মাউশির প্রদর্শকসহ ৬১০ পদের সেই ‘বির্তকিত নিয়োগের’ চূড়ান্ত ফল সহসাই হচ্ছে না

৬১০ পদের নিয়োগ
৬১০ পদের নিয়োগ  © টিডিসি সম্পাদিত

মৌখিক পরীক্ষা গ্রহণের বছর পেরিয়ে গেলেও চূড়ান্ত ফল না পেয়ে চলতি মাসের শুরু থেকে আন্দোলনে নামেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) প্রদর্শকসহ ১০ম গ্রেডের ৬১০ পদের ফলপ্রত্যাশীরা। সর্বশেষ আজ মঙ্গলবার (১৭ জুন) সন্ধ্যায় মাউশির মহাপরিচালকের (ডিজি) গাড়ি আটকে দিয়েছেন তারা। যদিও এই নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন মাউশিতে অভিযান পরিচালনা করেছিল দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ কারণে বির্তকিত এই নিয়োগের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ নিয়ে দোটানায় রয়েছে মাউশির বর্তমান প্রশাসন। এ নিয়ে সংস্থাটির কোনো কর্মকর্তা মুখ খুলছেন না। ফলে সহসাই হচ্ছে না সেই ৬১০ পদের চূড়ান্ত ফল। সংশ্লিস্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

নিয়োগ বিধি ১৯৯১ অনুযায়ী, এই নিয়োগের অনুমোদন নিয়ে প্রথমে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগের জন্য পদক্ষেপ নিলেও পরবর্তীতে শুধু ৭০ নম্বরের এমসিকিউ পদ্ধতিতে পরীক্ষা নেয় মাউশি। জানা গেছে, ২০২০ সালে মাউশি থেকে নিয়োগের নোটিশে ১০ম গ্রেডের পদগুলো দ্বিতীয় শ্রেণি উল্লেখ করা হলেও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিয়োগ অনুমোদনের ক্ষেত্রে তা তৃতীয় শ্রেণি দেখিয়ে অনুমোদন নেওয়া হয় এবং নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়।

ওই সময় নিয়োগ কমিটির আহ্বায়ক মাউশির কলেজ ও প্রশাসন শাখার পরিচালক অধ্যাপক মো. শাহেদুল খবির চৌধুরী ও সদস্য সচিব ছিলেন উপ-পরিচালক (সাধারণ প্রশাসন) মো. রুহুল মোমিন। তখন নিয়োগ কমিটির আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবের বিরুদ্ধে নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছিল। এর প্রেক্ষিতে ২০২২ সালের জানুয়ারিতে অভিযান পরিচালনা করেছিল দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) একটি প্রতিনিধি দল।

আরও পড়ুন: ৪ হাজার পদে নিয়োগে অনিয়ম, মাউশিতে দুদকের অভিযান

সূত্র জানায়, সরকারি কলেজে ১০টি বিষয়ের প্রদর্শক, গবেষণা সহকারী, সহকারী গ্রন্থাগারিক কাম ক্যাটালগার, ল্যাবরেটরি সহকারীর পদগুলো ১০ম গ্রেডের। এ ধরনের ৬১০টি পদের নিয়োগের মৌখিক পরীক্ষা সম্পন্ন করেছে মাউশি। এরমধ্যে প্রদর্শক ৫১৪টি, সহকারী গ্রন্থাগারিক কাম ক্যাটালগার ৬৯টি, গবেষণা সহকারী ২১টি এবং ল্যাবরেটরি সহকারীতে ৬টি পদ রয়েছে। সরকারি বিধিমালা অনুযায়ী, ১০ম থেকে ১২তম গ্রেড পর্যন্ত দ্বিতীয় শ্রেণির পদ।

মাউশির নিয়োগবিধিতে পদগুলো তৃতীয় শ্রেণির দেখিয়ে শুধু এমসিকিউ পরীক্ষা নিয়ে নিয়োগের উদ্যোগ নেওয়া হয়। অন্যান্য পদের মধ্যে ২০তম গ্রেডের অফিস সহায়ক, নিরাপত্তা প্রহরী, মালি, পরিচ্ছন্নতাকর্মী এবং ১৬তম গ্রেডের অফিস সহকারী, হিসাব সহকারী, ক্যাশিয়ার, স্টোর কিপার, গাড়িচালকসহ আরও কিছু পদের সবারই এমসিকিউ পরীক্ষা নেওয়া হয়।

জানা গেছে, ২০২০ সালের অক্টোবর মাসে বিভিন্ন পদের ৪ হাজার ৩২ জনকে নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছিল মাউশি। এর মধ্যে ‌‌৫১৪টি প্রদর্শকসহ ১০ম গ্রেডের পদ ছিল সর্বমোট ৬১০টি।  ১০ম গ্রেড বাদে অন্য গ্রেডের প্রার্থীরা ২০২৩ সাল থেকে কর্মস্থলে যোগদান করলেও চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ না করায় আমরণ অনশন ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন প্রদর্শক পদের ফলপ্রত্যাশীরা।

এই নিয়োগের চূড়ান্ত ফল প্রকাশের বিষয়ে পদাধিকার বলে বর্তমান নিয়োগ কমিটির আহ্বায়ক ও মাউশির কলেজ ও প্রশাসন শাখার পরিচালক অধ্যাপক বি. এম. আব্দুল হান্নানের কাছে গেলে তিনি ডিজির সঙ্গে কথা বলতে অনুরোধ করেন এই প্রতিবেদককে। পরে মাউশির মহাপরিচালক (ডিজি) অধ্যাপক মুহাম্মদ আজাদ খান দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘প্রদর্শক পদে নিয়োগ ও ফলাফল বিষয়ে আমাদের কিছুই করার নেই। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। আমাদের কোনো কিছু করার নেই।’ এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের কলেজ শাখার কর্মকর্তাদের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

জানা গেছে, ২০২০ সালের প্রকাশিত সার্কুলারে ১০ম গ্রেডের ৬১০টি পদ বাদে অন্যরা ২০২৩ সাল থেকে বিভিন্ন সময়ে চাকরিতে যোগদান করেন। কিন্তু মাউশি ১০ম গ্রেডে নিয়োগগুলোর অনিয়ম নিয়ে ২০২২ সালে তদন্ত করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। পূর্বে ‘প্রদর্শক’ পদে (১০ম গ্রেড) সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) মাধ্যমে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতো। কিন্তু ১০ম গ্রেডে নিয়োগের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যে অনুমতি নেওয়া হয়, তাতে প্রদর্শক পদকে নিম্ন গ্রেডের দেখিয়ে মাত্র ৭০ নম্বরের এমসিকিউ পরীক্ষা নিয়েছে মাউশি। এরমধ্যে ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে ৬১০টি পদের লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের মৌখিক পরীক্ষাওও নেয় মাউশি। এর বছর খানেক সময় পার হলেও চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ না করায় দফায় দফায় আন্দোলন করছেন ফলপ্রত্যাশীরা।

এদিকে ঈদুল আজহার আগে গত ৩ জুন মাউশিতে প্রদর্শক পদ প্রত্যাশীরা অবস্থান নিলে, ঈদের পর সিদ্ধান্তের আশ্বাসে অবস্থান প্রত্যাহার করেন তারা। পরে আজ মঙ্গলবার (১৭ জুন) ফের আমরণ অনশন ও অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন ফলাফল প্রত্যাশীরা। তবে মাউশির মহাপরিচালকের সঙ্গে দেখা না করতে পেরে শিক্ষা সচিবের সঙ্গে দেখা করতে সচিবালয়ে যান ফলাফল প্রত্যাশীদের একটি প্রতিনিধি দল। পরে অনশনকারীদের সঙ্গে দেখা করতে সচিবালয় থেকে মাউশিতে যোগাযোগ করা হয় বলে জানা গেছে। মাউশি কখনোই ১০ম গ্রেডের এমন নিয়োগ দিতে পারে না বলে দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানায় পিএসসির একটি সূত্র।

আন্দোলনরত অনশনকারীরা বলেন, ‘মাউশি সার্কুলার দিয়ে আমাদের পরীক্ষা নিয়েছে এবং ফলাফল প্রকাশের পর গত বছর মৌখিক পরীক্ষাও নিয়েছে। মৌখিক পরীক্ষা নেওয়ার এক বছর পার হলেও এখনো চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করছে না। আমরা শিক্ষা উপদেষ্টা, সচিবের সঙ্গে দেখা করেছি। পাশাপাশি বেশ কয়েকবার মাউশিতে স্মারকলিপিও দেওয়া হয়েছে। তাই আমরা আমরণ অনশন কর্মসূচি পালন করছি। চূড়ান্ত ফলাফল না পাওয়া পর্যন্ত আমাদের অবস্থান চলবে বলে জানান তারা।’

তারা আরও বলেন, ‌‘মাউশি সার্কুলার দিয়েছে এবং তারা যে নিয়মে পরীক্ষা নিয়েছে, আমরা সেভাবে পরীক্ষা দিয়েছি। পরীক্ষা নেওয়ার পর ফলাফল প্রকাশসহ ভাইভাও নেয়। যদি আমাদের বাদ দেওয়া হতো তাহলে ভাইভা কেন নেওয়া হলো। এখন আমরা ভাইভার ফলাফলের জন্য অপেক্ষায় রয়েছি।’ 

অনশনকারী মো. সাদ্দাম হোসাইন দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘আমাদের একটি প্রতিনিধি দল সচিবালয়ে গেলে মাউশির সঙ্গে সেখান থেকে যোগাযোগ করা হয় এবং আমাদের সঙ্গে মাউশিকে বসতে বা দেখা করতে বলা হয়। আমরা তাদের জন্য অপেক্ষায়। আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অবস্থান চলবে।


সর্বশেষ সংবাদ