মানব পাচার উল্লেখ না করে প্রতারণার অভিযোগ করায় আইও’কে শোকজ

মানব পাচার না উল্লেখ করে প্রতারণার অভিযোগ করায় আইও’কে শোকজ
মানব পাচার না উল্লেখ করে প্রতারণার অভিযোগ করায় আইও’কে শোকজ  © ফাইল ফটো

মানব পাচারের মামলার বরিশালে সাত আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে মানব পাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল। সেই সাথে বরিশাল থেকে ১৬ জনকে প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপদেশ ভানুয়াতুতে অবৈধভাবে পাচারের মামলায় আসামিদের মানব পাচারের অভিযোগে অভিযুক্ত না করে প্রতারণায় অভিযুক্ত করায় তদন্ত কর্মকর্তাকে (আইও) সশরীর ট্রাইব্যুনালে হাজির হয়ে কারণ দর্শানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এ ঘটনায় ভানুয়াতুতে চলমান মামলার বর্তমান অবস্থা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে জানতে চেয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। মঙ্গলবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মঞ্জুরুল হোসেন এ আদেশ দেন।

মামলার আরজি সূত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালের আগস্ট থেকে ২০১৮ সালের মে মাস পর্যন্ত বরিশালের উজিরপুর, বাবুগঞ্জ ও মুলাদী উপজেলার ১৬ ব্যক্তিকে অস্ট্রেলিয়ায় পাঠানোর কথা বলে প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপরাষ্ট্র ভানুয়াতুতে অবৈধভাবে পাচার করেন বাবুগঞ্জ উপজেলার রাহুতকাঠি গ্রামের জসিম উদ্দিন ও তাঁর ছোট ভাই পলাশ হাওলাদারসহ স্বজনেরা। ভানুয়াতুতে নিয়ে তাঁদের একটি জায়গায় আটকে রাখা হয়। সেখান থেকে ১২ জন পালিয়ে সে দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানান। পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পলাশ হাওলাদারসহ চারজনকে গ্রেপ্তার এবং অবৈধ পাচারের শিকার সবাইকে উদ্ধার করে। এ ঘটনায় ভানুয়াতুতে একটি মামলা হয়। ওই মামলায় পলাশ এখনো ভানুয়াতুর কারাগারে বন্দী আছেন। ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন অব মাইগ্রেশনের (আইওএম) সহায়তায় ২০১৯ সালের জুলাইয়ে ভুক্তভোগী ১৬ জনকে দেশে আনা হয়। দেশে ফিরে পাচারের শিকার ব্যক্তিরা টাকা ফেরত চাইলে মানব পাচারকারী চক্র উল্টো ভুক্তভোগীদের বিরুদ্ধে অপহরণ, চাঁদাবাজি এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করে।

গত বছরের ১৮ নভেম্বর ভুক্তভোগী ১৬ জনের পক্ষে উজিরপুরের মোফাজ্জেল হোসেন বাদী হয়ে বরিশাল মানব পাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালে জসিম উদ্দিন, পলাশ হাওলাদারসহ তাঁদের নিকটাত্মীয় সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। বাকি আসামিরা হলেন জসিম উদ্দিনের স্ত্রী জান্নাতুর রহমান, ভাই এনামুল হক, বাবা হারুন অর রশিদ, শ্বশুর কাজী শামসুর রহমান ও শ্যালক ইমান কাজী।

ট্রাইব্যুনাল মামলার অভিযোগ তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) নির্দেশ দেয়। পিবিআইয়ের উপপরিদর্শক সাইদুর রহমান গত ১৯ ফেব্রুয়ারি ট্রাইব্যুনালে দেওয়া প্রতিবেদনে মানব পাচারসংক্রান্ত অপরাধের অভিযোগের পরিবর্তে আসামিদের বিরুদ্ধে শুধু প্রতারণার অভিযোগ দেন। ৯ সেপ্টেম্বর ওই প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে নারাজি দেন মামলাটির বাদী।

আদালত সূত্র জানায়, গতকাল মামলার ধার্য তারিখে নারাজি আবেদনের শুনানির সময় ট্রাইব্যুনাল তদন্ত কর্মকর্তার প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে সাত আসামির বিরুদ্ধে মানব পাচার আইনের ৬, ৭ ও ৮ নম্বর ধারায় অভিযোগ গ্রহণ করেন। একই সঙ্গে সব আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির নির্দেশ দেন।

ট্রাইব্যুনালের আদেশের বিষয়ের তথ্য নিশ্চিত করেছেন মামলায় সরকারপক্ষের আইনজীবী কাইউম খান কায়সার এবং বাদীপক্ষের আইনজীবী শাহাজুল ইসলাম।


সর্বশেষ সংবাদ