তরুণীদের ব্যক্তিগত ছবি-ভিডিও ‘পমপম’ গ্রুপে ছাড়ত চক্রটি

গ্রেপ্তারকৃত পমপম গ্রুপের ৯ সদস্য
গ্রেপ্তারকৃত পমপম গ্রুপের ৯ সদস্য  © সংগৃহীত

ইন্টারনেটভিত্তিক যোগাযোগমাধ্যম টেলিগ্রামে ‘পমপম’ নামের একটি গ্রুপের নয় সদস্যকে আটক করা হয়েছে। এই গ্রুপের মাধ্যমে তরুণীদের ব্যক্তিগত ছবি ও ভিডিও বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। গতকাল রবিবার রাতে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। 

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন আবু সায়েম ওরফে মার্ক-সাকারবার্গ, শাহরিয়ার আফসান ওরফে অভ্র, বোগদাদী শাকিল, মশিউর রহমান ওরফে ডিটিআর শুভ, মো. জসীম, কেতন চাকমা ওরফে ক্যাকটাস, শাহেদ ওরফে এল ডোরাডো, মারুফ ওরফে তুর্য এবং নাজমুল সম্রাট ওরফে মিঞা ভাই। এদের মধ্যে আবু সায়েম এই চক্রকে লিড দিতেন। 

সোমবার (২২ মে) রাজধানীর মালিবাগে সিআইডির প্রধান কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে সিআইডির প্রধান মোহাম্মদ আলী মিয়া এসব তথ্য জানান।

জানা গেছে, এই গ্রুপের সদস্যরা নানাভাবে তরুণীদের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করেন। কখনো কখনো এই সম্পর্ক প্রেমের পর্যায়েও রূপ নেয়। এরপর কৌশলে তাঁদের ব্যক্তিগত ছবি ও ভিডিও সংগ্রহ করেন। আবার অনেক তরুণীর ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করেন। পরে এসব ছবি ও ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে অর্থ দাবি করেন। টাকা দিতে না পারলে তরুণীদের ভিডিও কলে এনে তাঁদের ইচ্ছেমতো কাজ করাতে বাধ্য করেন। পরে সেগুলোর ভিডিও দেশে–বিদেশে বিক্রি করতেন। 

সিআইডির একটি সূত্র গণমাধ্যমকে জানিয়েছে, এই অপরাধী চক্রের টেলিগ্রাম গ্রুপ ও চ্যানেলগুলোয় গ্রাহকের সংখ্যা প্রায় সোয়া চার লাখ। গ্রুপগুলোতে ২০ হাজার ভিডিও রয়েছে। ছবিসহ অন্যান্য কনটেন্ট রয়েছে প্রায় ৩০ হাজার। এসব গ্রুপের সদস্য হতে প্রাতি মাসে এক থেকে দুই হাজার টাকা দিতে হয়। দেশ-বিদেশের প্রায় সাড়ে ৭০০ মানুষ টাকা দিয়ে সদস্য হয়েছেন।

ওই সূত্র আরও জানায়, তরুণীদের সাবেক প্রেমিকাদের পাশাপাশি বিভিন্ন ব্যক্তিরা তরুণীদের আপত্তিকর ভিডিও এবং ছবি সায়েমকে দিতেন। সায়েম তার অ্যাডমিনদের দিয়ে সেগুলোতে মিউজিক বসিয়ে এবং ভুক্তভোগীর ফেসবুক আইডি থেকে ছবি নিয়ে ৩০-৪০ সেকেন্ডের ভিডিও বানিয়ে গ্রুপগুলোতে প্রচার করতেন। এসব দেখে যাঁরা পুরো ভিডিও দেখতে চাইতেন, তাঁদের কাছ থেকে এক থেকে দুই হাজার টাকা করে নেওয়া হতো।

গ্রুপটিতে মাসে এক থেকে দুই হাজার টাকা সাবস্ক্রিপশন ফি দিয়ে মধ্যপ্রাচ্য, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, পর্তুগাল, কানাডা, আমেরিকা ও ইংল্যান্ডের মতো দেশে অবস্থানরত ব্যক্তিরা গ্রুপটির সদস্য হয়েছেন। তারা অল্প বয়সী মেয়েদের আপত্তিকর ওই সব ছবি–ভিডিও কিনে সংরক্ষণ করেন।

সিআইডি প্রধান মোহাম্মদ আলী মিয়া জানান,  এক ভুক্তভোগী তরুণ তার এবং তার প্রেমিকার ব্যক্তিগত মুহূর্তের ছবি ‘পমপম’ গ্রুপে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। এই ঘটনায় ডিএমপির তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় সায়েম ও তার দলের বিরুদ্ধে পর্নোগ্রাফি ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়। এরপর অভিযান চালিয়ে সায়েমসহ দলের ৯ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়।

তিনি বলেন, চট্টগ্রামের লালখান বাজার এলাকায় অভিযান চালিয়ে সায়েমকে গ্রেপ্তার করা হয়। সায়েম থাকেন চট্টগ্রামে। এনআইডি অনুযায়ী, তাঁর বয়স ২০ বছর। তিনি চট্টগ্রামের শ্যামলী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে ইলেকট্রিক্যালে ডিপ্লোমা করেছেন। তাঁর বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে কোটি টাকার ওপরে লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে।

সায়েমকে গ্রেপ্তারের পর তার ঘনিষ্ঠ দুই বন্ধু শাহরিয়ার আফসান অভ্রকে চট্টগ্রামের হাউজিং এলাকা থেকে এবং বোগদাদী শাকিলকে উখিয়া থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। 

সিআইডি প্রধান আরও বলেন, সায়েমের মুঠোফোন তল্লাশি করে মার্ক-সাকারবার্গ নামের টেলিগ্রাম অ্যাকাউন্টটি লগইন করা অবস্থায় পাওয়া যায়। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদে ‘পমপম’ গ্রুপের যত চ্যানেল ও গ্রুপ আছে, সেগুলোর অ্যাডমিনদের আসল নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে। এসব অ্যাডমিনের কাজ ছিল সায়েমের হয়ে নতুন নতুন ছবি–ভিডিও জোগাড় করা।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence