বিস্কুটের লোভ দেখিয়ে ৮ বছরের শিশুকে ধর্ষণের চেষ্টা
- কুষ্টিয়া প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ১৫ মার্চ ২০২৫, ১১:১২ AM , আপডেট: ১৫ মার্চ ২০২৫, ১১:১২ AM

কুষ্টিয়ার হরিনারায়ণপুরে বিস্কুটের লোভ দেখিয়ে ৮ বছর বয়সী এক শিশুকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ উঠেছে। গত ১১ মার্চ ঘটনার পরদিন থেকে অভিযুক্ত সাগজত (৬০) পলাতক। বিষয়টি সমঝোতার চেষ্টায় ইতিমধ্যে একটি মহল দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছে।
পুলিশ বলছে, ঘটনা সম্পর্কে জানার পর থেকেই পলাতক সাগজতকে ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এ ছাড়া একাধিকবার ভুক্তভোগী পরিবারকে থানায় এসে অভিযোগ করার জন্য বলা হলেও এখন পর্যন্ত এ ঘটনায় কোনো অভিযোগ করেনি তারা। যদিও একটি পক্ষ দাবি করছে, পুলিশ ও স্থানীয় কয়েকজন রাজনৈতিক নেতার যৌথ চেষ্টায় অর্থের বিনিময়ে চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ধামাচাপা পড়তে চলেছে।
ভুক্তভোগী শিশুর মা জানিয়েছেন, ঘটনার দিন তার আট বছরের মেয়েশিশু পাশের সাগজতের দোকানে যায়। ওই সময় তার কোলে আট মাস বয়সী আরেকটা মেয়ে ছিল। তাকে কোলে নিয়ে দোকানের সামনে গেলে সাগজত তাকে বিস্কুটের লোভ দেখিয়ে দোকানের মধ্যে নিয়ে যান। এরপর ভুক্তভোগী শিশুর কোলে থাকা শিশুকে খাঠের ওপর বসিয়ে রাখতে বলেন। এরপর ভুক্তভোগী শিশুটির প্যান্ট খুলে তার স্পর্শকাতর অঙ্গে একাধিকবার স্পর্শ করতে থাকে। শিশুটি বাড়িতে এসে তাকে বিষয়টি জানালে তিনি তার শাশুড়িসহ পাড়া প্রতিবেশী বেশ কয়েকজন নারীকে নিয়ে সাগজতের দোকানে যান। তার কাছে বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে তিনি ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চান। ওই সময় সবাই মিলে তাকে গালিগালাজ করে পার্শ্ববর্তী এক আপার বাড়িতে যান। সেই আপাকে দিয়ে স্থানীয় ক্যাম্প আইসিকে ফোন দেওয়া হলে ক্যাম্প আইসি তাদের থানায় ও হাসপাতালে যেতে বলেন। সেখানে গেলে অনেক টাকা খরচ হবে ভেবে তারা আর যাননি।
আরও পড়ুন: আওয়ামী লীগ নেতার নেতৃত্বে গুলি করে সমন্বয়কের বাবাকে হত্যা
এলাকাবাসী জানিয়েছেন, সাগজতের বিরুদ্ধে এর আগেও এ ধরনের অভিযোগ রয়েছে। সে বার ভুক্তভোগী মেয়েটির বছর ১৪-১৫ বছরের কাছাকাছি হওয়ায় তার দরিদ্র পরিবার লোক লজ্জার ভয়ে বিষয়টি ধামাচাপা দিতে বাধ্য হয়। এবার ঘটনাটি জানাজানি হলেও একশ্রেণির নেতাদের চাপে এ ঘটনাটিও ধামাচাপা পড়তে বসেছে। ওইসব নেতার সঙ্গে পুলিশের সখ্য রয়েছে। ঘটনার পর ওই শিশুর বাবা অভিযুক্ত সাগজতের কাছে গেলে সাগজত ভুল স্বীকার করে মাপ চান। সে সময় মাপ চাইলেও তাকে কয়েকটা ঘুষি মারে শিশুটির বাবা।
ভুক্তভোগী শিশুটি জানায়, সাগজত বিস্কুটের লোভ দেখিয়ে দোকানের ভেতরে নিয়ে প্যান্ট খুলে একাধিকবার স্পর্শকাতর অঙ্গ স্পর্শ করতে থাকে।
ওই শিশুর বাবা বলেন, ‘ঘটনার দিন আমি ঢাকায় ছিলাম। বাড়ি এলে আমার স্ত্রী ঘটনাটি আমাকে জানায়। রাত অনেক হওয়ায় পরদিন সকালে আমি সাগজতের দোকানে গিয়ে ঘটনার সত্যতা সম্পর্কে জানতে চাই। তিনি ভুল স্বীকার করে মাপ চাওয়ার পর রাগান্বিত হয়ে তাকে ২-৩ টা ঘুষি মারি। তখন আশপাশের লোকজন এসে ঠেকায় দেয়। পরবর্তী সময়ে একজন এসে মোটরসাইকেলে করে তাকে নিয়ে যান এবং যাওয়ার সময় বলেন, আমি নিয়ে যাচ্ছি আবার সন্ধ্যার সময় সঙ্গে করে নিয়ে এসে বিচার করব। পরে আর বিচার করে নাই। আমি গরিব বলে সবাই পাশ কেটে যাচ্ছে। আমি এর বিচার চাই।’
আরও পড়ুন: অবন্তিকার আত্মহত্যা: এক বছরেও হয়নি চার্জশিট, তদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে ধোঁয়াশা
ওই শিশুর দাদা বলেন, ‘ঘটনার পর ওর (সাগজত) ভাই সব আমাদের কাছে এসে পা-হাত-পা ধরে মাপ চাচ্ছে। কিন্তু মাপ পাওয়ার যোগ্য ওরা না।’
এদিকে বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে সাগজতের বাড়িতে গেলে তাকে পাওয়া যায়নি। তার ঘর তালাবদ্ধ রয়েছে। এ সময় তার ভাই সাদবারের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, তার ভাই মেয়ের বাড়িতে গেছেন। তিনি এ ধরনের কাজ করতে পারেন না। যদি তিনি করে থাকেন, তাহলে তাকে শাস্তি পেতে হবে।
এ বিষয়ে কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মেহেদী হাসানের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, ‘আমি একাধিকবার ভুক্তভোগীর বাড়িতে গিয়ে তার পরিবারকে থানায় অভিযোগ করার জন্য অনুরোধ করেছি। তারপরও এখন পর্যন্ত কোনো অভিযোগ করেননি তারা।’