মিথ্যা অভিযোগে মামলা করায় বাদীকে আদালতের জরিমানা
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ১২ অক্টোবর ২০২৫, ০৯:৫৯ PM
মেয়েকে মারধরের মিথ্যা অভিযোগে মামলা করার দায়ে বাদী সালাহউদ্দিনকে এক হাজার টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে সাত দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেন আদালত। আজ রবিবার (১২ অক্টোবর) ঢাকার অতিরিক্ত মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জাকির হোসাইন এ আদেশ দেন। সংশ্লিষ্ট আদালতের বেঞ্চ সহকারী নাজমুল ইসলাম তালুকদার এ তথ্য জানান।
এদিন বাদী সালাহউদ্দিন আদালতে হাজির হয়ে ক্ষমা প্রার্থণা করেন। তিনি ভুল বুঝতে পেরেছেন মর্মে আদালতকে জানান। পরে আদালত তাকে এক হাজার টাকা অর্থদণ্ড করেন অনাদায়ে তাকে সাত দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন। তখন তিনি এক হাজার টাকা জরিমানা দিয়ে মুক্ত হন।
এর আগে গত ১৫ জানুয়ারি মেয়েকে মারধরের অভিযোগে সালাউদ্দিন বাদী হয়ে আদালতে মামলা করেন। মামলায় তার শ্যালক মো. কাজল, কাজলের স্ত্রী রোকসানা বেগম, মেয়ে কসমিন আক্তার এবং তার দুই স্বজন রবি মিয়া ও আশরাফুলকে আসামি করা হয়। এদের মধ্যে রবি ও আশরাফুল দুই ভাই।
পরে গত ৩০ সেপ্টেম্বর মামলাটি অভিযোগ গঠনের বিষয়ে শুনানির দিন ধার্য ছিল। ওইদিন আসামিপক্ষের আইনজীবীরা আদালতকে জানান, সালাহউদ্দিন ব্রাক্ষ্মবাড়িয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে এবং সেখানকার ডাক্তারী রিপোর্ট দিয়ে মামলা করেন। তবে মামলাটি তদন্ত হয়নি। আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ সরাসরি আমলে নেওয়া হয়। আসামিদের হয়রানী করতে একই ডাক্তারী সার্টিফিকেট দুইটি মামলা করেছে। আসামিপক্ষের আইনজীবী বাদীর বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক সাজা দাবি করে আসামিদের অব্যাহতির প্রার্থণা করেন। রাষ্ট্রপক্ষ থেকে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে সাক্ষ্য গ্রহণের ভিত্তিতে মামলার মেরিট বিবেচনার প্রার্থনা জানানো হয়।
উভয়পক্ষের শুনানি শেষে পর্যালোচনায় আদালত দেখেন, গত ১৫ জানুয়ারি সালাহউদ্দিন যাত্রাবাড়ী আমলী আদালতে মামলা দায়ের করেন। আদালত কোন তদন্ত ছাড়াই অভিযোগ আমলে নেন। তিনি ১০ তারিখের ঘটনা দেখিয়ে মামলা করেন। কাগজপত্র পর্যালোচনায় আরও দেখা যায়, ভিকটিমের বোন মেহরুন্নেছা সুমি গত ১৪ জানুয়ারি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আদালতে সরাইল আমলী আদালতে ৭ জানুয়ারির ঘটনা দেখিয়ে মামলা করে। দুই মামলার অভিযোগ, আসামিরা ভিকটিমের বাম হাতে, ডান চোখের উপর আঘাত করেন।
মামলার অভিযোগে দাবি করা হয়, ভিকটিমকে ঘটনাস্থলে গলা টিপে ধরে মুখে ও চোখে কিল ঘুষি মেরে আহত করে। ভিকটিমের চোখে রক্তাক্ত জখম হয়। তবে চিকিৎসার কাগজপত্র পার্যালোচনা করেন আদালত। সেখানে দেখা যায়, চিকিৎসা স্লিপে ইনজুরির কোনো নোট নাই। ভিকটিমের সাধারন জখমের কয়েকটি ছবি আছে। এই আদালতে জবানবন্দিতে ভিকটিম দাবি করেন, দুইটি ঘটনায় তার ডান চোখে, মুখে ও নাকে আঘাত করা হয়। বর্তমানে ভিকটিমের মুখে দৃশ্যমান কোন আঘাতের চিহ্ন নাই। চোখের ডাক্তারের কোন প্রেসক্রিপশন নাই। দুইটি ঘটনা গত ৭ জানুয়ারি এবং ১০ জানুয়ারি। উভয়পক্ষের ঠিকানা ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় হয়। সার্বিক পর্যালোচনায় স্পষ্ট, প্রথম ঘটনার প্রাথমিক সত্যতা থাকার সম্ভাবনা থাকলেও দ্বিতীয় ঘটনার সত্যতা স্বাভাবিক নয়। উভয় পক্ষের মধ্যে বিয়ে নিয়ে বিরোধ আছে। আদালতে অভিযোগকারী ঢাকার ঘটনার বিষয়ে সন্তোষজনক জবাব দিতে পারেনি। সার্বিক পর্যালোচনায় মামলাটি হয়রানীমূলক মামলা মর্মে প্রতীয়মান হওয়ায় আসামিদের অব্যাহতির আদেশ দেয় আদালত।
আসামিদের হয়রানী করার উদ্দেশ্যে মিথ্যা ঘটনা সৃষ্টি করায় সালাহউদ্দিনের বিরুদ্ধে কেন আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে না এ মর্মে ১২ অক্টোবরের মধ্যে অভিযোগকারীকে নিজে বা তার আইনজীবীর মাধ্যমে লিখিতভাবে কারণ দর্শানোর নির্দেশ দেয় আদালত।
মামলায় অভিযোগ করা হয়, সালাউদ্দিনের মেয়ে তারিনা আক্তার রুমি কসমিন আক্তারের সাথে পড়াশোনার সুবাদে একত্রে চলাফেরা করতো। কসমিন পাশের যাত্রাবাড়ির মীরহাজিরবাগের পাশের একটা এলাকার ছেলের সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। গত ১০ জানুয়ারি রুমি বিষয়টি তার মামা কাজলকে জানিয়ে দেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে আসামিরা তাকে মারধর করে জখম করে। পরে রুমির মা, খালা তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যায়। এ ঘটনায় রুমির পরিবার থানায় মামলা করতে যায়। তবে থানা কর্তৃপক্ষ মামলা না নিয়ে আদালতে যাওয়ার পরামর্শ দেন। পরদিন আদালতে মামলা করেন সালাহউদ্দিন। আদালত মামলা আমলে নেন। পরে আসামিরা আত্মসমর্পণ করে জামিন নেন।