স্কুলছাত্রকে হত্যার ঘটনা সালিশে ১৫ লাখে রফা করলেন চেয়ারম্যান
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ২৯ মে ২০২৩, ০৮:৫০ AM , আপডেট: ২৯ মে ২০২৩, ০৮:৫০ AM
২০২২ সালের ১২ জুন অর্ধবার্ষিক পরীক্ষায় সুমনের খাতা দেখতে চায় সহপাঠীরা। খাতা না দেখানোয় তারা ক্ষুব্ধ হয়ে বাড়ি ফেরার পথে তার পথরোধ করে হামলা চালায়। পরে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ২২ জুন তার মৃত্যু হয়।
সুমনের বাবা শাহজাদপুর থানায় ২৪ জুন হত্যা মামলা করেন। এর পর হত্যায় জড়িতদের শাস্তি দাবিতে মানববন্ধন করেন স্বজন ও গ্রামবাসী। মানববন্ধনে ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলামও বিচার দাবি করেন।
অথচ ঘটনার এক বছর পর সালিশ বৈঠক বসিয়ে বিষয়টি ১৫ লাখ টাকায় রফা করেছেন ইউপি চেয়ারম্যান। সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার বেলতৈল ইউনিয়ন পরিষদে গত শনিবার এ সালিশ বসে। হত্যার শিকার সুমন গ্রামের সুলতান প্রামাণিকের ছেলে। বেলতৈল উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র ছিল ছিল।
অর্ধবার্ষিক পরীক্ষার সময় খাতা না দেখানোয় সহপাঠীদের হাতে খুন হয় নবম শ্রেণির ছাত্র সুমন (১৫)। ঘটনার পর তার বাবা ১২ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন। তদন্তের পর ১০ জনকে দোষী সাব্যস্ত করে পুলিশ আদালতে অভিযোগপত্র দেয়। মামলাটি আদালতে বিচারাধীন।
জানা গেছে, বিবাদীরা প্রভাবশালী হওয়ায় তাঁরা ও ইউপি চেয়ারম্যান মিলে চাপ দেন বাদীপক্ষকে। শনিবার লোকজন নিয়ে সালিশে বসেন চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম। চাপ দিয়ে ও নানা কৌশলে ১৫ লাখ টাকা জরিমানা করে আপসের নির্দেশ দেন তিনি। রায় ঘোষণা করেন হাবিবুল্লাহ নগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল মাজেদ।
বৈঠক ডাকেন ১ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আব্দুস ছালাম রাজা। চেয়ারম্যানের সভাপতিত্বে আরও উপস্থিত ছিলেন জালালপুরের আব্দুর রশিদসহ অনেকে। রায় ঘোষণা করে আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল মাজেদ বলেন, শিশুরা হত্যা করেছে সত্য। বাদীর পারিবারিক অবস্থা ভালো নয়। সে দৃষ্টিকোণ থেকে আলোচনা করে ১২ আসামিকে ১৫ লাখ টাকা জরিমানা করেছি। টাকা বাদী পাবে।
ইউপি সদস্য আব্দুস ছালাম রাজা বলেন, ১৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে আসামিদের। এভাবে হত্যার বিচার করা যায় কিনা– জানতে চাইলে তিনি আইনকানুন জানা নেই বলে জানান। তবে প্রভাবশালীদের ভয়ে মুখ না খোলায় বাদীপক্ষের সঙ্গে কথা বলা যায়নি। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলামকে পাওয়া যায়নি। তাঁর মোবাইল ফোনেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল মাজেদ বলেন, চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে বিষয়টি মীমাংসা করা হয়েছে। আদালত যে রায় দেবেন, তা মানতে হবে।
এ বিষয়ে আইনজীবী আনোয়ার হোসেন বলেন, গ্রাম্য সালিশে চেয়ারম্যান হত্যা মামলার বিচার করতে পারেন না। বাংলাদেশে এ ধরনের আইন নেই। কেউ এমন করলে তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার ও অন্যায় করেছেন।
শাহজাদপুর থানার ওসি নজরুল ইসলাম বলেন, সালিশ বৈঠকে যাই হোক, মামলা আদালতে বিচারাধীন। আদালত যে রায় দেবেন, তা মানতে হবে সবাইকে।