পবিপ্রবি শিক্ষক-কর্মকর্তা নিয়োগে অনিয়মের ছড়াছড়ি, ব্যবস্থা নেবে ইউজিসি

পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়  © ফাইল ছবি

স্বজনপ্রীতি ও নিয়মবহির্ভূত নিয়োগে প্রশ্নবিদ্ধ পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (পবিপ্রবি) প্রশাসন। সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগে উপাচার্য ও রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। অবশ্য নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অনুমোদন না থাকা পদে নিয়োগের বিষয়টি স্বীকারও করেছেন কর্তৃপক্ষ। প্রশাসন বলছে, বারবার নিয়োগ প্রক্রিয়ার ঝামেলা এড়াতে ফাঁকা আসনের চেয়ে বেশি জনবল নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০২২ সালের ১৬ নভেম্বর প্রকাশিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি অনুসারে কর্মকর্তা ও কর্মচারীসহ মোট ৩৯ জনের নিয়োগের কথা থাকলেও গত ২ ডিসেম্বর রিজেন্ট বোর্ডে সর্বমোট ৫৮ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়।

এভাবে অনুমোদনহীন এবং নিয়মবহির্ভূত পদে নিয়োগ দেওয়া অন্যায়। ইউজিসি অবশ্যই এই ধরনের অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। -ইউজিসি

সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়টিতে সেকশন অফিসার পদে ৩ জনের পরিবর্তে ৬ জন, ল্যাব এটেন্ডেন্ট পদে ৬ জনের পবিবর্তে ৯ জন এবং অফিস সহায়ক পদে ৫ জনের পরিবর্তে ১১ জন নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

শুধু তাই নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্গানোগ্রাম তথা জনবল কাঠামোর বাহিরে গিয়ে অনুমোদনহীন পদে নিয়োগ দেওয়ায় নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সংশ্লিষ্টরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্গানোগ্রামে সর্বমোট ৩০ জন সেকশন অফিসার থাকার কথা থাকলেও বর্তমানে সেখানে ৪৪ জন কর্মরত রয়েছেন। তারপরেও অতিরিক্ত ৬ জন নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও আইকিউএসি বিভাগের হিসাবরক্ষক পদের অনুমোদন না থাকলেও ১ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

একসঙ্গে এসব নিয়োগে স্বজনপ্রীতির ছাপ দেখছেন বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের ছেলেসহ অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের পরিবারের সদস্যদের নিয়োগ দেওয়ায় এ নিয়োগ প্রক্রিয়ার বিতর্ককে নতুন মাত্রা দিয়েছে।

এসব বিষয়ে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি বিশ্ববিদ্যালয়ের এ ধরনের নিয়মবহির্ভূত নিয়োগ প্রক্রিয়াকে অন্যায় বলে উল্লেখ করেছে। একইসঙ্গে এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানানো হয়েছে।

শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রেও বিতর্ক এড়াতে পারেনি নিয়োগ বোর্ড। বিশ্ববিদ্যালয়ের পোস্ট হারভেস্ট টেকনোলজি এন্ড মার্কেটিং বিভাগের ইউজিসি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কোন অনুমোদন না থাকলেও সেখানে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

একইসঙ্গে অনুমোদনহীন এই পদের জন্য ২০২২ সালের ২৬ মে প্রকাশিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি অনুসারে ১ জন নিয়োগের কথা বলে সেখানে ২ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া শিক্ষক নিয়োগ নীতিমালায় প্রভাষক নিয়োগের ক্ষেত্রে অনুষদীয় ডিন ও বিভাগীয় চেয়ারম্যানের মতামত গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ থাকলেও এ নিয়োগে উক্ত বিভাগ সংশ্লিষ্ট কারো মতামত নেওয়া হয়নি বলে জানা যায়। একইভাবে কৃষিতত্ত্ব বিভাগে ১ জনের পরিবর্তে ২ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও বিভাগীয় চেয়ারম্যানের মতামত উপেক্ষা করে সংশ্লিষ্ট বিভাগে ল্যাব এটেন্ডেন্টসহ অন্যান্য পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

এসব অনিয়ম নিয়ে আমরা উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি আমাদের কথা গুরুত্ব সহকারে শুনেছেন এবং অনেক ক্ষেত্রে সম্মতিও দিয়েছেন। কিন্তু পরবর্তীতে দেখা গেলো ঠিকই অনিয়মগুলোও হয়েছে। -শিক্ষক সমিতি

বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ব বিভাগের চেয়ারম্যান ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আসাদুজ্জামান মিয়া জানান, বিভিন্ন বিভাগীয় প্রধানের রিকুইজিশন ছাড়া তাদের মতামত না নিয়েই কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া নীতিবহিঃর্ভূত।

তিনি বলেন, বিভাগীয় প্রধানদের অবমূল্যায়ন করে এই ধরনের অদক্ষ জনবল নিয়োগ দেওয়ায় বিভাগীয় কার্যক্রম ও বিশ্ববিদ্যালয় ক্ষতিগ্রস্ত হবে। পাশাপাশি ইউজিসি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আর্থিক অনুমোদনের বাইরে নিয়োগ দিয়ে তাদের বেতন দেওয়ায় যথেষ্ট অর্থের যোগান বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে নিতে হবে। এতে যথেষ্ট অর্থের যোগান না পেয়ে শিক্ষকদের পেনশন খাত তথা প্রভিডেন্ট ফান্ড থেকে খরচের আশংকা রয়েছে। পরে শিক্ষকরা অবসরে গেলে সঠিক সময়ে পেনশন ভাতা না পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হবে।

প্রভাষক নিচ্ছে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

এভাবে নিয়মবহির্ভূত ও অনুমোদনহীন পদসমূহে নিয়োগের ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি একাধিকবার আপত্তি জানায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতিসহ অন্যান্য মহল। তবুও সব ধরনের আপত্তি উপেক্ষা করে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এসব বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. স্বদেশ চন্দ্র সামন্তের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো কথাই বলতে রাজি হননি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. সন্তোষ কুমার বসু বলেন, বারবার বিজ্ঞপ্তি দেওয়া এবং নিয়োগ কার্যক্রম পরিচালনা করা কঠিন বিষয়। সে কারণে ফাঁকা আসনে জনবল বাড়িয়ে নিয়োগ দিয়েছি। তবে ফাঁকা আসন থাকলেই বিজ্ঞপ্তি ছাড়া নিয়মবহির্ভূত নিয়োগ দেওয়া যায় কিনা? এমন প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি।

তিনি বলেন, কিছু বিভাগে শিক্ষক সংকট থাকায় ইউজিসির অনুমোদন না থাকা সত্ত্বেও সেসব পদে নিয়োগ দিতে হয়েছে। আর যে সকল পদে ইউজিসির আর্থিক অনুমোদন নেই, সে সকল পদে অনুমোদনের জন্য আবেদন করা হবে। তাদের বেতন-ভাতার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভিডেন্ট ফান্ড থেকে অর্থ খরচ করা হবে না।

পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় রিভিউ - Engineer's Diary

এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়টির বেশ কয়েকটি নিয়োগ পরীক্ষার আগে প্রার্থী চূড়ান্তের গুঞ্জন শোনা গেছে। পরে দেখা গেছে ওইসব পদগুলোতে যাদের বিষয়ে গুঞ্জন শোনা গেছে তারাই নিয়োগ পেয়েছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে রেজিস্ট্রার অধ্যাপক সন্তোষ কুমার বসু এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক জেহাদ পারভেজ বলেন, এসব অনিয়ম নিয়ে আমরা উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি আমাদের কথা গুরুত্ব সহকারে শুনেছেন এবং অনেক ক্ষেত্রে সম্মতিও দিয়েছেন। কিন্তু পরবর্তীতে দেখা গেলো ঠিকই অনিয়মগুলোও হয়েছে।

বারবার বিজ্ঞপ্তি দেওয়া এবং নিয়োগ কার্যক্রম পরিচালনা করা কঠিন বিষয়। সে কারণে ফাঁকা আসনে জনবল বাড়িয়ে নিয়োগ দিয়েছি। -প্রশাসন

অধ্যাপক জেহাদ পারভেজ বলেন, শিক্ষকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে কথা বলেন। কিন্তু শিক্ষকদের মতামতকে অগ্রাহ্য করে এ ধরনের নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে তাদের মাঝে ক্ষোভ রয়েছে। আমরা শিগগিরই সাধারণ সভা করে এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে সিদ্বান্ত গ্রহণ করবো।

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের(ইউজিসি) সচিব ড. ফেরদৌস জামান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, এভাবে অনুমোদনহীন এবং নিয়মবহির্ভূত পদে নিয়োগ দেওয়া অন্যায়। ইউজিসি অবশ্যই এই ধরনের অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence