শিক্ষার্থী মূল্যায়ন পদ্ধতি নিয়ে যা জানালেন শিক্ষামন্ত্রী

শিক্ষামন্ত্রী
শিক্ষামন্ত্রী  © সংগৃহীত

নতুন শিক্ষাক্রমে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের বিষয়ে ইতিমধ্যে মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তরগুলো ও এনসিটিবির সমন্বয়ে গঠিত কমিটি কাজ করছে জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেছেন, বছরের মাঝামাঝি সময়ের আগেই শিক্ষার্থী মূল্যায়ন পদ্ধতি চূড়ান্ত হবে।

রবিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) সকালে ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ৭ম সমাবর্তনে মন্ত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য ও রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের পক্ষে তার প্রতিনিধি হিসেবে সমাবর্তনে অংশ নেন। সমাবর্তন অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন মন্ত্রী। এর আগে সমাবর্তনের উদ্বোধন ঘোষণা করেন তিনি। 

মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, বিদ্যমান ও পূর্বের মূল্যায়ন পদ্ধতি এবং নতুন কারিকুলামে নতুন যে মূল্যায়ন পদ্ধতির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, তা নিয়ে কমিটি কাজ করছে। ইতিমধ্যে নৈপুণ্য অ্যাপের মাধ্যমে আমরা অনেক তথ্য পাচ্ছি। সেগুলো পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে কতটুকু শিখনকালীন মূল্যায়ন, কতটুকু সামষ্টিক মূল্যায়ন এবং কতটুকু লিখিত মূল্যায়ন থাকবে। কমিটির দেড় মাস সময় অতিক্রান্ত হয়েছে। বছরের মধ্যবর্তী সময়ের আগেই আমরা শিক্ষাবিদ, বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে পরিপূর্ণ একটা সিদ্ধান্ত নিতে পারব। 

এর আগে সমাবর্তনে সভাপতির বক্তব্যে তিনি বলেন,  প্রধানমন্ত্রী আমাদের নির্দেশনা দিয়েছেন, বিশ্বের যেসব ভাষা বহুল প্রচলিত সেসব ভাষায় আমাদের শিক্ষার্থীরা যাতে করে দক্ষ হয়ে ওঠেন। প্রচলিত এসব ভাষায় আমাদের শিক্ষার্থীরা দক্ষ না হলে কর্মসংস্থানের দিক থেকে পিছিয়ে যাওয়াটা হবে স্বাভাবিক।

তিনি বলেন, ভাষা ছাড়াও অনেক সফট স্কিল রয়েছে। এসব স্কিলের দিক থেকেও আমরা যদি পিছিয়ে থাকি তাহলে শুধুমাত্র গ্র্যাজুয়েট হয়ে কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা আমাদের পক্ষে অনেক কঠিন হয়ে যাবে।

বিশ্ববিদ্যালয়টির ৭ম সমাবর্তনে ৩ হাজার ৯৫৪ জন শিক্ষার্থীকে গ্র্যাজুয়েশন ও পোষ্ট গ্র্যাজুয়েশন ডিগ্রি দেওয়া হয়েছে। এছাড়া কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফলের জন্য আরও চারজন শিক্ষার্থীকে স্বর্ণপদক প্রদান করা হয়।

গ্র্যাজুয়েটদের উদ্দেশ্যে মন্ত্রী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্রিয়াটা একটা বিশ্ব নাগরিক তৈরি করার প্রক্রিয়া। সমগ্র বিশ্বে এখন দক্ষ, যোগ্য ও অভিজ্ঞ কর্মীর চাহিদা বেড়েছে। সমগ্র বিশ্বের শ্রম বাজার আমাদের জন্য উন্মুক্ত।

‘আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলোতে যদি দেখি, সেসব দেশে আরবি-ফরাসি ভাষা শিখে বিশ্ব নাগরিক হওয়ার জন্য তাদের তরুণ প্রজন্ম সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। আমাদেরকেও এ প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে হবে। এজন্য যেভাবে দক্ষ ও যোগ্য হওয়া যায়, শিক্ষার্থীদের সেভাবে গড়ে তুলতে হবে।’

মানসম্পন্ন-দক্ষ কর্মীর অভাবে বিদেশি পেশাজীবীরা এদেশে এসে শ্রমবাজার দখল করছে বলে উল্লেখ করেছেন শিক্ষামন্ত্রী। তিনি বলেন, পৃথিবীর নানান দেশ থেকে প্রশিক্ষিত, উচ্চশিক্ষিত ও দক্ষ পেশাজীবীরা এসে কাজ করছেন। 

গ্র্যাজুয়েট শিক্ষার্থীদের কাছে প্রশ্ন রেখে মন্ত্রী বলেন, আপনারা কেন বিদেশি পেশাজীবীদের এ জায়গা দখল করতে পারবেন না? যারা ইতোমধ্যেই গ্র্যাজুয়েট হয়েছেন, তাদের উদ্দেশ্যে বিনীত নিবেদন থাকবে—ক্যারিয়ার প্ল্যানিংটা আপনারা অবশ্যই করবেন।

তিনি বলেন, যেসব খাতে বিদেশি পেশাজীবীরা কর্মরত আছেন—সেসব খাতগুলোতে আপনারা দেখবেন, এসব পেশাজীবীরা সুনির্দিষ্ট কিছু দক্ষতার কারণে এদেশে কাজের সুযোগ পেয়েছেন। যারা কর্মদাতা, তারা কিন্তু শুধুমাত্র গ্র্যাজুয়েট বলে কাউকে চাকরি দেন না।

‘‘তারা দেখতে চান—তাদের যে ধরনের প্রয়োজনীয় শিক্ষা, যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা প্রয়োজন, সেটা প্রার্থীর আছে কিনা। চাকরি দাতাদের এখানে বক্তব্য হচ্ছে, আমাদের সন্তানদের অনেকে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করলেও প্রয়োজনীয় দক্ষতায় ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। আমরা অনুরোধ করবো, আপনারা সেসব ঘাটতিগুলো পূরণে কাজ করবেন।’’

সমাবর্তনে বিশেষ অতিথি হিসিবে উপস্থিত ছিলেন ইউজিসি (ভারপ্রাপ্ত) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর। এতে বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ব্র্যাক ইউনিভাসিটির অধ্যাপক ইমেরিটাস এবং পানি সম্পদ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত।

সমাবর্তন অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টিজর চেয়ারম্যান হাসান মাহমুদ রাজা এবং ইউআইইউর উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আবুল কাশেম মিয়া।


সর্বশেষ সংবাদ