মাঠে গড়ানোর অপেক্ষায় ‘সাকার্স’ বিপিএল

বিপিএলের লোগো
বিপিএলের লোগো  © সংগৃহীত

বিপিএলের দ্বাদশ আসর শুরুর আগেই নানা জল্পনা, বিতর্ক ও আলোচনা। নিলাম থেকে দল ঘোষণা; সবকিছুই ঘরোয়া এই টুর্নামেন্টকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও সংবাদপত্রের শিরোনামে রীতিমতো ‘সার্কাস’-এর ছাপে ফেলেছে। তবে ক্রিকেটপ্রেমীরা এখন তাকিয়ে আছেন কেবলই মাঠের ক্রিকেটে। নানা শঙ্কার মাঝেই আজ থেকে মাঠে গড়াচ্ছে ঘরোয়া এই টুর্নামেন্ট। 

তবে বিপিএলের চিরচেনা আমেজ এবারের আসরে যেন খানিকটা কম। যদিও টুর্নামেন্টের উত্তেজনা এবং দর্শক আকর্ষণ বাড়াতে এ পর্যন্ত বিশেষ কোনো উদ্যোগ নেয়নি বিসিবিও। মাঠের পরিবেশকে আরও উৎসবমুখর করার জন্য স্টেডিয়াম প্রাঙ্গণে ব্যানার, ফেস্টুন ও অন্যান্য সাজসজ্জার কিছুই চোখে পড়ছে না।

স্টেডিয়ামের দিকে যেতেই চারটি ল্যাম্পপোস্টেই ঝুলছে সিলেট টাইটান্সের উপদেষ্টা ফাহিম আল চৌধুরীর ছবিসংবলিত ফেস্টুন। রাস্তার দুপাশে জ্বলজ্বল করছে কয়েকটা মরিচ বাতি। তবে স্টেডিয়ামের মূল ফটকে বিপিএলের কোনো দৃশ্যমান উপস্থিতিই নেই। যদিও ভেতরে ঢুকতেই চিত্র কিছুটা বদলায়। চারদিকে ব্যস্ততা স্পষ্ট। কেউ ব্যানার বানাতে ব্যস্ত, কেউ আবার ফেস্টুন তৈরিতে মগ্ন। সবাই নিজ নিজ জায়গা থেকে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত।

স্টেডিয়ামের ভেতরের অবস্থাও প্রায় একই রকম। ২৬ ডিসেম্বর দুপুর তিনটায় মাঠে গড়ানোর কথা রাজশাহী ওয়ারিয়র্স ও স্বাগতিক সিলেটের ম্যাচ। অথচ বাউন্ডারি লাইনের চারপাশে স্পন্সরদের ব্যানার বসানো হয়নি। আপাতত চারদিকে কেবল ফোম ও দড়ি বিছিয়ে রাখা হয়েছে। দুই ড্রেসিংরুমের সামনে সারি সারি সাউন্ড সিস্টেম ও লাইট শোর জন্য স্থাপন করা হয়েছে শতাধিক লাইট। পাশাপাশি উদ্বোধনী অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে মঞ্চ নির্মাণের কাজও জোরেশোরে চলমান।

বিসিবির সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কার্যক্রমও অনেকটা নিষ্প্রাণ। অনুশীলনের কয়েকটি ছবি ছাড়া অনলাইনেও প্রয়োজনীয় ‘ভাইব’ তৈরি করতে ব্যর্থ বিসিবি। দেশের একমাত্র ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ শুরুর আগের দিনও ক্যাপ্টেনস মিট কিংবা ফটোশুট হয়নি। 

যদিও ভালো একটি বিপিএলের আশায় ছিল বোর্ড। তবে টুর্নামেন্ট শুরুর আগের দিনই সেই আশায় ভাটা পড়ে। বিতর্কে জড়ায় বিপিএল ও বিসিবি। মূলত চট্টগ্রাম রয়্যালসকে ঘিরেই শুরু হয় নতুন আলোচনা।

সকালে হঠাৎ করেই ফ্র্যাঞ্চাইজিটির মালিকানা ছেড়ে দেয় ট্রায়াঙ্গল সার্ভিসেস। তারা জানায়, বিপিএলের আগে নানা বিতর্কের কারণে স্পন্সর জোগাড়ে ব্যর্থ হওয়ায় ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিকের প্রথম কিস্তি দিতে পারেনি। আর্থিক সংকটে শেষ পর্যন্ত বিসিবির হাতেই চট্টগ্রাম ফ্র্যাঞ্চাইজির মালিকানা তুলে দিতে বাধ্য হয় তারা। আর পরিস্থিতি সামাল দিতে দ্রুত হাবিবুল বাশার সুমনকে মেন্টর এবং অভিজ্ঞ মিজানুর রহমান বাবুলকে প্রধান কোচ হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়।

চট্টগ্রামের ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই দুপুরের দিকে আরেকটি বিতর্ক। হঠাৎ করেই মাঠ ছেড়ে চলে যান নোয়াখালী এক্সপ্রেসের প্রধান কোচ খালেদ মাহমুদ সুজন। সহকারী কোচ তালহা জুবায়েরকে সঙ্গে নিয়ে কাজ না করার ঘোষণা দিয়ে হোটেলে ফেরেন জাতীয় দলের সাবেক এই অধিনায়ক। ফলে বল মাঠে গড়ানোর আগেই নতুন করে বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে বিপিএল। তবে মালিক পক্ষ ও বিসিবির প্রচেষ্টায় প্রায় আড়াই ঘণ্টা পর মাঠে ফেরেন সুজন ও তালহা।

আরও পড়ুন : পাঁচ ক্রিকেটারের নাম প্রত্যাহারের নেপথ্যে ভিন্ন ‘দুর্গন্ধ’, উঠছে প্রশ্ন

এদিকে একরাশ বিতর্কের ভিড়েও স্বস্তির খবর হচ্ছে, এবার আসর শুরুর আগেই ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিক পরিশোধ করেছে একাধিক ফ্র্যাঞ্চাইজি। বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিল শুরু থেকেই ক্রিকেটার ও দল সংশ্লিষ্টদের পারিশ্রমিক নিশ্চিত করার কথা বলে আসছে। এখন পর্যন্ত রংপুর রাইডার্স নিজেদের খেলোয়াড়দের ৫০ শতাংশ পারিশ্রমিক পরিশোধ করেছে। অন্যদিকে রাজশাহী, নোয়াখালী, সিলেট ও ঢাকা ক্যাপিটালস ২৫ শতাংশ করে দিয়েছে। এ ছাড়া খেলোয়াড়দের ১৫ দিনের অগ্রিম দৈনিক ভাতাও পরিশোধ করেছে  সিলেট ফ্র্যাঞ্চাইজি।

অবশ্য, স্বস্তি আর সংশয়ের মিশ্র অনুভূতি নিয়েই শুরু হচ্ছে এবারের বিপিএল। উদ্বোধনী দিনে প্রথম ম্যাচে রাজশাহী ও সিলেট, দিনের দ্বিতীয় ম্যাচে চট্টগ্রাম ও নোয়াখালী মুখোমুখি হবে। তবে এত কিছুর পরও প্রশ্ন থেকে যায়, এবার অতীতের বিশৃঙ্খলা পেছনে ফেলতে পারবে বিপিএল? সেই প্রশ্নের উত্তর পেতে অবশ্যই ২৩ জানুয়ারি ফাইনাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতেই হবে।


সর্বশেষ সংবাদ

X
APPLY
NOW!