অনলাইন আয়ের নামে প্রতারিত হচ্ছেন ঘরবন্দি শিক্ষার্থীরা

  © ফাইল ফটো

অনলাইন আয়ের নামে টাকা হাতিয়ে নিয়ে প্রতারণার ঘটনা হরহামেশাই ঘটে থাকে। তবে চলমান লকডাউন এসব অসাধু মানুষদের জন্য উন্মোচন করেছে প্রতারণার এক বৃহৎ দ্বার। ‘লকডাউনে ঘরে বসেই ইনকাম করুন’ ধাঁচের ব্যানারে বেড়েছে প্রতারক চক্রের দৌরাত্ম। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ভুক্তভোগী হচ্ছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

শুরুতে সদস্যদেরকে কিছু টাকা পেমেন্টের মাধ্যমে নিজেদেরকে বিশ্বাসযোগ্য হিসেবে উপস্থাপন করে এসব চক্র। পরে, এই বিশ্বাসযোগ্যতাই ভর করে যখন সদস্য সংখ্যা বাড়তে থাকে, হাজার হাজার সদদ্যের বিনিয়োগকারীর টাকা একত্রিত হয়ে পরিণত হয় মোটা অঙ্কে, ঠিক এমন সময় সুযোগ বুঝে লাপাত্তা হয় তাদের যাবতীয় কার্যক্রম, ওয়েবসাইটও।

ভুক্তভোগী এমনই এক শিক্ষার্থী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অনিরুদ্ধ বিশ্বাস রুদ্র। তিনি বলেন, গত জুন মাসের দিকে শুরু হয় ‘homeworkbeta’ নামের অনলাইন ইনকামের একটা প্ল্যাটফর্ম। বন্ধুদের মারফতে জানতে পারি এই ওয়েবসাইটের ব্যাপারে। অনেকে পেমেন্ট পেয়েছে দেখে আমিও আগ্রহী হয়ে রেজিস্ট্রেশন করি। অ্যাকাউন্ট চালু করতে প্রায় ৪০০ টাকার মতো পেমেন্ট করতে হয় সাইটের এজেন্ডদের কাছে।

তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন প্রকার বিজ্ঞাপন দেখার মাধ্যমে অ্যাকাউন্টে জমা হয় ইউএস ডলার। সেই ডলার ভাঙ্গিয়ে স্থানীয় বিভিন্ন মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টে টাকা ট্রান্সফারের সুযোগ রাখে তারা।

তবে সমস্যার গোড়াপত্তন গত ২১ জুলাই থেকে। পেমেন্ট দিতে নানা রকম টালবাহানা শুরু করে তারা। কখনও বলে, ‘ওয়েবসাইট রক্ষণাবেক্ষণের কাজ চলছে’, কখনও আবার ‘ঈদের পরে পেমেন্ট দেওয়া হবে’। ততদিনে সদস্য সংখ্যা লাখ ছাড়িয়েছে, সদস্যদের ইনভেস্ট করা টাকার একত্রিত অঙ্কটাও ফুলে-ফেঁপে হয়েছে বেশ বড়।

পরে গত ৬ আগস্ট পেমেন্ট দেওয়ার কথা থাকলেও ‘ওয়েবসাইট হ্যাক হয়েছে’ কারণ দেখিয়ে তারা তারিখ পরিবর্তন করে। এরপর ৮ আগস্ট হুট করেই তারা বলে, ওয়েবসাইটের কাজ বন্ধ করে দিলাম। যেসব এজেন্টদের কাছে ইনভেস্টের টাকা দিয়েছিলাম তাদেরকেও আর ফোনে পাওয়া যাচ্ছে না।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়েরই আরেক শিক্ষার্থী তহুরা জিফনা, জানালেন তার অভিজ্ঞতা। তিনি বলেন, প্রতিদিন ছয়টা করে অ্যাড থাকতো। সবগুলো দেখলে ০.৫ ডলার অ্যাকাউন্টে যোগ হতো। আর কেউ যদি রেফার করে অন্য বন্ধুকে রেজিস্ট্রেশন করিয়ে দিত, অতিরিক্ত যোগ হতো ২ ডলার করে। কিন্তু পরবর্তীতে অ্যাডের সংখ্যা কমিয়ে চারটা ও সেগুলো দেখলে ০.৪ ডলার যোগ হতে থাকে এবং বন্ধুদের রেফার করলে ১ ডলার করে। এর কিছুদিন পরেই ‘homeworkbeta’ নামের সেই ওয়েবসাইটই বন্ধ করে দেয় তারা।

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী মিরাজ আহমেদ। তিনিও ভুক্তভোগী হয়ে খুইয়েছেন বেশ কিছু টাকা। তিনি বলেন, ক্যাম্পাসের বড় ভাইদের থেকে প্রথম জানতে পারি। পরে রেজিস্ট্রেশন করে ৪১০ টাকা দিয়ে ৫ ডলার অ্যাকাউন্টে যোগ করি ‘অ্যাকাউন্ট চালু’ করার জন্য। নির্দিষ্ট ‘টাস্ক’ সম্পন্ন করার কিছুদিন পর নিজের অ্যাকাউন্টে জমা হয় প্রায় ২০ ডলারের মতো। কিছু টাকা পেলেও অ্যাকাউন্টের সিংহভাগই পরে আর দেওয়া হয়নি। খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না ‘Admobnetwork’ নামের সেই ওয়েবসাইটটিও।

এদিকে অনলাইন-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, দেশে অনলাইন আউটসোর্সিং ও এমএলএম নিয়ে কোনো নীতিমালা না থাকায় অসাধু এই মানুষরা অনেকেই সহজে প্রতারণার আশ্রয় নিতে পারছেন।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence