বর্ধিত উৎসব ভাতা নিয়ে হঠাৎ জটিলতা, ঈদের আগে প্রজ্ঞাপন কি হবে?

শ্রেণিকক্ষে শিক্ষক
শ্রেণিকক্ষে শিক্ষক  © ফাইল ফটো

বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের উৎসব ভাতা ৫০ শতাংশ করতে সম্মতিপত্র দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। তবে সেই পত্রে ‘কর্মচারী’ শব্দ উল্লেখ করা হয়নি। বিষয়টি সমাধানে নিজেদের মধ্যে সভা করেছে শিক্ষা ও অর্থ মন্ত্রণালয়। জটিলতা নিরসন না হওয়া পর্যন্ত বর্ধিত ভাতার প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে না বলে জানিয়েছেন দুই মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। ফলে আসন্ন ঈদুল আযহার পূর্বে বর্ধিত উৎসব ভাতার প্রজ্ঞাপন জারি করা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

উৎসব ভাতার প্রজ্ঞাপন বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব (বাজেট-১) মোহাম্মদ ফারুক-উজ-জামান দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘প্রজ্ঞাপনের বিষয়ে কিছু জানি না। কর্মচারীদের উৎসব ভাতা বৃদ্ধি করা হবে কি না সেটি সরকারের সিদ্ধান্তের বিষয়। বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে।’

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, শিক্ষক-কর্মচারী উভয়ের ক্ষেত্রেই উৎসব ভাতা ২৫ শতাংশ করে বৃদ্ধির বিষয়টি মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর তাদের জানিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আজ সোমবার (১৯ মে) অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক হয়েছে। তবে কোনো সমাধান আসেনি। 

সূত্রের দাবি, কর্মচারীদের উৎসব ভাতা ২৫ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি করে ৭৫ শতাংশ করার বিষয়টি অর্থ মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা হয়েছে। এখন অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখা এ বিষয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবেন। কর্মচারীরা বর্ধিত উৎসব ভাতা পাবেন কি না সেটি নির্ভর করছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ওপর। বিষয়টি সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত বর্ধিত উৎসব ভাতার প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে না। 

নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের এক কর্মকর্তা দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘কর্মচারীরা আগে থেকেই ৫০ শতাংশ উৎসব ভাতা পান। যার ফলে তাদের উৎসব ভাতা বৃদ্ধির প্রস্তাবটি প্রথমে আমলে নেওয়া হয়নি। তবে মাউশির পক্ষ থেকে বিষয়টি তুলে ধরার পর আমরা অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করেছি। আশা করছি বিষয়টি নিয়ে একটি সমাধান হবে।’

ঈদের আগে বর্ধিত উৎসব ভাতার প্রজ্ঞাপন জারি হবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে ওই কর্মকর্তা আরও জানান, ‘অর্থ মন্ত্রণালয় এখনো সারমর্ম তৈরি করতে পারেনি। বিষয়টি নতুন করে দেখা হচ্ছে। কর্মচারীদের উৎসব ভাতা যুক্ত হবে কি না সেটি মূলত অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে। আমাদের হাতে এখনো সময় আছে। আমরা চেষ্টা করছি ঈদের আগেই যেন বর্ধিত উৎসব ভাতার প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। তবে এ বিষয়ে নিশ্চিতভাবে কিছু বলা যাচ্ছে না।’

জানা গেছে, গত ২১ এপ্রিল শিক্ষক-কর্মচারীদের ভাতা বৃদ্ধির প্রস্তাব শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগে পাঠায় মাউশি। সংস্থাটির মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আজাদ খান স্বাক্ষরিত প্রস্তাব সংক্রান্ত চিঠিতে বলা হয়, ‘২০২৪-২৫ অর্থবছরে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের ঈদুল আযহার উৎসব ভাতা বৃদ্ধিকরণের লক্ষ্যে বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়সমূহ ও বেসরকারি মহাবিদ্যালয়সমূহের ভাতাদি বাবদ সহায়তা থেকে ২২৯ কোটি টাকা পুনঃ উপযোজন করা প্রয়োজন।’

পরবর্তীতে মাউশির এ চিঠি অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে ভাতা বৃদ্ধির বিষয়ে সম্মতি দিয়ে গত ১৪ মে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব বরাবর একটি চিঠি পাঠানো হয়।

এ চিঠিতে বলা হয়, ‘মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অধীন মাধ্যমিক উচ্চ ও শিক্ষা অধিদপ্তরের আওতাধীন ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সংশোধিত পরিচালন বাজেট হতে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত এমপিওভুক্ত শিক্ষকগণের ভাতাদি বাবদ সহায়তা প্রদানের নিমিত্ত ২২৯ কোটি টাকা পুনঃউপযোজনে নির্দেশক্রমে অর্থ বিভাগের সম্মতি জ্ঞাপন করা হলো।’ 

অর্থ মন্ত্রণালয়ের এ চিঠিতে কেবল শিক্ষকদের ভাতা বৃদ্ধির কথা উল্লেখ করায় বিপাকে পড়েছেন স্কুল-কলেজে কর্মরত কর্মচারীরা। পরবর্তীতে বিষয়টি পুনরায় বিবেচনা করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করে মাউশি। মাউশির অনুরোধের পর কর্মচারীদেরও উৎসব ভাতা বৃদ্ধি নিয়ে কাজ শুরু করেছে দুই মন্ত্রণালয়। এটি সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত উৎসব ভাতার বর্ধিত প্রজ্ঞাপন জারি হবে না। ফলে ঈদের আগে বর্ধিত উৎসব ভাতা পাওয়া নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।


সর্বশেষ সংবাদ