২৫% মার্কেট শেয়ার নিয়ে দেশের টেলিভিশন শিল্পের দখলে ওয়ালটন: গবেষণা

দেশের টেলিভিশন শিল্পের উপর গবেষণাপত্র প্রকাশ অনুষ্ঠান
দেশের টেলিভিশন শিল্পের উপর গবেষণাপত্র প্রকাশ অনুষ্ঠান  © টিডিসি ফটো

দেশের টেলিভিশন শিল্পের উপর একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছে মার্কেটিং ওয়াচ বাংলাদেশ (MWB) নামের একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান। চলতি বছরের মার্চ-মে মাসে টেলিভিশন শিল্পের উপর দেশব্যাপী এ গবেষণা কার্য পরিচালনা করেছিল প্রতিষ্ঠানটি। আজ বুধবার (২৪ নভেম্বর) দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের অফিসে এ অনুষ্ঠানে এ গবেষণাপত্রটি প্রকাশ করা হয়।

এ সময় গবেষণাপত্রটি উপস্থাপন করেন মার্কেটিং ওয়াচ বাংলাদেশ এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও ঢাবির মার্কেটিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. নাজমুল হুসেইন। এসময় আরও উপস্তিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের চেয়ারম্যান ও মার্কেটিং ওয়াচ বাংলাদেশ এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক ড. মো. মিজানুর রহমান, মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক ড. রাজিয়া বেগম, অধ্যাপক ড. আবুল কালাম আজাদ, সহকারী অধ্যাপক শাহীন আহমেদ চৌধুরী, ও সহযোগী অধ্যাপক রাফিউদ্দীন আহমেদ।

গবেষণাপত্রে দেশের ইলেকট্রনিক্স পণ্যের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ বাজার সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, বিগত এক দশকে বাংলাদেশের ইলেকট্রনিক্স পণ্যের বাজার ক্রমবর্ধমান হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২০ সালে এই বাজারের আকার ছিল ৩.১৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। প্রবৃদ্ধির হার বজায় থাকলে ২০২৫ সালে এ বাজারের আকার দাঁড়াতে পারে ৫.১৭ মার্কিন বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

টেলিভিশনের মার্কেট সাইজ ও মার্কেট শেয়ারের ব্যাপারে বলা হয়েছে, সামগ্রিক ইলেকট্রনিক্স পণ্যের বাজারের মতই টেলিভিশনের বাজারও ক্রমবর্ধমান। বর্তমানে বাংলাদেশে মোট বিক্রিত ইলেকট্রনিকস পণ্যের মধ্যে টেলিভিশনের মার্কেট সাইজ ৩৩.০৩ শতাংশ। ২০২০ সালে টেলিভিশনের মার্কেট সাইজ ছিল ৬৩৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। যা ২০২৫ সালে বেড়ে দাঁড়াতে পারে ৯৪০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে।

গবেষণায় দেখা গেছে, দেশের টেলিভিশন শিল্পে ২৫ শতাংশ মার্কেট শেয়ার নিয়ে ওয়ালটন মার্কেট লিডার হিসেবে রয়েছে। তাছাড়াও শীর্ষ চারটি ব্র্যান্ডের মধ্যে স্যামসাং ১১ শতাংশ, সিঙ্গার ৯ শতাংশ, সনি ৫ শতাংশ এবং এলজি ৪ শতাংশ করে বাজার দখল করে আছে। দেশীয় ব্যবহৃত ব্র্যান্ডের মধ্যে ভিশন, মিনিস্টার, মাই চয়েস, যমুনা ও নোভা এবং আন্তর্জাতিক ব্যান্ডের মধ্যে স্যামসাং, এলজি, প্যানাসনিক, তোসিবো, ফিলিপস, সানিয়ী ও শাওমি উল্লেখযোগ্য।

তাছাড়াও গবেষণাপত্রে, দেশের টেলিভিশন শিল্পে গ্রে মার্কেটের খারাপ প্রভাব, এই শিল্পে ক্রেতাদের সন্তুষ্টি-অসন্তুষ্টির মাত্রা যাচাইকরনের তথ্যসহ টেলিভিশন ব্যবহারকারীদের বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ পর্যালোচনা করা হয়েছে।

দেশীয় টেলিভিশন ব্র্যান্ডের আরো বিকাশ সাধনে এসমস্ত ব্র্যান্ডের করণীয় সম্পর্কে বলা হয়েছে, দেশীয় টেলিভিশনগুলোর এমনভাবে প্রমোশনাল ডিজাইন করতে হবে যাতে টেলিভিশন ক্রয়ে যারা ভূমিকা রাখেন তাদের সবাইকেই স্পর্শ করে। আরো বলা হয়েছে, শুধুমাত্র অধিক পরিমাণ বৃদ্ধির প্রতি নজর না দিয়ে কোয়ালিটি বৃদ্ধি করতে হবে।

তাছাড়াও উচ্চবিত্ত ক্রেতাদের মনোযোগ আকর্ষণে মাল্টিব্র‍্যান্ডিং পদ্ধতি অনুসরণ করা, লেটেস্ট ফিচার যোগ করা, ওয়ারেন্টি অনুযায়ী কাস্টমার সেবা প্রদান করা, অনলাইন মার্কেটিং, ফ্রি ইনস্টলেশন ও ডেলিভারি, ইএমআই সুবিধা প্রদান করা, ক্রেতাদের অভিযোগ শোনার জন্য ২৪/৭ কল সেন্টার এবং চ্যাটবটের মত উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করাসহ গবেষণা ও উন্নয়নে (R&D) দেশী ব্র‍্যান্ডগুলোকে অধিক পরমানে বিনিয়োগ করতে হবে।

দেশীয় টেলিভিশন শিল্পের বিকাশে সরকারের করণীয় সম্পর্কে বলা হয়েছে, সরকারকে নকল টিভির আমদানি সংযোজন ও বিক্রি বন্ধ করতে হবে। তাছাড়া গ্রে মার্কেটকে নিরুৎসাহিত করার জন্য বিদেশি টিভির উপর বর্ধিত কর আরোপ এবং কর আদায় নিশ্চিত করা, দেশীয় শিল্পকে উৎসাহিত করতে টিভি তৈরীর সরঞ্জাম ও কাঁচামাল আমদানিতে কর কমানোসহ রপ্তানি প্রক্রিয়া সহজীকরণ এবং রপ্তানিকারকদের জন্য সরকারকে আর্থিক প্রণোদনার ব্যবস্থা করতে হবে।


সর্বশেষ সংবাদ