শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এক যুগে ৩৯টি হত্যাকাণ্ড, ঝুলে আছে বিচার

বুয়েটের আবরার ফাহাদ হত্যার বিচার দাবিতে সারাদেশে বিক্ষোভ করে শিক্ষার্থীরা
বুয়েটের আবরার ফাহাদ হত্যার বিচার দাবিতে সারাদেশে বিক্ষোভ করে শিক্ষার্থীরা  © ফাইল ছবি

বাংলাদেশে গত এক যুগে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৩৯টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এর বেশিরভাগেরই এখনো বিচার হয়নি। এর মাঝেই গত সপ্তাহে বুয়েটের ছাত্র আবরার হত্যা মামলার রায়ে বুয়েটের ২০ ছাত্রের ফাঁসির আদেশ দেয়া হয়। আবরার হত্যা মামলার বিচার দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনালে হওয়ায় মামালার রায় দ্রুত এসেছে বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের।

কিন্তু বাকি হত্যাকাণ্ডগুলোর বিচার প্রক্রিয়া কেন দীর্ঘ হচ্ছে? অনুসন্ধানে দেখা গেছে, শুধু ১২ বছর নয়, ২০ বছর আগের হত্যাকাণ্ডের বিচারও এখনো ঝুলছে।

পড়ুন: দ্বীপ-সনি হত্যার বিচারের দাবিতে ফেসবুকে সরব ছাত্রলীগ

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্র সংগঠনগুলোর দ্বন্দ্বের কারণে যেমন হয়েছে তেমনি অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণেও হয়েছে। আসামিও হয়েছেন ছাত্ররা। ফলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এইসব মামলার সাক্ষী ছাত্র, শিক্ষক এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। যে কারণে মামলার সাক্ষী পাওয়া যায় না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

পড়ুন: নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দিনদুপুরে এসএসসি পরীক্ষার্থীকে কুপিয়ে হত্যা

তাছাড়া সাক্ষী পাওয়া গেলেও তাদের আদালতে হাজির করা কঠিন। আর আসামি ও ভিকটিম একই ছাত্র সংগঠনের হলে শেষ পর্যন্ত তা সমঝোতার পথে চলে যায়।

সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, গত ১২ বছরের দেশের ১২টি বিশ্ববিদ্যালয়, তিনটি কলেজ ও একটি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে মোট ৩৯ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ৩৭ জন ছাত্র। এইসব হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় পাঁচটি ভিন্ন ভিন্ন মামলার সব আসামিই খালাস পেয়েছেন।

পড়ুন: দিয়াজ হত্যার তিন বছর, চবি ছাত্রলীগের স্মরণ সভা

আবরার হত্যাসহ চারটি মামলায় আদালতের রায়ে অভিযুক্তদের শাস্তি হয়েছে। তবে কোনো মামলায়ই সর্বোচ্চ আদালতের চূড়ান্ত রায় পাওয়া যায়নি। ফলে কোনো দণ্ডই এখনো কার্যকর হয়নি।

এই সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় বেশ কিছু হত্যাকাণ্ডের জন্য আলোচিত। আর ক্ষমতাসীন ছাত্রলীগের বিরুদ্ধেই অভিযোগ বেশি। অভ্যন্তরীণ কোন্দলেও এই ছাত্র সংগঠনটির বেশি নেতা-কর্মী খুন হয়েছেন। আছে ছাত্রদল ও ইসলামী ছাত্র শিবিরের নামও।

পড়ুন: আবু বকর ছিদ্দিক: সবাই যাকে ভুলে গেল

আবরার হত্যা মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আবু আব্দুল্লাহ বলেন, ‘‘বুয়েটের আবরার ছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুইজন ছাত্র হত্যার মামলা পরিচলনা করতে গিয়ে আমার নানা অভিজ্ঞতা হয়েছে। আবরার হত্যা মামলাটি ব্যতিক্রম। এটা নিয়ে দেশজুড়ে মানুষ কথা বলেছেন। ফলে সাক্ষী পেতে সমস্যা হয়নি। আর দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনালে মামলা হওয়ায় রায়ও দ্রত হয়েছে। এটা অন্য মামলার ক্ষেত্রে ঘটে না।’’

তিনি বলেন, প্রথমত, সাক্ষী পাওয়া যায় না। কারণ এই ধরনের মামলার সাক্ষী হলেন ছাত্র, শিক্ষক, বিশ্ববিদ্যালয় এবং হলের কর্মচারী। তারা আসলে সাক্ষী দিতে চান না। বন্ধুর বিরুদ্ধে বন্ধু বা ছাত্রের বিরুদ্ধে ছাত্র সাক্ষী দেয় না। শিক্ষক, কর্মচারীরা সাক্ষী দেয়াকে ঝামেলা মনে করেন। তাই তারা সাক্ষী দেন না।

পড়ুন: জাবিতে ৭ ছাত্র হত্যা, একটিরও বিচার হয়নি

‘‘একারণে বিচার তো দূরের কথা পুলিশ মামলার তদন্তই অনেক সময় শেষ করতে পারে না। আর যে দল ক্ষমতায় থাকে তাদের ছাত্র সংগঠনের নেতা-কর্মীদের হাতে অন্য সংগঠনের নেতা-কর্মী খুন হলেও ভয়ে কেউ সাক্ষী দেয় না। একই সংগঠনের ভিতরে হলে শেষ পর্যন্ত সমঝোতার পথে যায়।’’

অ্যাডভোকেট আবু আব্দুল্লাহ জানান, ১৯৯২ এবং ২০০৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দুইটি হত্যা মামলার এখনো বিচার হয়নি। একটি মামলায় সাক্ষী পাওয়া যাচ্ছে না। আরেকটি মামলায় সাক্ষীরা আদালতে আসলেও উল্টো সাক্ষী দেয়। ফলে উচ্চ আদালত বিচার কাজ স্থগিত করে দিয়েছে।

সাবেক বিচারক এবং সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আজিজুর রহমান দুলু বলেন, ‘‘রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের মামলা এড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতা তদন্তকারী ও বিচারক সবার মধ্যেই আছে। তারা ঝামেলায় যেতে চান না। আর এর সঙ্গে আছে রাজনৈতিক প্রভাব। দীর্ঘ সময় বিরতি দিয়ে মামলার তারিখ ফেলে বছরের পর বছর সময়ক্ষেপণ করা হয়। এরমধ্যে সাক্ষীরা এবং বাদিরাও আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। প্রসিকিউশনেরও অদক্ষতা আছে। সব মামলা তো আর দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনালে যায় না।’’

আর আবু আব্দুল্লাহ বলেন, ‘‘মামলা দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানোর এখতিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের। আদালতের নয়। এর জন্য আবেদন করতে হয়। ট্রাইব্যুনালে তিন সপ্তাহের মধ্যে মামলার তারিখ ফেলার বিধান আছে। অন্য আদলতের তো সেই বাধ্যবাধকতা নেই।’’ [সূত্র: ডয়চে ভেলে বাংলা]

অপরাধ ও শৃঙ্খলা থেকে আরও পড়ুন


সর্বশেষ সংবাদ