তিন ধরনের জটিলতায় পাঠ্যবই ছাপায় বিলম্ব
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ১৩ ডিসেম্বর ২০২৩, ১০:৫২ AM , আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০২৩, ১১:০৩ AM
নতুন বছরের আর মাত্র ১৭ দিন বাকি থাকলেও বই উৎসবের সামগ্রিক প্রস্তুতি এখনো শুরু হয়নি। মাধ্যমিকের বই ছাপার কাজ পিছিয়ে আছে। এর মধ্যে বেশি পিয়েছে আছে অষ্টম ও নবম শ্রেণির ছাপার কাজ। তাই বাকি সময়ে সব বই ছাপার কাজ শেষ করে বছরের প্রথম দিন শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেওয়া নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। মূলত তিন কারণে এ বছর সঠিক সময়ে পাঠ্যবই ছাপানোয় সংকট তৈরি হয়েছে বলে ছাপাখানা মালিক ও এনসিটিবি সূত্রে জানা গেছে।
এর মধ্যে নতুন শিক্ষাক্রমের আলোকে তৈরি করা ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান, বিজ্ঞান বিষয়ের ‘অনুশীলন পাঠ’ ও ‘অনুসন্ধানী পাঠ’ অধিকতর যাচাই কার্যক্রম; ছাপাখানা মালিকদের ব্যাংক ঋণ জটিলতা; এর বাইরে রাজনৈতিক কর্মসূচির মধ্যে উপজেলা পর্যায়ে যথাসময়ে পাঠ্যবই সরবরাহের অনিশ্চয়তা।
এবার নতুন শিক্ষাক্রমে প্রাথমিকের দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির বই যুক্ত হচ্ছে। ফলে যাচাই-বাছাই শেষ করে পাণ্ডুলিপি (বইয়ের খসড়া) পেতে দেরি হয়েছে। -অধ্যাপক ফরহাদুল ইসলাম, চেয়ারম্যান, এনসিটিবি
তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে যে, এবার নির্বাচনী কাজে স্কুল ও শিক্ষকরা ব্যস্ত থাকায় দেশব্যাপী একযোগে ১ জানুয়ারি হয়তো প্রতি বছরের মতো উৎসব হবে না, তবে বই বিতরণ এবং এই উৎসব চলবে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত।
এ ছাড়া নতুন শিক্ষাক্রমের আলোকে অষ্টম ও নবম শ্রেণির বই তৈরি করা হচ্ছে। এসব শ্রেণিতে থাকছে ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান, বিজ্ঞান বিষয়ের ‘অনুশীলন পাঠ’ ও ‘অনুসন্ধানী পাঠ’। বিষয়গুলো অধিকতর যাচাই-বাছাই করে পাণ্ডুলিপির অনুমোদন পেতে দেরি হয়েছে। আগের বছর ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির এসব বিষয় নিয়ে সমালোচনা হয়েছিল।
এদিকে, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন আগামী ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে। এর ফলে ১ জানুয়ারি বই উৎসব হবে কি না- এ নিয়ে সংশয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। নির্বাচনের কারণে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো ভোটকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করার কারণে সিদ্ধান্তও নিতে পারছে না মন্ত্রণালয়।
শেষ পর্যন্ত ১ জানুয়ারি বই উৎসব করতে না পারলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিক বই বিতরণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করতে পারেন। এরপর ১৫ দিনব্যাপী চলবে বিতরণ উৎসব।
নির্বাচন সামনে রেখে চলতি বছর নভেম্বরের মধ্যে বিনা মূল্যের পাঠ্যবই ছাপানোর উদ্যোগ নেয় জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। তবে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ শেষেও চারটি শ্রেণির ১০টি বইয়ের ছাপার কাজ শুরু করতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি।
এনসিটিবি সূত্রমতে, এবার প্রাথমিকে বই ৯ কোটি ৩৮ লাখের বেশি এবং মাধ্যমিক স্তরের বই ২১ কোটি ৩২ লাখের বেশি। জাতীয় নির্বাচনের বিষয়টি মাথায় রেখে এবার পাঠ্যবই ছাপার প্রক্রিয়া আগে শুরু করেছিল এনসিটিবি। এই প্রক্রিয়ায় প্রাথমিক স্তরে পাঠ্যবই ছাপার কাজ প্রায় শেষ করে উপজেলা পর্যায়ে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু মাধ্যমিকের বই ছাপার কাজ শেষ হয়নি। এর মধ্যে অষ্টম ও নবম শ্রেণির ছাপার কাজ বেশি পিছিয়ে পড়েছে।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. ফরহাদুল ইসলাম বলেন, এবার অষ্টম শ্রেণিতে মোট বইয়ের সংখ্যা ৫ কোটি ৩৪ লাখ ৮৪ হাজার ২৭১টি। এর মধ্যে গত মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত তথ্য হলো, এই শ্রেণির ২১ শতাংশ বই ছাপিয়ে উপজেলা পর্যায়ে পাঠানো হয়েছে। নবম শ্রেণিতে মোট বইয়ের সংখ্যা ৫ কোটি ৬ লাখ ৮৪ হাজার ৫৭৩টি। এর মধ্যে মাত্র ৯ শতাংশ বই ছাপিয়ে উপজেলা পর্যায়ে পাঠানো হয়েছে।
বাংলাদেশ মুদ্রণ শিল্প সমিতির সাবেক সভাপতি তোফায়েল খান বলেন, নির্বাচন সামনে রেখে এবার আগেই বই ছাপার কাজ শেষ করার কথা বলেছিল এনসিটিবি। কিন্তু এখনো তা সম্পন্ন করা যায়নি। বই লেখার কাজটি আরও আগেই শেষ করা উচিত ছিল। ফলে এবার সময়মতো সব বই দেওয়া যাবে কি না, তা নিয়ে শঙ্কা আছে। তা ছাড়া এসব বই ছাপিয়ে চলমান হরতাল-অবরোধের মধ্যে উপজেলা পর্যায়ে পাঠানোর কাজটিও সহজ নয়।
নির্বাচন সামনে রেখে এবার আগেই বই ছাপার কাজ শেষ করার কথা বলেছিল এনসিটিবি। কিন্তু এখনো তা সম্পন্ন করা যায়নি। -তোফায়েল খান, সাবেক সভাপতি, বাংলাদেশ মুদ্রণ শিল্প সমিতি
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. ফরহাদুল ইসলাম বলেন, প্রাথমিকের বই অক্টোবরের মধ্যে শেষ করার পরিকল্পনা ছিল। এবার নতুন শিক্ষাক্রমে প্রাথমিকের দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির বই যুক্ত হচ্ছে। ফলে যাচাই-বাছাই শেষ করে পাণ্ডুলিপি (বইয়ের খসড়া) পেতে দেরি হয়েছে।
তিনি বলেন, তবে নভেম্বরে প্রায় শতভাগ বই সরবরাহ শেষ করা হয়েছে। দশ ভিসা নামের একটি প্রতিষ্ঠান প্রাথমিকের কিছু বই দিতে পারেনি। এর আগেও প্রতিষ্ঠানটি এমন কাজ করেছে, তাই তাদের কাছ থেকে আমরা আর বই নেব না। বাকি বই অন্য ছাপাখানা থেকে সমন্বয় করা হবে।