ডাকসু নেতার ইন্ধনে টিএসসিতে অনুমোদনহীন সংগঠনের কক্ষ দখল
- ঢাবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ১১ মে ২০১৯, ০২:০৭ PM , আপডেট: ১২ মে ২০১৯, ১২:৫৪ AM
মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ সাংবাদিকের স্মৃতি ফলক খুলে ফেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) অনুমোদনহীন একটি আবৃত্তি সংগঠনের বিরুদ্ধে কক্ষ দখল করার অভিযোগ উঠে। জানতে পেরে কক্ষটি সিলগালা করে দেয় সংশ্লিষ্ট প্রশাসন। অভিযোগ আছে ডাকসু সাংস্কৃতিক সম্পাদক আসিফ তালুকদারের ইন্ধনে এমন কাজ করার সুযোগ পায় সংগঠনটি।
জানা যায়, নবগঠিত ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আবৃত্তি সংসদ’ নামে একটি ভূঁইফোড় সংগঠন সাম্প্রতিক সময়ে টিএসসি দ্বিতীয় তলায় অবৈধভাবে একটি কক্ষ দখল করে। অভিযোগ আছে, এসময় কক্ষটির মূল ফটকে সংরক্ষিত মুক্তিযুদ্ধে শহীদ সাংবাদিক চিশতী শাহ্ হেলালুর রহমানের স্মৃতি ফলক ছিড়ে ফেলে দেয় সংগঠনটি।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে চিশতি শাহ হেলালুর রহমান দৈনিক আজাদ পত্রিকার বিশ্ববিদ্যালয় সংবাদদাতা ছিলেন। এর আগে ১৯৬৯ সালে তৎকালীন ইকবাল হল শাখা ছাত্র সংসদের পাঠাগার সম্পাদক এবং বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সহসভাপতি ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি ১৭ জানুয়ারি ১৯৯৮ সালে কক্ষটিতে শহীদ চিশতী লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা করে।
প্রশাসনিক সূত্রে জানা যায়, টিএসসিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট ২৩টি সংগঠনের অনুমোদন দেওয়া আছে। তাদেরকে প্রতি বছরের নির্ধারিত সময়ে বাজেট প্রদান করা হয়।
কিন্তু এর বাইরে নিয়ম বহির্ভূতভাবে কাজ চালাচ্ছে আরও ২৭টি সংগঠন। যাদের বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে কোন অনুমোদন নাই। এরমধ্যে কয়েকটি সংগঠন মৌখিকভাবে অনুমোদন আদায় করে নিলেও অবৈধভাবে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বিভিন্নভাবে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন তারা।
অনুমোদনহীন ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আবৃত্তি সংসদ’দের বিরুদ্ধে অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়, অধিভুক্ত কলেজ ও বাইরের বিভিন্ন কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের থেকে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন তারা। টিএসসিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ব্যবহার করে বাইরের শিক্ষার্থীদের থেকে টাকা আদায় করাকে স্পষ্ট ‘প্রতারণা’ বলছেন শিক্ষার্থীরা।
তাদের অভিযোগ, ছুটির দিনসহ অন্যান্য দিনগুলোতে আবৃত্তি সংগঠনগুলো বহিরাগত শিক্ষার্থীদের এনে ব্যবসায়িক স্বার্থ আদায় করে নেয়। প্রতিষ্ঠিত শিল্পীদের নাম ব্যবহার করে আবৃত্তি শেখানোর কথা বলে তাদের ভর্তি করানো হলেও শর্তের এক-দশমাংশও পূরণ করা হয়না। ভর্তির শর্তে কমপক্ষে ১৫-২০টি ক্লাস করানোর কথা থাকলেও দু'একটা ক্লাস নিয়ে শিক্ষার্থীদের নিজেদের অনুশীলন করতে এবং প্রয়োজন হলে তাদের সহযোগিতা নিতে পরামর্শ দেয়া হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রীতিতে সংশ্লিষ্ট এলাকায় শিক্ষার্থীদের কাছে ফর্ম বিক্রি করে টাকা আদায় করার অনুমতি না থাকলেও নিয়মের তোয়াক্কা না করে সংগঠনটি হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। ডাকসু নির্বাচনের পর বিষয়গুলোতে লাগাম আসার সম্ভাবনা তৈরী হলেও উল্টো এসংগঠনকে কক্ষ দখলে ইন্ধন দেয়ার অভিযোগ উঠেছে ডাকসুর সাংস্কৃতিক সম্পাদক আসিফ তালুকদারের বিরুদ্ধে।
সংগঠনটির নেতাদের ভাষ্য, তাদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাজেট দেয়া হয়না বলে ভিন্ন পন্থায় আয় করার এ ‘অভিনব কৌশল’ অবলম্বন করা হয়েছে ।
অভিযোগ আছে, অনুমোদনহীন সংগঠনটিকে টিএসসির দোতলায় রুম দখলে সহযোগিতা করেন ডাকসুর সাংস্কৃতিক সম্পাদক ও ছাত্রলীগ নেতা আসিফ তালুকদার। দখলকৃত কক্ষটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি ব্যবহার করে আসছিলো। সমিতির সাবেক কয়েকজন সদস্যের প্রতিষ্ঠিত ‘স্বরশ্রুত’ নামক একটি সাংস্কৃতিক সংগঠন এটি ব্যবহার করতেন। সাম্প্রতিক সময়ে এতে সাংবাদিক সমিতির ল্যাব ও শহীদ সাংবাদিকের স্মৃতির স্মরণে প্রতিষ্ঠিত পাঠাগার সংস্কার ও বর্ধিত করণের কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়।
ডাকসুর গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, টিএসসিতে কক্ষ দেয়া বা কোন সংগঠনকে সহযোগিতা করার এখতিয়ার সাংস্কৃতিক সম্পাদককে দেয়া হয়নি। সাংস্কৃতিক সম্পাদকের কাজ সম্পর্কে গঠনতন্ত্রে বলা আছে, সাংস্কৃতিক সম্পাদক স্বাভাবিক অবস্থায় নির্বাহী কমিটির ইচ্ছা অনুযায়ী প্রতি সেশনে এক বা একাধিকবার সামাজিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করবেন।
গঠনতন্ত্রে এ ধরণের কাজের এখতিয়ার দেয়া না হলেও টিএসসি কেন্দ্রিক একাধিক সংগঠনের নেতা বিভিন্ন সময় তাদের স্বাধীন কাজ করার ক্ষেত্রে আসিফ তালুকদারের বিরুদ্ধে হস্তক্ষেপ করার অভিযোগ করেন।
এ বিষয়ে আসিফ তালুকদার বলেন, সাংস্কৃতিক সম্পাদক হিসেবে কোন সংগঠনের উপর হস্তক্ষেপ করা আমার কাজ নয় । তবে শিক্ষার্থী হিসেবে যদি কেউ সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড পরিচালনার ক্ষেত্রে সহযোগিতা চায় তাহলে সহযোগিতা করবো।
বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত করলে ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নূর বলেন, ডাকসুতে যেসব প্রোগ্রাম হয় সেগুলোর দায়িত্ব থাকে সাংস্কৃতিক সম্পাদকের। টিএসসিতে হস্তক্ষেপ করার নিয়ম ডাকসুর নেই। এ ক্ষেত্রে সাংস্কৃতিক সম্পাদকের বিরুদ্ধে যদি কোন অভিযোগ প্রমাণিত হয় তাহলে পরবর্তী বৈঠকে বিষয়টি উত্থাপন করে ডাকসু ব্যবস্থা নিবে।