রায়হানের শরীরে ১১১ আঘাতের চিহ্ন, ময়নাতদন্তে রোমহর্ষক তথ্য

এসআই আকবর ও নিহত রায়হান
এসআই আকবর ও নিহত রায়হান  © ফাইল ফটো

সিলেটের বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নির্যাতনের কারণে মারা যাওয়া রায়হানের ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট গণমাধ্যমের হাতে এসেছে। এতে বলা হয়েছে, রায়হানকে ফাঁড়িতে এনে বর্বর নির্যাতন চালানো হয়েছে। তার শরীরে অন্তত ১১১টি আঘাতের চিহ্ন রয়েছে, এর মধ্যে ১৪টি গুরুতর। তার হাতের দুটি আঙুলের নখ উপড়ে ফেলা হয়েছে।

একটি শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যম ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে পাওয়ার কথা জানিয়ে বলেছে, এমন নির্যাতন চালানো হয় রায়হানের মৃত্যুর দুই থেকে চার ঘণ্টা আগে। তার শরীরে চামড়ার নিচেও প্রায় দুই লিটার রক্ত পাওয়া গেছে। তার মরদেহের ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে এ তথ্য উল্লে­খ করা হয়েছে।

ঘটনার দিনের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ অনুযায়ী, গত ১০ অক্টোবর রাত ৩টা ৯ মিনিটে স্বাভাবিক অবস্থায় রায়হানকে বন্দরবাজার ফাঁড়িতে ধরে আনা হয়। পরে সকাল ৬টা ২৪ মিনিটে ফাঁড়ি থেকে বের করা হয়। এরপর ৬টা ৪০ মিনিটে ভর্তি করা হয় সিলেটের ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে সকাল ৭টা ৫০ মিনিটের দিকে তিনি মারা যান।

সেখানেই দুপুরে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। গত ১৫ অক্টোবর ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট পিবিআইয়ের কাছে হস্তান্তর করা হয়। রিপোর্টে বলা হয়, রায়হানের মৃত্যুর দুই থেকে চার ঘণ্টা আগে তার ওপর নির্মম নির্যাতন চালানো হয়। সে হিসেবে ফাঁড়িতে আনার পরই তার ওপর এভাবে নির্যাতন চলে।

রিপোর্ট অনুযায়ী, রায়হানের ডান হাতের কনিষ্ঠ আঙুল ও বাম হাতের অনামিকার নখ উপড়ানো ছিল। এছাড়া অসংখ্য আঘাতের কারণে হাইপোভলিউমিক শক ও নিউরোজেনিক শকে তার মস্তিষ্ক, হৃৎপিণ্ড, ফুসফুস, কিডনিসহ গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ কর্মক্ষমতা হারানোয় মৃত্যু হয়েছে। তবে মৃত্যুর পূর্ণাঙ্গ কারণ ভিসেরা প্রতিবেদন পাওয়ার পর বলা যাবে বলে প্রতিবেদনে উল্লে­খ করা হয়েছে।

গত শনিবার রাতে পুলিশ ফাঁড়িতে নির্যাতন করায় অসুস্থ হয়ে পড়েন রায়হান। সেখান থেকে তাকে ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। এরপর ফাঁড়ির ইনচার্জ আকবরসহ চার পুলিশ সদস্যকে বরখাস্ত ও তিনজনকে প্রত্যাহার করা হয়।

ঘটনার পর রবিবার থেকে মূল অভিযুক্ত এসআই আকবর পলাতক রয়েছেন। মামলাটি পুলিশ সদর দফতরের নির্দেশ পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) স্থানান্তর করা হয়। তদন্ত ভার পাওয়ার পর পিবিআইর টিম ঘটনাস্থল বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ি, নগরের কাস্টঘর ও নিহতের বাড়ি পরিদর্শন করে। গত বৃহস্পতিবার মরদেহ কবর থেকে তুলে ফের ময়নাতদন্ত করা হয়।


সর্বশেষ সংবাদ