ড্রামে ভরা ২৬ টুকরা লাশ: নিহতের বন্ধুকে প্রধান আসামি করে মামলা

লাশের টুকরা ড্রাম ও  মো. জরেজ
লাশের টুকরা ড্রাম ও মো. জরেজ  © সংগৃহীত

রাজধানীর জাতীয় ঈদগাহের সামনে দুটি নীল রঙের ড্রাম থেকে আশরাফুলের ২৬ টুকরা মরদেহ উদ্ধার করা হয়। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিহত আশরাফুলের বন্ধু মো. জরেজকে (৪২) প্রধান আসামি করে হত্যা মামলা করেছে নিহতের পরিবার।

শুক্রবার (১৪ নভেম্বর) নিহতের ছোট বোন আনজিরা বেগম শাহবাগ থানায় বাদী হয়ে মামলাটি করেন। শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ খালিদ মনসুর দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

খালিদ মনসুর বলেন, নিহত আশরাফুলের বন্ধু জরেজকে প্রধান আসামি করে এজাহার দায়ের করেছেন তার বোন আনজিরা বেগম। হত্যাকাণ্ডের ঘটনা তদন্ত চলছে এবং আসামিকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। এখনো আসামি গ্রেপ্তার হয়নি। আসামি গ্রেপ্তার হলে হত্যার প্রকৃত কারণ জানা যাবে। 

এজাহারে আনজিরা বেগম লিখেছেন, ‘তার বড় ভাই আশরাফুল হক দিনাজপুরের হিলি বন্দর থেকে সারা দেশে পেঁয়াজ, রসুন, মরিচ, আলুসহ কাঁচামাল সরবরাহ করতেন। গত মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) রাত ৮টার দিকে আসামি জরেজকে নিয়ে ঢাকায় আসেন তিনি। এরপর থেকে আশরাফুলের ব্যবহৃত মোবাইল নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়। স্বজনদের সন্দেহ, আসামি জরেজ তার সহযোগী অজ্ঞাতনামা আসামিদের সহযোগিতায় গত ১১ নভেম্বর রাত থেকে ১৩ নভেম্বর রাতের মধ্যে যে কোনো সময় পূর্ব পরিকল্পিতভাবে আশরাফুলকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেন। হত্যার পর মরদেহ মোট ২৬টি খণ্ডে খণ্ডিত করে গুম করার উদ্দেশ্যে নীল রঙের ড্রামের ভেতর ভরে রেখে অজ্ঞাতস্থানে পালিয়ে যায় অভিযুক্তরা।’

আরও পড়ুন: সরকারি ও বেসরকারি স্কুলে ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ

স্থানীয় ও পরিবার সূত্রে জানা যায়, বদরগঞ্জ উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের নয়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দা আব্দুর রশিদের একমাত্র ছেলে আশরাফুল হক কাঁচামাল আমদানি রপ্তানির ব্যবসা করতেন। তার বন্ধু জরেজ সদর উপজেলার শ্যামপুরের বাসিন্দা ও তিনি দীর্ঘদিন মালেশিয়ায় ছিলেন। মাস দেড়েক আগে দেশের ফেরার পর আশরাফুলের সঙ্গে বন্ধুত্ব হয় জরেজের। 

আশরাফুলের সকল ব্যবসা-বাণিজ্য, হিসাব-নিকাশ রাখতেন জরেজ। বিদেশ যাওয়ার জন্য জরেজ ৩০ লাখ টাকা চান আশরাফুলের কাছে। স্বজনদের দাবি ওই টাকা দেয়ার জন্য জরেজের সঙ্গে ঢাকায় যান আশরাপুল। ওই টাকা বাদেও আশাফুলের কাছে আরোও টাকা ছিল বলে ধারনা করছে পরিবার। 

গত মঙ্গলবার আশরাফুল হক বন্ধু জরেজসহ ঢাকায় যান। বুধবার বিকেলে আশরাফুলের সাথে স্ত্রী লাকী বেগমের শেষ কথা হয়। সে সময় আশরাফুলের স্ত্রীকে বলেন ব্যস্ত আছি, পরে ফোন দিব। এর পরে আর ফোন দেওয়া হয়নি আশরাফুলের। পরিবার জানায় আশরাফুল দুটি ফোন ব্যবহার করত। যে ফোনে সব সময় কথা হত সেই ফোনে স্ত্রী ফোন দিলে সেই ফোন রিসিভ করে জরেজ। এ সময় জরেজ অসংলগ্ন ভাবে কথা বলেন। বৃহস্পতিবার বদরগঞ্জ থানায় জিডি করতে আসেন পরিবারের সদস্যরা। সেখানে এসে জানতে পারেন আশরাফুল হককে ঢাকায় নৃশংসভাবে হত্যাকরা হয়েছে। তার খণ্ডিত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।

আশরাফুল হকের বাড়ি রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের শ্যামপুর নয়াপাড়া গ্রামে। তিনি কাঁচামাল আমদানিকারক ছিলেন। বিভিন্ন দেশ থেকে কাঁচামাল এনে ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন আড়তে দিতেন।

আরও পড়ুন: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘এ’ ইউনিটের খুঁটিনাটি

নিহত আশরাফুলের পরিবারের লোকজন জানান, দীর্ঘদিন মালয়েশিয়ায় থাকার পর দেড় মাস আগে দেশে আসেন জরেজ। এরপর থেকে আশরাফুল হকের সঙ্গে যুক্ত হন। জাপান যাওয়ার জন্য জরেজ আশরাফুলের কাছে ১০ লাখ টাকা চান। ঢাকা যাওয়ার আগে ৬ থেকে সাত হাজার বস্তা আলু একসঙ্গে বিক্রি করেন।

পুলিশ জরেজের বাবা মোয়াজ্জেমকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়েছে। বাড়িতে থাকা মোবাইল ফোনও জব্দ করেছে পুলিশ। জরেজের স্ত্রী উম্মে কুলসুম বলেন, ‘২০ বছরের বেশি সময় ধরে ওদের বন্ধুত্ব। মঙ্গলবার চট্টগ্রামে আশরাফুল ভাইয়ের ব্যবসার টাকা কালেকশন করার কথা বলি বাড়ি থাকি বের হয়। বুধবার রাতে কথা হইছে। তখন চট্টগ্রামে পৌঁছাইছে বলছে। ঢাকা কবে আসছে, ঢাকায় যে আছে, সেটাও জানি না। আমি জানি চট্টগ্রামে আছে।’

এ বিষয়ে বদরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে এম আতিকুর রহমান বলেন, ‘এ ঘটনায় ঢাকায় মামলা হবে। আমরা সহযোগিতা করছি। নিহত আশরাফুলের শ্যালক ও বোন সেখানে গেছেন। লাশ এলে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।’


সর্বশেষ সংবাদ