যাকাত ও আর্থিক অনুদান প্রদানে চালু হলো ‘একদেশ’

  © টিডিসি ফটো

যাকাত কিংবা আর্থিক অনুদান যেকোন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে সহজে প্রদানের লক্ষ্যে চালু হয়েছে দেশের প্রথম ক্রাউন্ডফান্ডিং ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ‘একদেশ’। আজ শুক্রবার (১৫ মে) অনলাইন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এই প্ল্যাটফর্মের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করেন।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যুক্ত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক এসডিজি বিষয়ক প্রধান সমন্বয়ক ও বাংলাদেশ স্কাউটস এর সভাপতি মোঃ আবুল কালাম আজাদ। সভাপতিত্ব করেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সিনিয়র সচিব এন এম জিয়াউল আলম। এটুআই-এর ডিজিটাল ফিনান্সিয়্যাল সার্ভিস বিষয়ক প্রোগ্রাম ম্যানেজার তহুরুল হাসান দেশের প্রথম ক্রাউন্ডফান্ডিং প্ল্যাটফর্ম ‘একদেশ’ এর প্রেক্ষাপট ও কার্যক্রম বিষয়ে উপস্থাপনা প্রদান করেন। 

করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে ক্ষতিগ্রস্থ দরিদ্র মানুষ ও ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসমূহকে আর্থিক সহায়তার জন্য ডিজিটাল প্রযুক্তি নির্ভর ‘একদেশ’ প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল ও ইসলামিক ফাউন্ডেশনসহ বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সারাদেশের বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ যাকাত কিংবা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আর্থিক অনুদান প্রদান করতে পারবেন।

আর্থিক অনুদান একদেশ ওয়েবসাইটে (https://ekdesh.ekpay.gov.bd/) প্রবেশ করে অথবা ‘একদেশ’ অ্যাপের মাধ্যমেও প্রদান করা যাবে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের এটুআই ক্রাউডফান্ডিং মডেলের এই ‘একদেশ’ নামক ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মটি তৈরি করেছেন। এটি বিদ্যমান পেমেন্ট পদ্ধতি সহজিকরণে তৈরিকৃত ‘একপে’ প্ল্যাটফর্মের সাথে যুক্ত।

এই প্ল্যাটফর্মে যে কেউ তাঁর সামান্য আর্থিক সহযোগিতা কিংবা যাকাত পছন্দনীয় যেকোন সরকারি-বেসরকারি প্ল্যাটফর্মে যেকোন ব্যাংকিং চ্যানেলের সহযোগিতায় প্রদান করতে পারবেন। পছন্দের প্রতিষ্ঠানটি সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়ায় এই সাহায্য পৌঁছে দেবে অসহায় মানুষের কাছে।

ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, ব্র্যাক, বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন, সেন্টার ফর যাকাত ম্যানেজমেন্ট, সিআরপি, সাজেদা ফাউন্ডেশন এই প্ল্যাটফর্মের সাথে যুক্ত হয়েছে। এ কার্যক্রমে যুক্ত থাকবে জরুরি খাদ্য সহায়তা বা ত্রাণ বিতরণ, চিকিৎসা সেবা, স্বাস্থ্য সুরক্ষার উপকরণ, নগদ অর্থ সহায়তা, ভাসমান ও দুস্থ মানুষের পূনর্বাসনসহ সুবিধাবঞ্চিতদের সহযোগিতা করা।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, ‘একদেশ’ প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে দাতা এবং গ্রহীতার মধ্যে একটি সেতুবন্ধন তৈরি করবে। তিনি উল্লেখ করেন, দূর্ভিক্ষ খাদ্যের অভাবে হয় না, বরং সুষ্ঠু বন্টনের অভাবে হয়ে থাকে। সারাদেশের মানুষের যাকাত এবং আর্থিক অনুদানের এই সেতুবন্ধন তৈরির মাধ্যমে সুষ্ঠ বন্টনের পথে এগিয়ে যাবো আমরা।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে প্রত্যেকে তাঁর যাকাত বা অনুদান ঠিক যেখানে প্রদান করতে চান সেখানেই প্রদান করতে পারবেন। এই সেতুবন্ধনকে করোনা পরবর্তীতে সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগের বিভিন্ন বিনিয়োগ ক্ষেত্রেও কাজে লাগানোর পরামর্শ প্রদান করেন।

তিনি আরো বলেন, সরকার ইতোমধ্যে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি মোকাবেলায় পাঁচ কোটির বেশি মানুষকে খাদ্য সহায়তা এবং নগদ অর্থ সহায়তা প্রদান করেছে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রতিমন্ত্রী সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি একদেশ প্ল্যাটফর্মের সাথে যুক্ত বেসরকারি উদ্যোগের কার্যক্রম সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরেন। তিনি জানান, ব্র্যাক ইতোমধ্যে দেশের দুই লাখ পরিবারকে ১৫০০ টাকা করে আর্থিক সহায়তা প্রদান করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর মাধ্যমে কভিড-১৯ দূর্যোগে চাকুরী হারানো প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মাঝে চাল, ডাল, ছোলা, তেল, ময়দা’সহ ১০ দিনের খাদ্যসমাগ্রী বিতরণ করছে।

এছাড়া প্রতিদিন ঢাকা ও চট্টগ্রামে ২৪ হাজার ছিন্নমূল মানুষের মাঝে রান্না করা খাবার বিতরণ করছে এবং প্রতিদিন বিভিন্ন হাসপাতাল ও জনপদে ৯ হাজার লিটার জীবাণুনাশক ছিটানো হচ্ছে। সিআরপি দেশব্যাপী বিস্তৃত ১২টি কেন্দ্রে আগত প্রতিবন্ধী রোগী, তাদের পরিচর্যাকারী, ভিজিটর ও অন্যান্যদের মাস্ক এবং হ্যান্ড স্যানিটাইজার এর ব্যবস্থা করছে এবং সিআরপিতে অবস্থানরত রোগীদের জন্য ব্যক্তিগত নিরাপত্তা সামগ্রী যেমন- গাউন, টুপি, মাস্ক, গ্লাভস এবং চশমা ইত্যাদির ব্যবস্থা করছে।

সেন্টার ফর যাকাত ম্যানেজমেন্ট আড়াই লাখ দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। সাজেদা ফাউন্ডেশন তাদের নারায়ণগঞ্জের হাসপাতালকে সম্পূর্ণভাবে কোভিড-১৯ চিকিৎসার জন্য উৎসর্গ করেছে এবং নতুন করে স্থাপন করা হয় নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ), ভেন্টিলেটর সুবিধা ও ডায়ালিসিস মেশিন।

এছাড়া সাজেদা ফাউন্ডেশন ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর ৩৮ হাজারের বেশি পরিবারের মাঝে জরুরী খাদ্য ও স্বাস্থ্যবিধি সুরক্ষা প্যাকেট বিতরণ করেছে। পরবর্তী মাসগুলোয় সাজেদা আরো দেড় লাখ পরিবারকে সহযোগিতা প্রদান করবে। এই উদ্যোগে অন্যান্য সহযোগীদের সাথে ব্যাংকিং পার্টনার হিসেবে ব্যাংক এশিয়া এগিয়ে এসেছে।

অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে এটুআই-এর প্রকল্প পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) ড. মোঃ আবদুল মান্নান, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক আনিস মাহমুদ, এটুআই-এর পলিসি অ্যাডভাইজর আনীর চৌধুরী, ব্র্যাক এর নির্বাহি পরিচালক আসিফ সালেহ, সাজেদা ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জাহিদা ফিজা কবির, বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক শরিফুল ইসলাম, ব্যাংক এশিয়ার প্রেসিডেন্ট ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরফান আলী, বিদ্যানন্দের প্রতিষ্ঠাতা কিশোর কুমার দাশ, সিআরপির নির্বাহি পরিচালক শফিকুল ইসলাম, শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতি উপজেলার ডোনার নাজিমুদ্দিনসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।


সর্বশেষ সংবাদ