থানা মসজিদের ব্যাটারিসহ রামগঞ্জে চার মাসে দুই শতাধিক চুরি

রামগঞ্জ থানা
রামগঞ্জ থানা  © সংগৃহীত

লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জে শীত না আসতেই চোরের উৎপাত বৃদ্ধি পেয়েছে। রাত নামলেই সংঘবদ্ধ চোরের দল হানা দিচ্ছে দোকানপাট ও বাড়িঘরে। চোরদের হাত থেকে থানা মসজিদও বাদ পড়েনি। এলাকায় অপরিচিত লোকের আনাগোনাও বেড়েছে। তারা দিনে টার্গেট করে রাতের আঁধারে চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে মূল্যবান মালামাল। গত চার মাসে উপজেলাজুড়ে দুই শতাধিক চুরির ঘটনা ঘটেছে। এতে স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।অধিকাংশ ঘটনায় ভুক্তভোগীরা থানায় অভিযোগ করেননি। তাদের ধারণা, অভিযোগ করলে উল্টো হয়রানিতে পড়তে হয়। স্থানীয়দের মতে, চুরি বৃদ্ধির অন্যতম কারণ মাদক ও পুলিশের টহল কমে যাওয়া।

এলাকাবাসী ও ভুক্তভোগীদের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মাসের শনিবার (১ নভেম্বর) রাতে রামগঞ্জ থানার সামনে মুক্তিযোদ্ধা ভবনের নিচতলায় শহিদ উল্যাহ পাটোয়ারীর চায়ের দোকান ও পৌর শহরের জিয়া শপিং কমপ্লেক্সের পশ্চিম গেটের সামনে ফ্যামিলি বাজার মুদি দোকানে চুরি হয়।

গত ৩০ অক্টোবর পৌর অভিরামপুর গ্রামের হাজী বাড়িতে কামাল হোসেনের ঘরে, ২৮ অক্টোবর পৌর টামটা গ্রামের হুমায়ুন কবির চৌধুরীর ঘরে নগদ ৪২ হাজার টাকা, দুইটি মোবাইলসহ প্রায় এক লাখ টাকার মালামাল চুরি হয়। একই রাতে ওই এলাকায় মমিন মিয়া, মোঃ সুমন, জাফর মিয়া ও কোহিনুর বেগমের ঘরেও চারটি চুরির ঘটনা ঘটে।

এর আগে ২৭ অক্টোবর পৌর অভিরামপুর গ্রামের জাফর মিয়ার ঘর, ২০ অক্টোবর চন্ডীপুর ইউনিয়নের বকুলতলা মসজিদ বাড়ির আবুল কাশেমের ঘর থেকে একটি অটোরিকশা, ১৯ অক্টোবর দরবেশ ইউনিয়নের বালুয়া চৌমুনী মাষ্টার পাড়ায় স্কুলশিক্ষিকা আকলিমা আক্তার সুমির ঘর থেকে চার ভরি স্বর্ণ ও নগদ ৪৫ হাজার টাকা, ১৭ অক্টোবর রামগঞ্জ থানা মসজিদের ব্যাটারি, ১০ অক্টোবর জিয়া শপিং কমপ্লেক্সে ডাকবাংলা মসজিদের সামনে থেকে শেখ ফরিদ ওরফে শুক্কর আলীর সিএনজি, এবং ৬ অক্টোবর পৌর এলাকার উত্তর সোনাপুর হাজী দরবেশ আলী জামে মসজিদের মোটরসহ একাধিক চুরির ঘটনা ঘটে।

চলতি বছরের ৩ জুলাই থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত চার মাসে চন্ডীপুর ইউনিয়নে ৩৩টি, রামগঞ্জ পৌরসভায় ৩০টি, ভোলাকোটে ২৫টি, ভাদুরে ১৩টি, লামচরে ১৫টি, দরবেশপুরে ১০টি, ভাটরায় ১৫টি, নোয়াগাঁওয়ে ২২টি, কাঞ্চনপুরে ২০টি ও ইছাপুরে ১৮টি চুরির ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেছে।
ভুক্তভোগী টামটা গ্রামের হুমায়ুন কবির পাটোয়ারী বলেন, 'আমার ঘরে চুরির পর থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছি, এখনো কোনো প্রতিকার পাইনি। অন্যরা হয়রানির ভয়ে অভিযোগ করেনি।'

স্থানীয় অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য মো. বাচ্চু মিয়া বলেন, 'শীত এলে চুরি বাড়ে—এ কথা শুনতাম। এখন শীত না আসতেই চুরি বেড়ে গেছে। এলাকায় অপরিচিত লোকজনের আনাগোনা দেখা যায়, তারা দিনে টার্গেট করে রাতে চুরি করে।'

ডা. শেখ ফরিদ, শিক্ষক আনোয়ার হোসেনসহ স্থানীয়দের মতে, 'প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও চুরির খবর পাওয়া যাচ্ছে। এসব চুরির মূল কারণ মাদক। মাদকাসক্তরা টাকার জন্য চুরি করছে। পুলিশের টহল বাড়ানো জরুরি।'

রামগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল বারী বলেন, 'মাদকাসক্তরাই বেশি চুরি-ডাকাতির সঙ্গে জড়িত। আমি যোগদানের পর এক মাসে দেড় শতাধিক আসামিকে গ্রেফতার করে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। টহল জোরদার করা হয়েছে। ভুক্তভোগীরা তথ্য দিলে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে। আমরা যেকোনো অপরাধীকে আইনের আওতায় আনতে প্রস্তুত।


সর্বশেষ সংবাদ