সংকটে জর্জরিত বশেমুরবিপ্রবির ভেটেরিনারি মেডিসিন বিভাগ

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়  © টিডিসি ফটো

প্রতিষ্ঠার প্রায় ৫ বছর পার হলেও এখনও পর্যাপ্ত শিক্ষক, ক্লাসরুমসহ প্রয়োজনীয় ল্যাবরুম নিশ্চিত হয়নি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এনিম্যাল সায়েন্স অ্যান্ড ভেটেরিনারি মেডিসিন বিভাগে। এমনকি মাত্র এক সেমিস্টার পরেই বিভাগটির প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা ইন্টার্নশিপে প্রবেশ করলেও এখন পর্যন্ত তাদের ইন্টার্নশিপ ভাতার ব্যবস্থাও নিশ্চিত হয়নি।

বাংলাদেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে তুলনামূলক পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি সায়েন্স এবং এনিম্যাল হাজবেন্ডারি বিভাগের অধীনে থাকা মোট ১৩ টি বিভাগের পাঠ্যক্রমের সমন্বয়ে বশেমুরবিপ্রবিতে এই বিভাগটির পাঠ্যক্রম তৈরি করা হয়েছে এবং একটি কম্বাইন্ড ডিগ্রি প্রদান করা হচ্ছে।

বিভাগ সূত্রে জানা যায় সঠিকভাবে বিভাগ পরিচালনার জন্য নূন্যতম ৪০ জন শিক্ষক, ল্যাবরুম, ক্লাসরুম, শিক্ষকদের রুম ও অফিস-রুমের জন্য ৫৮ স্প্যান জায়গা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে একটি টিচিং হসপিটাল প্রয়োজন। কিন্তু ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষ থেকে শুরু হওয়া এই বিভাগটিতে বর্তমানে চারটি ব্যাচে প্রায় ২৫০ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে শিক্ষক রয়েছেন মাত্র ৩ জন এবং ক্লাসরুম রয়েছে মাত্র তিনটি। এছাড়া, প্রায় ৫ বছর পার হলেও এখনও গড়ে ওঠেনি প্রয়োজনীয় ল্যাবসমূহ।

আরও পড়ুন: গুচ্ছে অসন্তোষ অধিকাংশ ভর্তিচ্ছুর, ভোগান্তি কমাতে নানা মত

বিভাগটির একাধিক শিক্ষার্থী জানান, শিক্ষক সংকটে তাদের অধিকাংশ ক্লাস বর্তমানে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দ্বারা অনলাইনে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। কিন্তু ভেটেরিনারি মেডিসিনের কোর্সসমূহ তুলনামূলক জটিল হওয়ায় অনলাইন ক্লাসের মাধ্যমে কোর্স সম্পন্ন করা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়েছে। এছাড়া নিয়মিত ল্যাবক্লাস এবং বিষয়সমূহ হাতে কলমে শেখাও তাদের জন্য অত্যন্ত জরুরি। তবে প্রয়োজনীয় ল্যাব গড়ে না ওঠায় এবং কোনো ভেটেরিনারি টিচিং হসপিটাল না থাকায় তারা অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীদের তুলনায় পিছিয়ে পড়ছেন।

চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী এস.এম.জুবায়ের আহমেদ বলেন, ‘ভেটেরিনারি মেডিসিন বিভাগের শিক্ষার্থী হিসেবে খুব স্বাভাবিকভাবেই  ইন্টার্নশিপ ভাতা,ভেটেরিনারি টিচিং হাসপাতালে প্র্যাকটিস এর সুযোগ,ল্যাব সুবিধা পাওয়ার কথা কিন্তু দুঃখের বিষয় এই সুবিধাগুলো পাওয়ার জন্য চতুর্থ বর্ষে এসেও প্রশাসনের উদাসীনতায় আমাদেরকে আন্দোলনের কথা ভাবতে হচ্ছে। প্রশাসনের ইতিবাচক সাড়া না পেলে আমরা কঠোর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবো।’

বাংলাদেশ ভেটেরিনারি স্টুডেন্ট'স এসোসিয়েশন, বশেমুরবিপ্রবি শাখার সভাপতি এবং বিভাগটির চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘সাধারণ শিক্ষার্থীদের জানামতে কয়েক বছর আগেই বিভাগে ল্যাবের ইন্সট্রুমেন্ট আসা সত্বেও টেন্ডার জটিলতায় বক্স ওপেন করা যাচ্ছে না; নেই ল্যাবের কোনো পর্যাপ্ত সুবিধা সম্বলিত রুম। এর পাশাপাশু শিক্ষক সংকট অন্য অনেক বিভাগের মতো অত্যন্ত প্রকট! মাত্র ৩জন শিক্ষকের সমন্বয়ে চলছে একটি ভেটেরিনারি বিভাগ! এতে আমাদের শ্রদ্ধেয় শিক্ষকমণ্ডলীর ওপর বাড়তি প্রেশার তৈরি হচ্ছে। সবচেয়ে জোড়ালো বিষয়টি হলো আর মাত্র ১ সেমিষ্টার পরেই বিভাগের প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা ইন্টার্নিশিপে যাবে অথচ দেশের অন্য সকল ভেটেরিনারি অনুষদের শিক্ষার্থীদের মতো আমাদের শিক্ষার্থীরা উপযুক্ত ইন্টার্নিশিপ ভাতা পাবে কিনা তা নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে ধোয়াশা।’

এই শিক্ষার্থী আরও বলেন, ‘রানিং তৃতীয় ও চতুর্থ বর্ষের হাতেকলমে শিক্ষার জন্য বিভাগের আন্ডারে বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি টিচিং হসপিটাল থাকার কথা, সেই সুবিধা থেকেও বঞ্চিত। তাছাড়া সার্জিক্যাল কিট বক্স, কোর্স রিলেটেড ট্যুর, শিক্ষকমণ্ডলী এবং শিক্ষার্থীদের জন্য পর্যাপ্ত ক্লাসরুম এর অভাব আমাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে দিয়েছে। আমরা অনতিবিলম্বে বিষয়গুলোর সুরাহার বিষয়ে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। ইতোপূর্বে অধিকার আদায়ে অন্য সকল বিভাগের যৌক্তিক আন্দোলনে আমাদের বিভাগের সমর্থন ছিলো এবং আমরাও এবার আমাদের অধিকার আদায়ের ক্ষেত্রে সকলের সহযোগিতা কামনা করছি।’

এ বিষয়ে বশেমুরবিপ্রবির কৃষি অনুষদের ডিন ড. মোজাহার আলী বলেন, ‘কৃষি অনুষদের প্রতিটি বিভাগেই সংকট রয়েছে। এই বিভাগগুলোতে অপেক্ষাকৃত অধিক শিক্ষক, ল্যাব এবং বাজেট প্রয়োজন হয়। কিন্তু এখানে সংকট এত বেশি যে রাতারাতি সমাধান সম্ভব নয়। তবে আমরা চেষ্টা করছি যতটুকু সম্ভব সমাধানের।’

ইন্টার্ন ভাতার বিষয়ে ইউজিসির পরিচালক ড. মো: আবু তাহের বলেন, ‘কোনো বিশ্ববিদ্যালয়েই ইন্টার্ণদের ভাতা প্রদানের জন্য আলাদা খাত থাকে না। বাজেটে গবেষণা খাতে দুটো ভাগ রয়েছে। একটি নিয়মিত গবেষণা এবং অপরটি অনিয়মিত গবেষণা। নিয়মিত গবেষণার বরাদ্দকৃত অর্থ শিক্ষকদের গবেষণার জন্য দেয়া হবে আর অনিয়মিত গবেষণায় বরাদ্দকৃত অর্থ শিক্ষার্থীদের গবেষণা, ইন্টার্ণশিপ ইত্যাদি ক্ষেত্রে ব্যয় হবে।’


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence