বামী তার ভালোবাসার মানুষের জন্য সুখ ভাড়া করে বাড়ী ফিরছে। ‘ট্রেনের ছাদ থেকে বা লঞ্চডুবী মারা গেলো’ এমন শিরোনামে সংবাদ না হয়ে, সুখের হাতছানি দিচ্ছে পরিবারে এমন শিরোনামই বরং হোক। ঈদ বয়ে আনুক অনাবিল শান্তি এবং ভ্রাতৃত্বের বন্ধন।

সাদাফ তাজবীর মেহেদী 
সেশনঃ ২০২০-২১

বাবাদের ঈদ

দীর্ঘ একমাস সিয়াম সাধনার পর সমগ্র মুসলিম বিশ্ব যখন মেতে ওঠে ঈদের আনন্দে, বাবারা তখন পরিবারের আনন্দ দেখতেই ব্যস্ত। ঈদের আনন্দে সবাই যখন নতুন কাপড় কেনার আমেজে মেতে ওঠে বাবারা তখন পরিবারের সকলের জন্য কেনাকাটায় ব্যস্ত।পরিবারের প্রত্যেকটা সদস্যদের আলাদা আলাদা বাজেট হয় ঈদের কেনাকেটার শুধু বাজেট হয় না বাবাদের। কখনও জিজ্ঞেস ও করা হয় না বাবার বাজেট হয় না কেন? জিজ্ঞেস করা হলেও উওরটা যেন তাদের কাছে তৈরি থাকে- ‘আমার ত নতুন কাপড় আছেই অযথা টাকা নষ্ট করে কি হবে সামনেবার নিব’। কিন্তু এ সামনেবার যে কবে আসবে তা আর জানা হয় না। পুরাতন কাপড়কে নতুন বানানোর বৃথা চেষ্টায় কেটে যায় তাদের জীবণের ঈদগুলো। ঈদে সবাই সালামি পেলেও বাবা কেন পায় না তা আর জানা হয় না। ঈদের প্রকৃত আনন্দ ত তারাই ভোগ করে যারা অন্যের আনন্দে নিজেকে খুজে পায়।সালাম জানাই পৃথিবীর সকল বাবাদের যাদের জন্য আমাদের ঈদ এত্ব আনন্দময় হয়ে ওঠে।ভালো থাকুক পৃথিবীর সকল বাবারা।

মাহমুদুল হাসান 
সেশনঃ ২০২২-২৩

ইদের মিলনমেলা, সংকটের সময়েও সম্প্রীতির বন্ধন

ইদের প্রাক্কালে আমাদের হৃদয় উৎসবের আনন্দে ভরে ওঠে। পরিবার ও বন্ধুদের সাথে মূল্যবান সময় কাটানো, নতুন পোশাকের আয়োজন, এবং উপহার বিনিময় এই উৎসবের ঐতিহ্যের অংশ। বিশ্বব্যাপী পরিবর্তনশীল পরিস্থিতি অনেকের মনে উদ্বেগ ও অনিশ্চয়তা জাগিয়ে তুললেও, ইদের আনন্দ অম্লান থাকে। এই সময়ে, মানুষ তাদের দুঃখ-কষ্ট ভুলে প্রিয়জনদের সাথে মিলিত হয়ে আনন্দ উদযাপন করে। ইদের উৎসব আমাদের মনে নতুন আশা ও উদ্দীপনা জাগায়, এবং পরিবার ও বন্ধুদের সাথে কাটানো সময় গুলো আমাদের জীবনে অমূল্য স্মৃতি হিসেবে থেকে যায়। এই স্মৃতিগুলো, যত ক্ষুদ্রই হোক না কেন, প্রতিটি মূহুর্তে আবেগ ও ভালোবাসার সাক্ষী থাকে। বর্তমান পরিস্থিতি যতই চ্যালেঞ্জ নিয়ে আসুক না কেন, ইদের আনন্দ আমাদের মনের মধ্যে থাকা উষ্ণতা ও ভালোবাসাকে আরও প্রগাঢ় করে তোলে।

মাহাদি হাসান
সেশনঃ ২০২০-২১

একটি অন্যরকম ঈদ

গাজীপুরের অলি-গলি সব চেনা রনির। থাকবে নাই বা কেন,প্রতিদিন সকাল থেকে রাত অব্ধি এই শহরেই ফুল বিক্রি করতে হয় যে তাকে। ১২ বছর বয়সী রনির বাবা নেই। ৫ বছর বয়সী ছোট্ট বোন ও মা কে নিয়ে টঙ্গীর বস্তিতেই রনির স্বপ্নের বসবাস। ছোট্ট বোন ও অসুস্থ মায়ের দায়িত্ব ছোট্ট এই দুই কাধে বহন করে বেড়াতে হয় রনির। তবে রনি আজ বেশ খুশি। অন্য দশদিনের মতো আজও সারাদিন রাস্তায় ফুল বিক্রি শেষে মাগরিবের আগ মুহুর্তে লাল সবুজ বাতির নিচে জ্যামে আটকে থাকা গাড়ি থেকে কোনো এক ব্যক্তি তাকে আজ ১০০ টাকা বখশিশ দিয়েছে। রনি ভাবে ২০ টাকা দিয়ে ছোটবোনের জন্যে চূল বাধার লাল ফিতে কিনবে সে।বাকি টাকা দিয়ে সেমাই আর দুধ কিনে নিয়ে যাবে। ১ দিন পরই যে ঈদ। ছোট্ট বোন ও মা কে নিয়ে ঈদের খুশি উৎযাপন করতে রনির এই প্ল্যান যেন আমাদের হাজার হাজার টাকার ঈদের শপিং এর প্ল্যানকেও হার মানায়। আমাদের আশেপাশে এমন হাজারো রনি রয়েছে। আমাদের একটুখানি সহানুভূতি ও মানবিকতাই পারে ওদের ঈদ কে একটুখানি "অন্যরকম" করে তুলতে। ভালো কাটুক সবার ঈদ।

শাহরিয়ার ইসলাম রাফি
সেশনঃ ২০২২-২৩

আমার ঈদ, তোমার ঈদ, আমাদের সকলের ঈদ

ঈদ আমাদের জন্য আনন্দের, ঈদ আমাদের জন্য গৌরবের। এই ঈদের মাধ্যমে আল্লাহ তা'আলা যেন সবার মধ্যে এক ভ্রাতৃত্বের বন্ধন তৈরি করে দেয়। যে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন ধনী গরিব সবার মধ্যে নির্বিশেষে ছড়িয়ে পড়ে। এই ঈদুল ফিতরে যাকাত প্রদানের মাধ্যমে ধনী গরিবের মাঝে একটা সিঁড়ি তৈরি হয় যে সিঁড়ি তৈরি হওয়ার কারণে ইসলামের দ্বিনী সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি পায়। দীর্ঘ ৩০ টা দিন সাওম পালনের মাধ্যমে  আমরা এটা উপলব্ধি করতে পারি যে যারা কায়িকশ্রম করে তাদের জীবিকা নিয়ন্ত্রণ করে তাদের কষ্টটা কেমন। ঈদের আনন্দ ছড়িয়ে পড়ুক সবার মাঝে মুছে যাক গ্লানি, বয়ে যাক আনন্দের অশ্রু ধরা। সবাইকে ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা।

ফারহান সাদিক রাহাত
সেশন: ২০২১-২২


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence