ডিসি মাসুদের ছাত্রের মুখ চেপে ধরা ছবি এআই দিয়ে তৈরি নয়
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ২৮ আগস্ট ২০২৫, ০৮:১৩ PM , আপডেট: ২৯ আগস্ট ২০২৫, ০৪:৪২ PM
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. মাসুদ আলমকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এক বিতর্কিত ছবি নিয়ে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে। ছবিটিতে দেখা যায়, ডিসি মাসুদ আলম এক আন্দোলনকারী ছাত্রের মুখ চেপে ধরছেন। ডিএমপি দাবি করেছে, ছবিটি আসল নয়, বরং এটি আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু পরবর্তীতে ফ্যাক্টচেকিং সংস্থা ফ্যাক্টওয়াচসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের অনুসন্ধানে প্রমাণিত হয়েছে ছবিটি এআই দিয়ে তৈরি নয়, বরং তা বাস্তব।
ঘটনার সূত্রপাত ২৭ আগস্ট, শিক্ষার্থীরা তিন দফা দাবিতে ‘লংমার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেন দেশের প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বেলা দেড়টার দিকে তারা প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনার দিকে যাত্রা শুরু করলে ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের সামনে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। এ সময় পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড, কাঁদানে গ্যাস, জলকামান ও লাঠিচার্জ ব্যবহার করে। এতে বহু শিক্ষার্থী আহত হন, পাশাপাশি কয়েকজন পুলিশ সদস্যও আহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়। এরই প্রেক্ষিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের রমনা বিভাগের ডিসি মাসুদ আলমকে বহিষ্কারের দাবি তোলেন।
এরপর ২৮ আগস্ট ডিএমপি তাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে একটি পোস্ট দিয়ে দাবি করে, ছবিটি এআই প্রযুক্তির মাধ্যমে কৃত্রিমভাবে তৈরি করা হয়েছে এবং এটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে জনমনে বিভ্রান্তি ছড়াতে ছড়ানো হয়েছে। একই দাবিকে কেন্দ্র করে ডিএমপির মিডিয়া ও পাবলিক রিলেশনস বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, “ছবিটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তৈরি ও প্রচার করা হয়েছে, যার মাধ্যমে জনমনে বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।”
ফ্যাক্টওয়াচের প্রকাশিত সংবাদটি : রমনার ডিসির শিক্ষার্থীর মুখ চেপে ধরার ছবিটি বাস্তব, এআই নয়
ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ডিসি মাসুদ আলমের মুখ চেপে ধরার ওই ছবি বৃহস্পতিবার (২৮ আগস্ট) দৈনিক মানবজমিন প্রথম পাতায় ছেপেছে। ছবিটি তুলেছেন পত্রিকাটির ফটো সাংবাদিক আবু সুফিয়ান জুয়েল।
ফ্যাক্টওয়াচ আবু সুফিয়ান জুয়েলের সঙ্গে যোগাযোগ করে। তিনি ফ্যাক্টওয়াচকে জানান, ছবিটি এআই দিয়ে তৈরি হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। এটি বাস্তব।
তিনি আরও জানান, ওই সময়কার একাধিক ছবি তিনি তুলেছেন। পরবর্তীতে তার থেকে এসব ছবি সংগ্রহ করে মেটাডেটা বিশ্লেষণ করে ফ্যাক্টওয়াচ।
এই দাবিকে মিথ্যা প্রমাণ করেছে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধান। তারা জানায়, ছবিটিতে এআই-জনিত কোনো অসংগতি দেখা যায়নি। সাধারণত এআই-তৈরি ছবিতে অস্বাভাবিক প্রতিবিম্ব, বিকৃত হাত বা মুখ, ভুল টেক্সট অথবা সূক্ষ্ম অংশে গড়মিল দেখা যায়, কিন্তু সংশ্লিষ্ট ছবিতে এমন কিছু পাওয়া যায়নি।
এদিকে, ২৯ আগস্ট ডিএমপির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আবারও দাবি করা হয়, ছবিটি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে বোঝা যায়, তা সম্পূর্ণ এআই প্রযুক্তির মাধ্যমে তৈরি এবং বাস্তবতা বিবর্জিত। তবে ফ্যাক্টচেক রিপোর্টের ভিত্তিতে স্পষ্ট হয়েছে, সংশ্লিষ্ট ছবিটি কোনোভাবেই এআই দিয়ে তৈরি নয় বরং তা সম্পূর্ণ বাস্তব ঘটনা ধারণ করে।
ঘটনাটি ঘিরে সামাজিক মাধ্যমে বিতর্ক অব্যাহত রয়েছে, যেখানে একপক্ষ বলছে এটি পুলিশ বাহিনীর পেশাগত আচরণের সীমালঙ্ঘন, আর অন্যপক্ষ দাবি করছে এটি জনসচেতনতা ও সরকারবিরোধী প্রপাগান্ডার অংশ। তবে নিরপেক্ষ তথ্য যাচাইয়ে স্পষ্ট হয়েছে, বিতর্কিত ছবিটি বাস্তব এবং সেটিকে কৃত্রিম বলে দাবি করে ডিএমপি জনমনে বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করেছে।
ডিসক্লেইমার
প্রসঙ্গত, ‘ডিসি মাসুদের ছাত্রের মুখ চেপে ধরা ছবি এআই দিয়ে তৈরি: ডিএমপি’ শিরোনামে সংশ্লিষ্ট এই সংবাদটি প্রকাশ করে দ্য ডেইলি ক্যাম্পাস। তবে ফ্যাক্ট চেকিং সংস্থা ফ্যাক্ট ওয়াচ, সহ অন্যান্য ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠানগুলোর তথ্যমতে খবরটি সঠিক নয় বলে জানানো হয়। দ্য ডেইলি ক্যাম্পাস টিমও সংবাদটির তথ্য পুনরায় যাচাই করে এবং তাতে ভুল পায়। পরবর্তীতে সে অনুযায়ী সংবাদটি আপডেট করে।