বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারায় ৮০০ শিক্ষার্থী

প্রতি বছর বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী ও অভিভাবক সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারাচ্ছে
প্রতি বছর বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী ও অভিভাবক সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারাচ্ছে  © ফাইল ফটো

রাজধানীর কুড়িল ফ্লাইওভারে গাড়ির চাপায় নিথর হয়ে পড়ে ছিলেন মাইশা মমতাজ মিম। পরে তাকে সেখানকার এক ব্যক্তি উদ্ধার করে নিয়ে হাসপাতালে। সেখানেই মৃত্যু হয় মিমের। তিনি বেসরকারি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ছিলেন। নিজের স্কুটি বাইক চালিয়ে বাসা থেকে যাচ্ছিলেন ক্যাম্পাসে। এ ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে চলছে আলোচনা-সমালোচনার ঝড়।

শুধু মিম নয়, দেশের বিভিন্ন সড়কে প্রায় প্রতিদিনই ঘটছে এমন হৃদয়বিদারক দৃশ্য। কোথাও না কোথাও প্রাণ হারাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। তবে ঢাকা ঘটনাগুলোই বেশি আলোচিত হয়েছে। অনেক স্থানে অভিভাবকের সামনে মৃত্যু হয়েছে। আবার সন্তানকে স্কুলে দিতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন অনেক অভিভাবক। সম্প্রতি ঢাকায় দুই মেয়ের সামনে প্রাণ গেছে এক মায়ের।

সড়ক দুর্ঘটনার বিষয়ে বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতির দেওয়া তথ্য বলছে, ২০১৪ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত প্রতিবছর গড়ে ৮০০ জন করে শিক্ষার্থীর প্রাণ গেছে সড়কে। এই আট বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় যতজন মারা গেছেন, এর মধ্যে শুধু শিক্ষার্থী ১১ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের (এআরআই) তথ্য অনুযায়ী, গত বছর সড়ক দুর্ঘটনায় ৫ হাজার ৮৮ জন নিহত হয়েছেন। এর আগের বছর মারা গেছেন ৩ হাজার ৯১৮ জন। এক বছরে মৃত্যু বেড়েছে ২৯ দশমিক ৮৬ শতাংশ। এ ছাড়া ২০১৮ সালে ২ হাজার ৬৩৫ জন ও ২০১৯ ৪ হাজার ১৩৮ জনের মৃত্যু হয় সড়ক দুর্ঘটনায়।

আর রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী, সড়ক দুর্ঘটনায় ২০২১ সালে মারা গেছেন ৬ হাজার ২৮৪ জন। এ ছাড়া ২০২০ সালে ৫ হাজার ৪৩১ জন মারা যান। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০১৮ সালের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুসারে, বাংলাদেশে প্রতিবছর ২৫ হাজার মানুষের প্রাণহানি হয় সড়ক দুর্ঘটনায়। যদিও এ সব তথ্যের সঙ্গে পুলিশের দেওয়া পরিসংখ্যানের বড় ধরনের পার্থক্য রয়েছে।

আরো পড়ুন: দুই মেয়ের সামনে মায়ের মৃত্যু, কে কাকে সান্ত্বনা দেবে?

রাজধানীর বাংলাদেশ নেভি স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী ওহি। তার ক্লাস-পরীক্ষা থাকায় ছোট মেয়ে রাহিকে নিয়ে ব্যাটারিচালিত রিকশাযোগে ওই স্কুলে যাচ্ছিলেন সাবিনা ইয়াছমিন (৩১)। পথে ভাষানটেক নেভি মার্কেটের সামনের রাস্তায় ট্রাস্ট পরিবহণের একটি বাস রিকশাটিকে ধাক্কা দেয়। তিনজনই রিকশা থেকে ছিটকে পড়েন। পরে পথচারীরা তাদের স্থানীয় মার্কস হাসপাতালে নেন। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান সাবিনা। গত ২৯ মার্চ দুপুরের ঘটনা এটি।

মা রাফিকা পাঠানের সঙ্গে ৮ বছরের মারিয়াম রুহি প্রতিদিন সকালে রিকশায় চড়ে স্কুলে যেত। কিন্ত কয়েক দিন ধরে মা আর স্কুলে নিয়ে যায় না। রুহির সঙ্গে কথাও বলে না। মা যে কখনোই তাকে স্কুলে নিয়ে যাবেন না, তা এখনো বিশ্বাস হয়নি রুহির। গত সোমবার রুহিকে নিয়ে স্কুল থেকে বাসায় ফিরছিলেন রাফিকা পাঠান।

পথে ওয়ারীর শেরেবাংলা বালিকা মহাবিদ্যালয়ের সামনে তাদের রিকশাকে ধাক্কা দিলে বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে মারা যান রাফিকা। রুহিও আহত হয়। এরপর থেকে সে আর স্কুলে যেতে পারছে না মায়ের সঙ্গে। সে টিকাটুলীর কামরুন্নেসা গার্লস স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী।

আর সবশেষ সড়কে প্রাণ গেল মাইশা মমতাজ মিমের। নিজের স্কুটি চালিয়ে ক্যাম্পাসে যাওয়ার পথে এ দুর্ঘটনার শিকার হন মিম। মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যে এ ধরনের তিনটি হৃদয়বিদারক দুর্ঘটনার দৃশ্য দেখেছে রাজধানীর মানুষ। এ ধরনের অনেক দুর্ঘটনা ঢাকার বাইরে ঘটলেও প্রচারের অভাবে জানাও হয় না অনেকের।

মিমের মৃত্যুর পর পুলিশের খিলক্ষেত থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুন্সি সাব্বির আহমেদ বলেছেন, ‘দুর্ঘটনার কোনো প্রত্যক্ষদর্শী পাওয়া যায়নি। তবে কাছাকাছি একটি সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, মাইশার পাশ দিয়ে  একটি কাভার্ড ভ্যান চলে যাচ্ছে।’

আরো পড়ুন: ঘুম থেকে উঠেই রুহির প্রশ্ন—মা কোথায়, স্কুলে যাব তো

পুলিশের ক্যান্টনমেন্ট জোনের অতিরিক্ত উপকমিশনার ইফতেখায়রুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এ ঘটনায় চট্টগ্রাম থেকে গাড়ির চালক সাইফুল ইসলাম ও সঙ্গে থাকা মশিউরকে আটক করা হয়েছে। চালক সাইফুলের হালকা যান চালানোর লাইসেন্স থাকলেও তিনি চালাচ্ছিলেন ভারী যান। তাঁদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে মশিউর গাড়িতে থাকা পণ্যসামগ্রীর মালিকপক্ষের প্রতিনিধি।’

পুলিশ জানিয়েছে, চালক প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানান, মিমের স্কুটির পাশ দিয়ে অতিক্রমের সময় হর্ন দেন তিনি। এতে প্রীতি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাড়ির সামনে পড়ে চান। পরে চাকার নিচে চলে গেলে তিনি পালিয়ে যান। ঘটনার পর মিমকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান পথচারীরা। কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence